২১ দিনের উৎসব মুখর প্রচার-প্রচারণা শেষ। এবার ভোটের অপেক্ষা। রাত পোহালেই কাল শুরু হবে ভোট। এবারের নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী রয়েছেন ৭ জন। প্রধান দুই মেয়র প্রার্থী আওয়ামী লীগের এম রেজাউল করিম চৌধুরী ও বিএনপির ডা. শাহাদাত হোসেন নিজেদের জয়ের ব্যাপারে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। এছাড়া ২২৫ জন কাউন্সিলর প্রার্থীর সকলেই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। এর মাঝে দুই দলে ৩২ জন বিদ্রোহী প্রার্থীও রয়েছেন।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৭৩৫টি কেন্দ্রে ভোটার প্রায় সাড়ে ১৯ লাখ। তবে একজন প্রার্থী মারা যাওয়ায় নগরীর ৩১ নম্বর আলকরণ ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর পদে কাল ভোটগ্রহণ হবে না। তবে ওই ওয়ার্ডে মেয়র ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ভোট নেয়া হবে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই ভোটগ্রহণকে ভোটোৎসবে পরিণত করার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। তবে অর্ধেকের বেশি ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র নিয়ে কিছুটা শঙ্কাও প্রকাশ করেছেন নগরবাসী। এ ব্যাপারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের আশঙ্কা নাকচ করে দিয়ে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে কাল সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ হবে বলে আশ্বস্ত করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, বছরের ২৯ মার্চ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা থেকে শুরু করে দলীয় মনোনয়ন পর্যন্ত সবই সম্পন্ন হয়েছিল। নির্বাচনের মাত্র দিনকয়েক আগে করোনা পরিস্থিতিতে স্থগিত করা হয় নির্বাচন। পরিস্থিতি কিছুটা ভালো হওয়ার পর নতুন করে ভোটগ্রহণের দিন নির্ধারণ করা হয় এ বছরের ২৭ জানুয়ারি। নতুন তারিখ ঘোষণার পর গত ৮ জানুয়ারি থেকে শুরু হয় প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা। এর মধ্যে হামলা পাল্টা হামলা হয়েছে। অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগও কম নয়। এসবের মধ্যেও জমজমাট নির্বাচনী প্রচারণা দেখা গেছে। প্রার্থী ও সমর্থকদের গণসংযোগ ও শ্লোগানে মুখর থেকেছে নগরী।
সংশ্লিষ্টদের মতে, নির্বাচনে মেয়র পদে মূল লড়াইটা আওয়ামী লীগের নৌকা এবং বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে। মেয়র প্রার্থীদের চেয়ে কাউন্সিলর প্রার্থীরা বেশী সক্রিয় ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে আনতে। সব প্রার্থীই আত্মীয় স্বজন থেকে শুরু করে দলীয় নেতাকর্মীদের ভোট কেন্দ্রে আনার জন্য মরিয়া। এতে নির্বাচনের দিন বিপুল সংখ্যক মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে এবার ভোটারের সংখ্যা সর্বমোট ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৬ জন।
চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও চসিক নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান আজাদীকে জানান, উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটগ্রহণ হবে। কাল সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোট নেয়া হবে। প্রতিটি কেন্দ্রেই ইভিএমে ভোটগ্রহণ চলবে। তিনি বলেন, নির্বাচনী পরিবেশ সুষ্ঠু রাখার জন্য পর্যাপ্ত আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাঠে নেমেছে। তাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। ৭৩৫টি ভোট কেন্দ্রে ৪ হাজার ৮৮৬টি বুথে ভোটগ্রহণ করা হবে। এর মধ্যে অস্থায়ী ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ২টি, অস্থায়ী বুথের সংখ্যা ৭৬৪টি। ৭৩৫টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৪১৭টি বা ৫৬ দশমিক ৭৩ শতাংশ কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে প্রশাসন। ভোটগ্রহণের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৭৩৫ জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, ৪ হাজার ৮৮৬ জন সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা এবং ৯ হাজার ৭৭২ জন পোলিং কর্মকর্তা।
ভোটগ্রহণের দিন চট্টগ্রামে ভোটোৎসব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে হাসানুজ্জামান বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে সকল ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। তিনি সকলকে দায়িত্বশীল আচরণ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সকলের সম্মিলিত অংশগ্রহণে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হবে।