চট্টগ্রাম জেলায় সংসদীয় আসন ১৬টি। এর মধ্যে ৯টি আসনে গতকাল প্রার্থী ঘোষণা করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। অর্থাৎ চট্টগ্রামে এখনো ৭টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেনি দলটি। তবে ঘোষিত ৯ আসনের প্রার্থীর মধ্যে রয়েছেন একজন নারীও। ইতোপূর্বে চট্টগ্রামে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর ঘোষিত প্রার্থী তালিকায় কোনো নারী ছিল না। ওই হিসেবে প্রথমবার জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে যাওয়া এনসিপি নারী প্রার্থী দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করল।
গতকাল বুধবার রাজধানীর বাংলামোটরে দলের অস্থায়ী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এনসিপি প্রথম ধাপে সারা দেশে ১২৫ সংসদীয় আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে। এ সময় তিন পার্বত্য জেলার প্রার্থীও ঘোষণা করা হয়। সেখানেও একজন নারী প্রার্থী আছেন। একইদিন কঙবাজারের চার সংসদীয় আসনের মধ্যে তিনটি আসনেও প্রার্থী ঘোষণা করে দলটি। সবমিলিয়ে চট্টগ্রাম, কঙবাজার ও তিন পার্বত্য জেলার ২৩ সংসদীয় আসনের বিপরীতে ১৫ আসনে প্রার্থী দিল এনসিপি। এনসিপির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ডা. তাসনীম জারা বলেন, সারা দেশ থেকে দেড় হাজারের বেশি মানুষ মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন।
এদিকে চট্টগ্রামের প্রতিটি আসনের বিপরীতে ৭ থেকে ৮ জন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন বলে এনসিপির দায়িত্বশীল এক নেতা আজাদীকে জানান। এর মধ্যে চট্টগ্রাম–৯ আসন থেকে সর্বোচ্চ ১২ জন ফরম সংগ্রহ করেন।
চট্টগ্রাম থেকে যারা মনোনীত হলেন : চট্টগ্রাম–৬ (রাউজান) আসনে এনসিপির শ্রমিক উইং জাতীয় শমিক শক্তি চট্টগ্রাম মহানগরের সাবেক আহ্বায়ক মুহাম্মদ মহিউদ্দিন জিলানী, চট্টগ্রাম–৮ (চান্দগাঁও, বোয়ালখালী ও পাঁচলাইশ আংশিক) আসনে এনসিপি চট্টগ্রাম অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক মো. জোবাইরুল হাসান আরিফ, চট্টগ্রাম–৯ (কোতোয়ালী–বাকলিয়া) আসনে মো. রিয়াজুল আনোয়ার চৌধুরী সিন্টু, চট্টগ্রাম–১০ (পাহাড়তলী–হালিশহর) আসনে এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব সাগুফতা বুশরা মিশমা, চট্টগ্রাম–১১ (বন্দর, পতেঙ্গা, ডবলমুরিং, ইপিজেড ও সদরঘাট) আসনে মোহাম্মদ আজাদ দোভাষ, চট্টগ্রাম–১৩ (আনোয়ারা–কর্ণফুলী) আসনে এনসিপির কেন্দ্রীয় সদস্য জুবাইরুল আলম মানিক, চট্টগ্রাম–১৪ (চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া আংশিক) আসনে এনসিপি কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সমন্বয় কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী মুহাম্মদ হাসান আলী, চট্টগ্রাম–১৫ (সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া) আসনে আবদুল মাবুদ সৈয়দ এবং চট্টগ্রাম–১৬ (বাঁশখালী) আসনে এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব ও চট্টগ্রাম মহানগরের প্রধান সমন্বয়কারী মীর আরশাদুল হক।
তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে খাগড়াছড়িতে এনসিপির কেন্দ্রীয় সংগঠক এডভোকেট মনজিলা সুলতানা, রাঙামাটিতে জেলা কমিটির সদস্য প্রিয় চাকমা ও বান্দরবানে জেলা আহ্বায়ক মংসা প্রু চৌধুরী। এছাড়া কঙবাজার–১ আসনে মো. মাইমুল আহসান খান, কঙবাজার–২ আসনে আবু সাইদ মোহাম্মদ সুজা উদ্দিন ও কঙবাজার–৪ আসনে মুহাম্মদ হোসাইন।
এনসিপির পদ নেই তিন প্রার্থীর : চট্টগ্রাম–৯ আসনের প্রার্থী মো. রিয়াজুল আনোয়ার চৌধুরী সিন্টু এনসিপির কমিটিতে নেই। অবশ্য ২০০৫ সালে ও ২০১০ সালে তিনি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে কমিশনার (বর্তমানে কাউন্সিলর) পদে প্রার্থী হয়েছিলেন। এর মধ্যে ২০০৫ সালে তিনি জামায়াতের প্রার্থী হলেও বিএনপি–জামায়াতের চারদলীয় জোটের সমর্থন ছিল।
কমিশনার (২০০৫) ও কাউন্সিলর (২০১০) হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার বিষয়টি আজাদীকে নিশ্চিত করে মো. রিয়াজুল আনোয়ার চৌধুরী বলেন, সম্প্রতি আমি এনসিপিতে যোগ দিয়েছি। আমার বাবা মুসলীম লীগের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। ওই হিসেবে আমাকেও সবাই মুসলীম লীগের প্রার্থী হিসেবে চেয়েছে।
এদিকে চট্টগ্রাম–১১ আসনের প্রার্থী মোহাম্মদ আজাদ দোভাষ অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেন। তিনি জাতীয় পার্টির (আনোয়ার হোসেন মঞ্জু নেতৃত্বাধীন) রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে এনসিপির কমিটিতে নেই তিনি।
এছাড়া চট্টগ্রাম–১৫ আসনের প্রার্থী ১৯৮৩ সালে বাসদ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ২০১২ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত নাগরিক ঐক্যের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ছিলেন। তিনিও এনসিপির কোনো পদে নেই।
কী বলছেন প্রার্থীরা : এনসিপির সারা দেশের হেভিওয়েট প্রার্থীদের একজন দলটির চট্টগ্রাম অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক মো. জোবাইরুল হাসান আরিফ। শুরুতেই চট্টগ্রাম–৮ আসনে নির্বাচন করার ঘোষণা দেন এবং দীর্ঘ সময় ধরে আসনটিতে গণসংযোগ করছেন তিনি। আজাদীকে মো. জোবাইরুল হাসান আরিফ বলেন, প্রত্যেক ওয়ার্ডে আমাদের কমিটি রয়েছে। কেন্দ্র কমিটিও প্রস্তুত। আমাদের যতগুলো অর্গান আছে, যেমন ছাত্রশক্তি, যুব শক্তি সবাই কাজ করছে। গণসংযোগ করেছি, উঠান বৈঠক করেছি। বিভিন্ন কমিউনিটির সাথে বৈঠক হয়েছে, সবার সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে। তাই আমরা আশবাদী। আশা করছি চট্টগ্রামে যে কয়েকটি আসন এনসিপি বিজয়ী হবে তার একটি চট্টগ্রাম–৮।
মহিউদ্দিন জিলানী আজাদীকে বলেন, জুলাই শহীদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। রাউজানবাসীর ঘরে ঘরে গিয়ে তাদের দোয়া চাইব। তারা যদি নির্বাচিত করেন রাউজানের উন্নয়ন ও রাউজানকে সন্ত্রাসমুক্ত করতে কাজ করব।
চট্টগ্রাম–১৬ (বাঁশখালী) আসনের প্রার্থী মীর আরশাদুল হক আজাদীকে বলেন, আমাদের এলাকার লোকগুলো খুব ভালো ও সহজ–সরল। সরলতার সুযোগ নিয়ে তাদের মিসগাইড করা হয় ও ভুল বুঝানো হয়। ওই জায়গায় ডেভেলাপ করার ইচ্ছে আছে আমার, তাদের মানসিকতা পরিবর্তন করা এবং তাদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা তৈরি করা। আমি প্রচারণা চালাব, ঘরে ঘরে যাব। মানুষ যদি আমাকে সুযোগ দেয় এলাকার উন্নয়নে কাজ করব।
তিনি বলেন, বাঁশখালীতে এক নম্বর সমস্যা হচ্ছে রাস্তাঘাটের সমস্যা। সেটা নিয়ে সচেতনতা বাড়ানো দরকার। পরে সরকারে যারাই আসুক ইমার্জেন্সি লেভেলে যেন আমাদের সড়কগুলো ঠিক করা হয়। বাঁশখালীতে ভালো মেডিকেল নেই। প্রাইভেট মেডিকেলগুলো ভুয়া চিকিৎসা দেয়, এই জায়গাগুলো ঠিক করা; এ ধরনের কিছু টার্গেট আছে। এগুলা নিয়ে কথা বলব ও মানুষের কাছে যাব।












