ভারী বৃষ্টি, বন্যা, পোকার আক্রমণসহ নানা প্রতিবন্ধকতার মাঝেও এবার আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে রাঙ্গুনিয়ায়। গতবার যেখানে গড় ফলন ৫.১ মেট্রিক টন ছিল, সেখানে এবার ফলন বেড়ে ৫.২৫ মেট্রিক টন ধান উৎপাদিত হয়েছে। এবার রাঙ্গুনিয়ার কৃষকরা প্রায় ৩০০ কোটি টাকার ধান উৎপাদন করেছেন বলে কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। এরমধ্যে দেশের ধানের গোলাখ্যাত গুমাইবিলেই উৎপাদিত হয়েছে ৫৬ কোটি টাকার ধান।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার ১৪ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে উফশী জাতের আবাদ হয়েছে। যেখানে গড়ে ৫.২৫ মেট্রিক টন হারে মোট ৭৭ হাজার ১৭৫ মেট্রিক টন ধান উৎপাদিত হয়। একইভাবে ৬১০ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড জাতের আবাদ হয়েছে। যেখানে গড়ে ৬.৫৫ মেট্রিক টন হারে মোট ৩ হাজার ৯৯৫.৫ মেট্রিক টন ধান উৎপাদিত হয়। এছাড়া স্থানীয় জাতের ১৪০ হেক্টর জমিতে ৩.৯০ মেট্রিক টন গড় হারে মোট ৫৪৬ মেট্রিক টন ধান উৎপাদিত হয়। সব মিলিয়ে চলতি মৌসুমে উপজেলার ১৫ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমি থেকে ৫.২৩ মেট্রিক টন গড় হারে ৮১ হাজার ৭১৬.৫ মেট্রিক টন ধান উৎপাদিত হয়েছে। এরমধ্যে গুমাইবিলের ৩২০০ হেক্টর জমি থেকে ১৬ হাজার ৯৬৭.৫ মেট্রিক টন ধান উৎপাদিত হয়েছে। বাজার মূল্য অনুযায়ী গড়ে ৩৩–৩৫ টাকা কেজি হারে সমগ্র রাঙ্গুনিয়ায় প্রায় কোটি টাকার ধান উৎপাদিত হয়েছে।
সরেজমিনে শস্যভাণ্ডার গুমাইবিলে গিয়ে দেখা যায়, বিলের প্রায় শতভাগ ধান কাটা শেষ হয়েছে। বিলের ধারে, সড়কের পাশে কিংবা গৃহস্থের উঠানে চলছে ধান মাড়াইয়ের মহাযজ্ঞ। অনেক ব্যাপারী ঘরে গিয়েই ধান কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
কৃষকরা বলছেন, গেল বারের তুলনায় এবার বাজারে ধানের ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে। গতবার যেখানে ধানের দাম ২৫–২৭ টাকা ছিল, সেখানে এবার সাদা পাজাম ৩৫ টাকা কেজি এবং অন্যান্য ধান ৩৩ টাকা কেজি হারে বাজার দাম পাওয়া যাচ্ছে। এই হারে ধানের দাম পাওয়ায় কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট করে কৃষকদের ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ কৃষকদের।
গুমাইবিলের কৃষক ফরিদ উদ্দিন জানান, তিনি ১১০ কানি (১৮ হেক্টর) জমি থেকে ৬ মেট্রিক টন হারে ফলন পেয়েছেন। জমিভেদে তার কানি প্রতি ২০ হাজার টাকা খরচ হলেও পেয়েছেন ৩৫–৪০ হাজার টাকার ধান। এছাড়া প্রতি কানি ধানের খড়ও বিক্রি করেছেন ৩০০০ টাকা করে। নুরুদ্দিন নামে অন্য একজন কৃষক ৪০ কানি জমিতে আবাদ করেছেন। তিনি জানান, ব্রি–ধান ১০৩ জাতের আবাদ করেছেন তিনি। যেখান থেকে সাড়ে ৭ মেট্রিক টন হারে ধান পেয়েছেন। কানি প্রতি ১২৫ আড়ি ধান পেয়েছেন বলে জানান তিনি। অপর কৃষক মোহাম্মদ মোকাররম জানান, তিনি ৭০ কানি (সাড়ে ১১ হেক্টর) জমি ধান পেয়েছেন। এরমধ্যে বন্যা সহনশীল ব্রীধান ৫১ জাতের আবাদ করেছেন। ভালোই ফলন পেয়েছেন। তবে বন্যা না হলে ফলন আরও বাড়তো। তিনি জানান, গুমাইবিল নিয়ে কর্তৃপক্ষকে ভাবা দরকার। কারণ এটি দখল হয়ে যাচ্ছে, খালগুলোর তলানি ভরাট হয়ে পানি নিষ্কাশনে সমস্যা দেখা দিচ্ছে বলে তিনি জানান।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস জানান, এবার আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। গতবারের চেয়েও এবার ধানের ফলন বেড়েছে। বাজারেও দাম ভালো পাওয়া যাচ্ছে। তাই কৃষকরা উদ্বুদ্ধ হয়ে পরের মৌসুমে কৃষকরা আরও বেশি পরিমাণ জমিতে আবাদ করবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।