বৃহত্তর চট্টগ্রামে ৪৫ হাজারেরও বেশি নাগরিকের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সংশোধনের আবেদন নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার অধীনে ৫ জেলায় (চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দারবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি) ২২ হাজার, চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার অধীনে ২০ হাজারের মতো এবং উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের অধীনে উপজেলা পর্যায়ে ৫–৬ হাজারের মতো এনআইডি পেন্ডিং (নিষ্পত্তির অপেক্ষায়) রয়েছে বলে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস থেকে জানা গেছে। গত দুই–তিন মাসে চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন অফিসে বিভিন্ন সময়ে গিয়ে এনআইডি সংশোধনের জন্য আবেদনকারীদের ভোাগন্তির চিত্র বারবার চোখে পড়েছে। বেশ কয়েকজন আবেদনকারীর সাথে কথা হয়। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ভোটার হওয়ার চেয়ে এনআইডি সংশোধন করা অনেক অনেক বেশি কঠিন কাজ। প্রথমে ফিসহ সকল ডকুমেন্টস দিয়ে অনলাইনে আবেদন করতে হয়। অনলাইনে আবেদনের পর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছে হার্ড কপি নিয়ে যোগাযোগ করতে হয়। যোগাযোগ না করলে মাসের পর মাস পরে থাকে। অনেক সময় সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কর্মকর্তারা অফিসের কাজে ঢাকায় বা বাইরে থাকেন। অনেক সময় অফিসে মিটিংয়ে থাকেন। তখন যোগাযোগ করা যায় না। এসে আবার ফেরত যেতে হয়। আর জাতীয় নির্বাচন থেকে শুরু করে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন, উপজেলা নির্বাচন, পৌরসভা নির্বাচন এবং ইউনিয়ন নির্বাচনের সময় তো এনআইডি সংশোধন বা নতুন ভোটার হওয়া যায় না। এভাবে একজন নাগরিকের তার এনআইডি সংশোধন করতে মাসের পর মাস নির্বাচন অফিসে আসা–যাওয়াতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ইউনুচ আলী আজাদীকে বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সংশোধনের চাপ অনেক বেশি। বিভিন্ন ক্যাটাগরির সংশোধনের জন্য প্রতিদিন অজস্র আবেদন হয়। এনআইডি সংশোধনের আবেদন ক্যাটাগরির ভিত্তিতে হয়। এক্ষেত্রে ক, ক–১, খ, খ–১, গ, গ–১ ও ঘ এ সাতটি ক্যাটাগরিতে ফেলা হয় আবেদনগুলো। অর্থাৎ কোনো আবেদন জমা পড়লে সেগুলোর সমস্যার ধরন বুঝে ক্যাটাগরিতে ফেলেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা। ক্যাটাগরি হয়ে গেলে সে অনুযায়ী দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা আবার সংশ্লিষ্ট আবেদন নিষ্পত্তি করেন। আমার দায়িত্ব চট্টগ্রাম বিভাগের ৫ জেলার (চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দারবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি)। আমার ৫ জেলায় ২২ হাজারের মতো জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সংশোধনের আবেদন জমা পড়েছে। প্রতি মাসে ২ থেকে ৩ হাজারের মতো সংশোধন হচ্ছে। চট্টগ্রামের সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার অধীনে (চট্টগ্রাম জেলায়) প্রায় ২০ হাজারের মতো এবং উপজেলায় ৫ থেকে ৬ হাজারের মতো এনআইডি সংশোধনের জন্য জমা পড়েছে।
যারা ঠিক মতো সকল কাগজপত্র দেন তাদের এনআইডি সংশোধনে তেমন বিড়ম্বনায় পড়তে হয় না উল্লেখ করে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ইউনুচ আলী বলেন, আমাদের কাছে আসলেই আমরা সব কিছু দেখে সংশোধন করে দিচ্ছি। প্রতিদিনই সংশোধন হচ্ছে। অনেকেই সংশোধনের জন্য যা যা প্রয়োজনী ডকুমেন্ট দিতে হয়–সেগুলো ঠিক মতো দেন না বলেই তাদের গুলো আমরা চাইলেও সংশোধন করতে পারি না। তিনি বলেন, উপজেলা পর্যায়ে ছোট ছোট ভুল গুলো সংশোধন হয়। উপজেলা পর্যায়ে বেশি চাপ থাকে না। এর থেকে সামান্য বেশি কিছু ভুল থাকলে সেগুলো জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সংশোধন করেন। এরচেয়ে বেশি ভুল থাকলে সেগুলোর আবেদন আমার আছে আসে–সে গুলো আমি সংশোধন করি। আমরা যেগুলো পারি না–সেগুলো ঢাকায় পাঠানো হয়।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) কর্মকর্তারা জানান, ইসির এনআইডি সার্ভারে ১২ কোটির মতো নাগরিকের তথ্য রয়েছে। এদের মধ্যে প্রতিদিন হাজার হাজার নাগরিক কোনো না কোনো সংশোধনের আবেদন জানান। সমপ্রতি উপজেলা নির্বাচনের কারণে সাড়ের পাঁচ লাখের মতো আবেদন ঝুলে পড়েছিল।