কক্সবাজারের মত সুন্দর সৈকতকে বাংলাদেশ কাজে লাগাতে না পারায় হতাশা প্রকাশ করেছে হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ। আদালত অবমাননার অভিযোগে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মামুনুর রশিদ গতকাল বুধবার বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের বেঞ্চে হাজিরা দিতে এলে এ বিষয়ে কথা বলেন বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক। বিচারপতি জে বি এম হাসান বলেন, সারা পৃথিবী কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের দিকে তাকিয়ে আছে। এত সুন্দর সৈকতকে আমরা ইউটিলাইজ করতে পারছি না। কক্সবাজারে দায়িত্ব পেলে কাজ করার সুযোগও ‘অনেক বেশি পাওয়া যায়’ মন্তব্য করে বিচারক বলেন, কিন্তু কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক যা করছেন, তাতে তার ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যেতে পারে। আদালতে আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। কক্সবাজারের ডিসির পক্ষে ছিলেন মোমতাজ উদ্দিন ফকির। খবর বিডিনিউজ/বাংলানিউজের।
এদিন শুনানি শেষে আদালত কক্সবাজারের ডিসিকে হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিয়েছে। পরবর্তী শুনানির দিন রাখা হয়েছে আগামী ৯ নভেম্বর। সেদিনের মধ্যে অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে হবে ডিসিকে।
এর আগে গত ২৫ আগস্ট সমুদ্র সৈকত এলাকার অবৈধ দখল ও স্থাপনা উচ্ছেদ সংক্রান্ত উচ্চ আদালতের নির্দেশনা না মানার অভিযোগের বিষয়ে ব্যাখ্যা জানাতে ১৯ অক্টোবর হাইকোর্টে হাজির হতে বলেন। সে অনুসারে জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ হাইকোর্টে হাজির হন।
শুনানির শুরুতে আদালত বলেন, আমরা পারতপক্ষে কারো বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে এনে তলব করি না। তাকে (জেলা প্রশাসক) অনেকবার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। আদালত জেলা প্রশাসককে উদ্দেশ্য করে বলেন, অবৈধ দখল ও স্থাপনা উচ্ছেদ করে সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য রক্ষায় আপনার ভূমিকা কেবল শূন্যই না, নেগেটিভও। বার বার বলার পরও আপনি আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন করেননি।
আদালত বলেন, কক্সবাজারের সৌন্দর্য রক্ষায় ভূমিকা রাখুন। আপনাকেও সারাবিশ্বের মানুষ চিনবে। সর্বোচ্চ আদালতের আদেশকে কাজে লাগিয়ে আপনি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করুন। আদালতের আদেশ মানতেই হবে। না মানার কোনো সুযোগ নেই। এ সময় জেলা প্রশাসক বলেন, আমি কিছু অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছি। এখন আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন করবো।
প্রায় এক দশক আগে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত নিয়ে একটি রায় দিয়েছিল উচ্চ আদালত। সে সময় সৈকতের স্থাপনা উচ্ছেদ হলেও পরে আবার সেসব স্থাপনা ফিরে আসে সৈকতে। এসব স্থাপনা উচ্ছেদ না হওয়ায় গত ফেব্রুয়ারিতে নতুন করে আইনি লড়াই শুরু করে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ। প্রথমে উকিল নোটিস দিয়ে পরে আদালত অবমাননার অভিযোগে মামলা করে সংগঠনটি। শুনানি নিয়ে হাই কোর্ট বেঞ্চ আদালত অবমাননার রুল দেওয়ার পাশাপাশি কক্সবাজারের জেলা প্রশাসককে তলব করে। সে নির্দেশ অনুসারে বুধবার হাজির হন জেলা প্রশাসক।
আদালতে জমা দেওয়া হলফনামায় তিনি ৪১৭টি স্থাপনা উচ্ছেদ করার কথা জানিয়ে বলেন, ২৩৩টি স্থাপনা উচ্ছেদ করা যায়নি আদালতের আদেশের কারণে। পরে মনজিল মোরসেদ বলেন, ডেপুটি কমিশনার আদালতে হাজির হয়েছেন। তিনি বলেছেন, তারা চারশর বেশি স্থাপনা উচ্ছেদ করেছেন। বাকি কিছু স্থাপনার মালিকরা আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে তারা আবেদন করে বলেছিল, তারা নিজেরা ৩১ অক্টোবরের মধ্যে অপসারণ করে নেবে।