এবারও কি ডুববে শহর

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ৭ মে, ২০২২ at ৬:৩৮ পূর্বাহ্ণ

ঘর পোড়া গরু সিঁদূরে মেঘ দেখলে ডরায়’। নগরবাসীর অবস্থাও অনেকটা এ প্রবাদ বাক্যের মতো! আগুনে যে গরুর ঘর পুড়েছে সেই গরু আকাশে মেঘ দেখে ভয় পায়। আবার আগুন আসছে ভেবে শঙ্কায় থাকে।

একইভাবে দীর্ঘদিন ধরে জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ পোহানো নগরবাসীও আসছে বর্ষা মৌসুম নিয়ে আতংকে আছেন। গত বৃহস্পতিবার সামান্য বৃষ্টিতে শহরের অনেক এলাকা তলিয়ে যাওয়ায় সেই আতংক দ্বিগুণ হয়েছে। অল্প বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় ঘরবন্দী হওয়া নগরবাসী ভারী বর্ষণে কি হবে সেই প্রশ্ন তুলেছেন। শঙ্কিত কণ্ঠে তারা বলছেন, এবারও কি ডুববে শহর?

জানা গেছে, জলাবদ্ধতা নিরসনে গত চার বছর ধরে নগরে ১০ হাজার ৯২১ কোটি ২২ লাখ টাকা ব্যয়ে পৃথক চারটি প্রকল্পের কাজ চলছে। এর মধ্যে পাঁচ হাজার ৬১৬ কোটি ৪৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সমপ্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক সিডিএ’র মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এক হাজার ৬২০ কোটি ৭৩ লাখ ৫০ হাজার টাকায় ‘চট্টগ্রাম মহানগরীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ, জলমগ্নতা বা জলাবদ্ধতা নিরসন ও নিষ্কাশন উন্নয়ন’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। দুই হাজার ৩১০ কোটি ২৪ লাখ ২০ টাকায় ‘কর্ণফুলী নদীর তীর বরাবর কালুঘাট সেতু থেকে চাক্তাই খাল পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সিডিএ। এছাড়া এক হাজার ৩৭৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নগরের বহদ্দারহাট বাড়ইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত নতুন খাল খননে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের একটি প্রকল্প আছে।

চলমান প্রকল্পগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক বাস্তবায়িত মেগা প্রকল্পটি। এ প্রকল্পের আওতায় রয়েছে শহরের প্রধান খাল চাক্তাই ও মহেশখালসহ ৩৬টি খাল। অর্থাৎ শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে যেসব খাল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে সেগুলো এ প্রকল্পের অধীনে খনন ও পরিষ্কার করার কথা। এর বাইরে নালানর্দমাও সংস্কারে বরাদ্দ আছে এ প্রকল্পে। প্রায় ৬০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে প্রকল্পটির। সম্প্রতি সাতটি খালে কাজ শেষ করে তা বুঝিয়ে নিতে সিডিএ’কে চিঠিও দেয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। মেগা প্রকল্পের বাইরে অন্যান্য প্রকল্পগুলোরও কাজ চলমান আছে। এরপরও গত বৃহস্পতিবারের অল্প বৃষ্টিতে মানুষ ঘরবন্দী হয়ে পড়ায় শঙ্কা তৈরি হয় সাধারণ মানুষের মাঝে।

পতেঙ্গা আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে পাওয়া তথ্য অনুয়ায়ী, বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নগরে ২৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে ভোররাতে। আর এতেই পানিবন্দী হয়ে পড়েন ফিরিঙ্গীবাজার ও বাকলিয়াসহ শহরের অনেক এলাকার বাসিন্দারা। কোথাও হাঁটু এবং কোথাও গোড়ালিসমান পানির জন্য চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় নগরবাসীকে।

নগরের চকবাজার মুহাম্মদ আলী শাহ দরগাহ লেনের বাসিন্দা আবদুল হামিদ দৈনিক আজাদীকে বলেন, অল্প বৃষ্টিতে যেভাবে পানি উঠেছে তাতে সামনে কী হবে আন্দাজ করা যায়। এখন থেকেই মোটর চালিয়ে বাসাবাড়ির পানি বের করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। অনেকটা নিশ্চিত করে বলা যায়, এবারো পানিতে ডুববে। চকবাজার এলাকা পানিতে ডুবার জন্য হিজড়া এবং চাক্তাই খাল দায়ী। এ খাল দুটো পরিষ্কার রাখতেই হবে।

মুরাদপুর মোহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দা আবদুল হক আজাদীকে বলেন, সামান্য বৃষ্টি হলেই মোহাম্মদপুর মাজার রোড তলিয়ে যায়। বৃহস্পতিবারও ডুবে গেছে। তাই সামনে যে আমাদের কপালে দুঃখ আছে সেটা অনুমান করা যায়। একই বক্তব্য ছিল বাকলিয়া, দুই নম্বর গেট, চান্দগাঁও, পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকা, ফিরিঙ্গীবাজার, চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ, হালিশহরসহ নগরের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের। এসব এলাকার বেশিরভাগ লোকজন বলেছেন, মেগা প্রকল্পের কাজের সুবিধার্থে খালে বাঁধ দেয়া হয়েছে। এসব বাঁধ অপসারণ না করায় পানি যেতে পারেনি। তাই ডুবেছে।

এদিকে নগরবাসী শঙ্কায় থাকলেও আশার কথা শুনিয়েছেন জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান মেগা প্রকল্পের বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল শাহ আলী। তিনি দৈনিক আজাদীকে বলেন, এবার যে প্রত্যাশা ছিল সে আলোকে প্রকল্পের কাজ চলমান আছে। সামনে কোথাও পানি আটকাবে না। আগের মতো জলাবদ্ধতা হবে না।

বিভিন্ন খালে এখনো বাঁধ থেকে যাওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বলেন, ঈদের ছুটিতে আছেন শ্রমিকরা। তারা এলেই আগামী ১০/১৫ দিনের মধ্যে যেখানে যেখানে প্রতিবন্ধকতা আছে সেগুলো অপসারণ করে দিবো। আগেই বলেছিলাম এপ্রিলের পর খালের বাঁধ কেটে দিবো এবং খালের মাটি উত্তোলন করবো। অলরেডি আমরা কাজ শুরু করেছি। বেশ কিছু খাল থেকে মাটি উত্তোলনও হয়ে গেছে। খাল পরিষ্কারও করে দিয়েছি। কিন্তু কিছু কিছু খালে কাজ চলমান আছে।

তিনি বলেন, যেহেতু বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে তাই যেসব খালের কারণে জলাবদ্ধতার সম্ভাবনা আছে ওইসব খালে আর সময়ক্ষেপণ করবো না। দ্রুত সেগুলো পরিষ্কার করে দিবো। যাতে পরবর্তীতে বৃষ্টি হলেও জলাবদ্ধতা না হয়।

ইতোমধ্যে কোন কোন খালের বাঁধ কেটে দেয়া হয়েছে জানতে চাইলে বলেন, চাক্তাই খাল থেকে আর মাটি তুলতে হবে না। খালটি ক্লিয়ার করে ফেলেছি। চাক্তাই খালের বহদ্দারহাট, ফুলতলা, দেয়ানবাজারসহ যে অংশ কাজ চলমান ছিল সব ক্লিয়ার করেছি। এখানে আর কোনো বাঁধ নাই। শুধু চামড়ার গুদাম এলাকায় অল্প মাটি আছে, তবে সেগুলো জলাবদ্ধতার জন্য সমস্যা করবে না। কারণ ওখানে খাল যথেষ্ট প্রশস্ত।

তিনি বলেন, বাকলিয়া খালের এক জায়গায় কাজ চলমান আছে। ওই অংশ ছাড়া খালের বাকি অংশ পুরোটা ক্লিয়ার। সেখানে চকচকে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ডোমখালি খাল উদ্বোধন করার সময় ময়লা ছিল। সেটা পরিষ্কার করে ফেলেছি। এখন কিন্তু কোনো ময়লা নাই। তবে খালটির নিচের দিকে দুটো অংশ পাঠানিয়া গোদা ও ঘাসিয়াপাড়ায় কাজ চলমান আছে। বহদ্দারহাট ও চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার পানি নিষ্কাশনে গুরুত্বপূর্ণ খালটির কাজ চলমান অংশেও দ্রুত পরিষ্কার করে দেয়া হবে বলে জানান তিনি।

এছাড়া মির্জা খালের দুইতিনটা পয়েন্টে, উত্তরা খাল, বামনশাহী খাল, ফিরিঙ্গীবাজার খালে কাজ চলমান আছে জানিয়ে বলেন, ফিরিঙ্গীবাজারে যে অংশের জন্য জলাবদ্ধতা হয় সে অংশ উন্মুক্ত করে দিবো। হিজড়া খালে প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির পেছনে কিছু মাটি আছে। বৃষ্টিহীন সাতআটদিন সময় ফেলে রিটেইনিং ওয়ালের কাজ শেষ করে ক্লিয়ার করে দিবো।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসাগরে লঘুচাপ, সৃষ্টি হতে পারে ঘূর্ণিঝড় ‘আসানি’
পরবর্তী নিবন্ধসেলফি রোডে দুই মোটরসাইকেলে সংঘর্ষ কিশোর নিহত