এবারও নির্দিষ্ট সময়ে বইমেলা শুরু নিয়ে অনিশ্চয়তা

ঢাকায় প্রস্তুতি শেষ হলেও খবর নেই চট্টগ্রামে

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ৭ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৬:২৪ পূর্বাহ্ণ

রাজধানীতে অমর একুশে বইমেলা শুরু হবে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি। মেলা আয়োজনের যাবতীয় প্রস্তুতি প্রায় শেষ করেছে বাংলা একাডেমি। তবে নগরে বইমেলা আয়োজনের প্রস্তুতি শুরুও করেনি আয়োজক চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। তাই এবারও চট্টগ্রামে নির্দিষ্ট সময়ে বইমেলা শুরু নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। জানা গেছে, ২০১৯ সাল থেকে নগরের এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেশিয়াম মাঠে প্রতিবছর অমর একুশে বইমেলার আয়োজন করে আসছে চসিক। প্রথমবার ঘোষণা দেয়া হয়েছিল, প্রতি বছর ১০ ফেব্রুয়ারি মেলা শুরু হয়ে ২৮ বা ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মেলা চলবে। প্রস্তুতি শুরু করতে দেরি করায় ২০২২ সালে নির্দিষ্ট সময়ে মেলা শুরু করা সম্ভব হয়নি। এবারও সে শঙ্কা করছেন প্রকাশক, লেখক ও পাঠকরা।

প্রসঙ্গত, প্রথবার সিটি কর্পোরেশন আয়োজন করলেও চট্টগ্রামের বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থা, সাহিত্যিক, লেখক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী এবং অন্যান্য শিল্প-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতরাই সম্মিলিতভাবে বইমেলা বাস্তবায়ন করে। গতবছরও সে ধারাবাহিকতা বজায় থাকে। অভিন্ন বইমেলা আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন তৎকালীন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। তাঁর এমন উদ্যোগের ফলে সত্যিকারের বইমেলা উপহার পায় পাঠক। দূর হয় অতীতের দৈন্যতার ছাপ। পাঠকও খুঁজে পেয়েছিল তার গন্তব্য। তাই চট্টগ্রামের বইমেলাকে ঘিরে বাড়ে প্রত্যাশার চাপও। এদিকে ফেব্রুয়ারি মাস ঘনিয়ে এলেও চট্টগ্রামে বইমেলা আয়োজনের প্রস্তুতি শুরু না করায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন চট্টগ্রামের পাঠক, লেখক ও প্রকাশকরা। তারা বলছেন, রাজধানীতে বইমেলার স্টল বরাদ্দের আবেদন গ্রহণ শুরু হয়েছিল গত ৬ ডিসেম্বর, যা শেষ হয়েছে ২০ ডিসেম্বর। ৪৫৩টি প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছে। স্পনসরের জন্য ই-টেন্ডারও সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে নিরবতা পালন করছে চসিক।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও বলাকা প্রকাশনার স্বত্বাধিকারী জামাল উদ্দীন দৈনিক আজাদীকে বলেন, ১০ ফেব্রুয়ারি মেলা শুরু করতে চাইলে জানুয়ারি মাসের মধ্যেই সব প্রস্তুতি শেষ করা প্রয়োজন। অন্যথায় নির্দিষ্ট সময়ে মেলা শুরু করা কঠিন। কিন্তু সিটি কর্পোরেশন কিছুই করছে না। এখন পর্যন্ত কোনো প্রস্তুতি সভাও করেনি। ঢাকার যেসব প্রকাশক মেলায় অংশ নেয় তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সব ঠিক করতেও ১০-১৫ দিন লাগে। ব্যক্তিগতভাবে আমি মেয়র মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি সভা আহ্বান করবেন বলে জানিয়েছেন।

এ প্রকাশক বলেন, গতবার মৌলবাদী ও স্বাধীনতা বিরোধী কিছু প্রকাশনার স্টল ছিল। নীতিমালা ঠিকভাবে ফলো করলে এমন হতো না। এবার যেন এমন ঘটনা না ঘটে সে ব্যাপারে মেয়র মহোদয়কে বলেছি। তিনি এ বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছেন।

চট্টগ্রাম সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদের সভাপতি মহিউদ্দিন শাহ আলম নিপু দৈনিক আজাদীকে বলেন, সিটি কর্পোরেশনকে বার বার অনুরোধ করছি। কিন্তু তাদের পক্ষ থেকে এখনো দৃশ্যমান কোনো প্রস্তুতি নিতে দেখছি না। তিনি বলেন, আমরা চাই ২১ এর বইমেলা কমপক্ষে যেন ২১ দিন যেন চলে। ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে মেলা শুরু হলে ভালো হবে। ১০ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার। প্রথমদিন দুই দিন কিছুটা প্রস্তুতি থাকলেও শুক্রবার থেকে মেলা জমে উঠবে। যার রেশ পুরো মাসেই থাকেব।
এ বিষয়ে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, নির্দিষ্ট সময়ে মেলা শুরু করার পরিকল্পনা আছে। এজন্য আমি নির্দেশনা দিয়েছি। প্রস্তুতি সভা করে কার্যক্রম শুরু করতে বলে দিয়েছি।

বইমেলা পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ও চসিক কাউন্সিলর নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু দৈনিক আজাদীকে বলেন, নির্দিষ্ট সময়ে মেলা শুরু করব। মেয়র মহোদয় নির্দেশনা দিয়েছেন। কয়েকদিনের মধ্যে প্রস্তুতি সভা করব। এরপর পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালিত হবে।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম ও ঢাকা দুই মেলাতেই অংশ নেয়া প্রকাশকদের সুবিধার্থে ঢাকার নয়দিন পর চট্টগ্রামে বইমেলা শুরুর তারিখ নির্ধারণ করা হয়। নগরে ২০১৯ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি বইমেলা শুরু হয়। বর্ধিত দুইদিনসহ ২১ দিনের মেলা শেষ হয় একই বছরের ২ মার্চ। ২০২০ সালেও মেলা শুরু হয় ১০ ফেব্রুয়ারি। মেলা শেষ হয় ২৯ ফেব্রুয়ারি। করোনা পরিস্থিতির কারণে ২০২১ সালে মেলা হয়নি। ২০২২ সালে মেলা শুরু হয় ২০ ফেব্রুয়ারি। বর্ধিত দুইদিনসহ মেলা শেষ হয় একই বছরের ১২ মার্চ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রথম পর্ব জুবায়ের ও দ্বিতীয় সাদ অনুসারীদের : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধকোভিডের সব ধরনের জন্য এক টিকা?