বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ আটজনের বিরুদ্ধে নাইকো দুর্নীতি মামলায় সাক্ষী হিসেবে বিদেশি তিন কর্মকর্তার সাক্ষ্যগ্রহণের অনুমতি দিয়েছেন আদালত।
গতকাল রোববার কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত অস্থায়ী ঢাকার বিশেষ জজ আদালত–৯ এর বিচারক শেখ হাফিজুর রহমান আবেদনটি মঞ্জুর করে আদেশ দেন। এর মধ্যে একজন এফবিআই কর্মকর্তা ডেব্রা ল্যাপ্রেভোট গ্রিফিথ। আর দুজন কানাডার পুলিশ কর্মকর্তা কেবিন দুগ্গান ও লয়েড শোয়েপ। এই তিনজনকে সাক্ষী হিসেবে উপস্থাপন করার জন্য সমন ইস্যুর আবেদন করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। রাষ্ট্রপক্ষে থেকে তিনি আবেদনের বিষয়ে শুনানি করেন। খালেদা জিয়ার পক্ষে আমিনুল ইসলাম এর বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেল সারাদেশের সব মামলায় শুনানিতে উপস্থিত থাকতে পারেন। কিন্তু তার আবেদন করার এখতিয়ার নেই। আমরা এর বিরোধিতা করছি। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত তিন বিদেশি সাক্ষীর সাক্ষ্য দেওয়ার আবেদন মঞ্জুর করেন। খবর বাংলানিউজের।
এদিকে এদিন মামলার বাদী দুদকের সহকারী পরিচালক মুহা. মাহবুবুল আলমকে জেরার দিন ধার্য ছিল। কিন্তু প্রস্তুতি নেই জানিয়ে জেরা পেছানোর আবেদন করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। আদালত সময় আবেদন মঞ্জুর করে আগামী ১০ অক্টোবর জেরার পরবর্তী তারিখ ধার্য করেন। খালেদা জিয়ার আইনজীবী হান্নান ভূঁইয়া এসব তথ্য জানান।
গত ১২ সেপ্টেম্বর মামলার বাদী মাহবুবুল আলম তার জবানবন্দি শেষ করেন। এরপর আসামি গিয়াস উদ্দিন আল মামুন ও সেলিম ভূঁইয়ার পক্ষে তাদের আইনজীবী জেরা শেষ করেন। এরপর অন্যদের পক্ষে জেরার জন্য আজকের দিন ধার্য করা হয়।
গত ১৯ মার্চ এই মামলায় চার্জ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। এরপর গত ২৩ মে আদালতে সাক্ষ্য দেন মামলার বাদী দুদকের তৎকালীন সহকারী পরিচালক মাহবুবুল আলম। তবে মামলার চার্জ গঠনের বৈধতা প্রশ্নে হাইকোর্টে আবেদন করেন খালেদা জিয়া। তাই ২২ আগস্ট এই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ হয়নি। পরে ৩০ আগস্ট বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ সেই আবেদন খারিজ করে দেন।
নাইকো মামলায় অন্য আসামিরা হলেন তৎকালীন মুখ্য সচিব কামাল উদ্দীন সিদ্দিকী, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, নাইকোর দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সিএম ইউসুফ হোসাইন, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন ও বাগেরহাটের সাবেক সংসদ সদস্য এম এ এইচ সেলিম। এর মধ্য প্রথম তিনজন পলাতক। আসামিদের মধ্যে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন ও বাপেক্সের সাবেক সচিব মো. শফিউর রহমান মারা যাওয়ায় তাদের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
মামলার বিবরণী থেকে জানা যায়, ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর তেজগাঁও থানায় খালেদা জিয়ার নামে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তদন্তের পর ২০০৮ সালের ৫ মে খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের নামে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়। দুদকের করা অন্য দুই মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত খালেদা জিয়াকে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে নাজিমউদ্দিন রোডে অবস্থিত পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রাখা হয়। সেখান থেকে পরে চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায়ই সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি পান তিনি।