এদেশের মূল শিকড় বাঙালি জাতিসত্তা চট্টগ্রামে বাণিজ্যমন্ত্রী

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ২০ আগস্ট, ২০২২ at ৭:১৩ পূর্বাহ্ণ

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, আমাদের দেশ অসামপ্রদায়িক বাংলাদেশ। এদেশের মূল যে শিকড় সেটি বাঙালি জাতিসত্তা। ধর্মের ভিত্তিতে দেশ হয়েছিল পাকিস্তান। আমরা কিন্তু সেটিকে ফেলে দিয়ে বাংলাদেশ করেছি। এখানে ধর্মের ভিত্তিতে ভাগাভাগির কোনো সুযোগ নেই। যারা করতে চান তারা এদেশের মূলে আঘাত করতে চান। অন্যায়ের কাছে, বিভক্তির কাছে মাথা নত করা যাবে না। গতকাল শুক্রবার রাতে নগরীর জে এম সেন হল প্রাঙ্গণে জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের ধর্ম সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সংবর্ধেয় অতিথি ছিলেন উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী। জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি শিল্পপতি সুকুমার চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ধর্ম সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী প্রবীর কুমার সেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী অস্তিত্বের প্রশ্নে বিন্দুমাত্র ছাড় না দেওয়ার জন্য ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এদেশের মাটিতে সবার রক্ত মিশে আছে। সবার রক্তের বিনিময়ে এদেশ স্বাধীন হয়েছে, কাউকে ভাগ করা যাবে না। ধর্মীয় বিভাজনের মধ্য দিয়ে কাউকে খাটো করা যাবে না। আপনারা কখনোই এ কথা ভাববেন না। আপনাদের শক্ত অবস্থান নিতে হবে। আপনাদের অধিকার এদেশের প্রতিটি মানুষের মতো অধিকার। কখনও সাহস হারাবেন না।
যে কারণে আমরা যুদ্ধ করেছি, যে স্বপ্ন বঙ্গবন্ধু দেখেছিলেন, একটি অসামপ্রদায়িক বাংলাদেশ, একটি আধুনিক, ক্ষুধামুক্ত, শিক্ষিত নাগরিকের বাংলাদেশ, সেই বাংলাদেশে সামপ্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই। যারা বাংলাদেশকে সেই জায়গায় নিয়ে যাবার চেষ্টা করছে, আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সেটাকে রুখে দাঁড়াতে হবে, সেটাকে ঠেকাতে হবে। আপনাদের কাছে এই আবেদন, আপনাদের অবস্থান শক্ত হওয়া দরকার।
এক্ষেত্রে হিন্দু সমপ্রদায়ের মানুষকে দুর্বল না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রী। তিনি বলেছেন, সকলকে মিলেই এই ধরণের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আপনারা সবাই জানেন আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। আমার বাবাও মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। এক সাথে আমরা দুইজন যুদ্ধ করেছিলাম। আজকে এই কথা বলার একটি কারণ, এই দেশে অশনি সংকেত দেখতে পাচ্ছি। যারা অসামপ্রদায়িক বাংলাদেশকে নষ্ট করতে জেগে উঠছে; এই বাংলাদেশ কিন্তু জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সব ধর্মের মানুষ যুদ্ধ করে স্বাধীন করেছে। আমি যে অঞ্চল থেকে এসেছি রংপুর, সেখানে যুদ্ধে প্রথম প্রাণ দিয়েছেন একজন হিন্দু, তার নাম শংকর সমঝদার। তিনি তো হিন্দু কমিউনিটি থেকে যুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের কৃষ্ণাঙ্গদের উদাহরণ টেনে মন্ত্রী বলেন, আমেরিকায় কালো মানুষের সংখ্যা ১০ শতাংশেরও কম। কিন্তু তারা প্রচন্ড সাহসী, প্রচন্ড প্রতিবাদী। যখন তাদের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন আসে, তারা বিন্দুমাত্র ছাড় দেয় না। এ কথা বলা এ জন্য যে, আপনারা কেন দুর্বল হবেন, কোনো কারণ নেই। আপনাদেরও তাদের মতো সাহসী ভূমিকা পালন করতে হবে।
বঙ্গবন্ধু সেই স্বপ্ন আমাদের দেখিয়েছিলেন- অসামপ্রদায়িক বাংলাদেশ, উন্নত বাংলাদেশ। সেই পথ থেকে হারিয়ে গেলে বাংলাদেশের আর কোনো মূল্য থাকবে না। এদেশটা আমাদের অনেক রক্তে পাওয়া বলে মন্তব্য করেন বাণিজ্যমন্ত্রী।
ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশকে ‘ধর্মরাষ্ট্রে’ পরিণত করার চেষ্টা হয়েছিল উল্লেখ করে অনুষ্ঠানের সংবর্ধেয় অতিথি শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু আমাদের একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র দিয়ে গেছেন। কিন্তু যারা এই ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রকে ধর্মীয় রাষ্ট্রে পরিণত করতে চেয়েছে, তাদের অজ্ঞতা এবং মূর্খতা এতটাই বেশি যে, তারা জানে না- নবী হযরত মুহম্মদ (দ.) আরব দেশকে কিন্তু নিজেই ধর্মীয় রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেননি। তিনি বলেন, রাষ্ট্রের কোনো ধর্ম থাকতে পারে না। রাষ্ট্র তো নামাজ পড়তে পারে না বা পূজা করতে পারে না। রাষ্ট্র তো গীর্জায় যেতে পারে না। রাষ্ট্র কোনো ব্যক্তি না, রাষ্ট্র একটা প্রতিষ্ঠান। রাষ্ট্রের মানুষের ধর্ম থাকবে, নিজ নিজ ধর্ম তারা পালন করবে।
শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, বাংলাদেশে সেই ভয়াবহ রাজনৈতিক শক্তি এখনও রয়ে গেছে। যারা আমাদের জননেত্রী শেখ হাসিনাকে বোমা মেরে হত্যা করতে চেয়েছিল, যারা আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। সংখ্যালঘু শব্দটা আমি কখনোই বলতে চাই না। কারণ তারাই সংখ্যালঘু যারা বাংলাদেশের আদর্শকে মানে না, ধারণ করে না।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর জন্মাষ্টমী পরিষদের সভাপতি লায়ন দুলাল চন্দ্র দে, সাধারণ সম্পাদক লায়ন শংকর সেনগুপ্ত, জন্মাষ্টমী শোভাযাত্রা পরিষদের সদস্য সচিব রতন ভট্টাচার্য্য, চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি লায়ন আশীষ কুমার ভট্টাচার্য্য, মহানগর জন্মাষ্টমীর প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক রত্মাকর দাশ টুনু, হিল্লোল সেন উজ্জ্বল, সুমন দেবনাথ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচালক ঘুমে, লরি ডিভাইডারে
পরবর্তী নিবন্ধসি ইউনিটে উপস্থিত ৮৩ শতাংশ