দেশের সবচেয়ে বড় কন্টেনার টার্মিনাল নিউমুরিং কন্টেনার টার্মিনাল (এনসিটি) কী নৌবাহিনীর হাতে যাচ্ছে? চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সহায়তা এবং তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ টার্মিনালটি পরিচালনা করা যায় কিনা তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এনসিটির বেসরকারি অপারেটর সাইফ পাওয়ারটেকের কাছ থেকে নিয়ে টার্মিনালটি বন্দর কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনায় নৌবাহিনী পরিচালনা করার ব্যাপারে গতকাল উচ্চ পর্যায়ের একটি বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনের উপস্থিতিতে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। তবে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি উল্লেখ করে বৈঠকে উপস্থিত একটি সূত্র জানিয়েছে, আগামী ৬ জুলাই সাইফ পাওয়ারটেকের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। ৭ জুলাই থেকে এনসিটিতে যে আর সাইফ পাওয়ারটেক থাকছে না সেটি নিশ্চিত হয়ে গেছে। এখন বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজেরা কিংবা নৌবাহিনীর সহায়তা নিয়ে টার্মিনালটির কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে। বন্দর কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে ইকুইপমেন্ট পরিচালন ব্যয়ের জন্য সরকারের অনুমোদন নিয়েছে। প্রাইমমুভার ভাড়া করার জন্যও টেন্ডার আহ্বান করেছে। জাহাজ থেকে কন্টেনার খালাস কিংবা জাহাজিকরণের সব ইকুইপমেন্ট বন্দরের রয়েছে। নৌবাহিনীর বিষয়টি নিয়ে বন্দর সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, এনসিটির ব্যাপারে যে সিদ্ধান্তই আসুক না কেন তা অবশ্যই সময় হলে সকলকে জানানো হবে। নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন গতকাল সকালে বন্দর পরিদর্শনকালে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়াল এডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামানসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা ছিলেন। এরপর বন্দর ভবনে কর্মকর্তাদের সঙ্গে সভায় অংশ নেন। সেখানে নিউমুরিং টার্মিনাল নিয়ে আলোচনা হয়। সভায় প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয় সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকের পর এনসিটি পরিচালনা কার হাতে যাচ্ছে জানতে চাইলে নৌপরিবহন উপদেষ্টা ড. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, কাল বা পরশু এ ব্যাপারে জানা যাবে। চট্টগ্রাম বন্দর নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় করতে পারে। অন্য কত রকম উপায় আছে। এজন্য পার্টিকুলারলি কিছু বলতে পারব না। মন্ত্রণালয়ের সাথে আলাপ–আলোচনা করে বলা যাবে। অনেক অপশন আমাদের কাছে আছে।
বিদেশি কোম্পানিকে দেওয়া হচ্ছে–এমন আলোচনার মধ্যে বর্তমানে এনসিটি পরিচালনাকারী কোম্পানি সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেডের সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের চুক্তির মেয়াদ আগামী ৬ জুলাই শেষ হচ্ছে। এর পরদিন থেকে বন্দরের সবচেয়ে লাভজনক টার্মিনালটি কে পরিচালনা করবে সেটি নিয়ে এখন আলোচনা চলছে। এ টার্মিনাল পরিচালনার ভার বিদেশি কোম্পানিকে দিতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার–এমন খবরের পর এ নিয়ে সমালোচনার পাশাপাশি এর প্রতিবাদও হচ্ছে।
এদিকে দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে নতুন অপারেটর ঠিক না করা পর্যন্ত প্রয়োজনে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিচালনার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন। কিন্তু কে পরিচালনা করবে সে ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হওয়ায় বন্দর বা নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি।
চট্টগ্রাম বন্দরের চারটি কন্টেনার টার্মিনালের মধ্যে সবচেয়ে বড় এনসিটি। এ টার্মিনালের পাঁচটি জেটির মধ্যে চারটিতে কন্টেনারবাহী বড় জাহাজ এবং অন্যটিতে অভ্যন্তরীণ নৌপথে চলাচলকারী ছোট জাহাজ ভেড়ানো হয়। বন্দরে যত কন্টেনার ওঠানামা করে সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হয় এনসিটিতে। ২০২৪ সালে মোট কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের ৪৪ শতাংশ হয়েছে এ টার্মিনালে।