‘এতো সুন্দর দুনিয়ায় কিছুই রবে নার’ এ গানের কথার মতোই সুন্দর এই ধরণীথেকে বিদায় নিয়েছেন বাংলা পপ সংগীতের কিংবদন্তি শিল্পী আজম খান। তরুণ সমাজের কাছে ‘পপ সম্রাট’, আবার ‘পপগুরু’। পুরো নাম মাহাম্মদ মাহবুবুল হক খান। কিন্তু মানুষ চিনতেন আজম খান নামেই। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা, এটা গর্ব করেই বলতেন। অসংখ্য গানের স্রষ্টা আজম খানের গতকাল সোমবার ছিল তাঁর ৭২তম জন্মবার্ষিকী। ১৯৫০ সালের ২৮ফব্রুয়ারি ঢাকার আজিমপুরে তার জন্ম। পপসম্রাট দীর্ঘদিন মরণব্যাধি ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে ২০১১ সালের ৫ জুন ঢাকাস্থ সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। ‘একাত্তরের দিনগুলি’ গ্রন্থে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম লিখেছেন, ২০ আগস্ট, ১৯৭১ একটা তাবুতে আলো জ্বলছে, আর সেখান থেকে ভেসে আসছে গানের সুর: হিমালয় থেকে সুন্দরবন হঠাৎ বাংলাদেশ-বুঝলাম আজম খান গাইছে। আজম খানের সুন্দর গলা। আবার অন্যদিকে ভীষণ সাহসী গেরিলা, দুর্ধষযোদ্ধা। এই কটি লাইনই বলে দেয় মুক্তিযুদ্ধে আজম খানের সম্পৃক্ততার কথা। স্বাধীনতার পর সংগীতে পপশিল্পী হিসেবে তিনি হঠাৎ করেই যেন ঝড়ের মতো আবির্ভূত হন।
১৯৭১ সালের পর তার ব্যান্ড ‘উচ্চারণ’ এবং আখন্দ (লাকী আখন্দ ও হ্যাপী আখন্দ) ভাতৃদ্বয়দশব্যাপী সংগীতের জগতে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। ১৯৭২ সালে বিটিভিতে ‘এতো সুন্দর দুনিয়ায় কিছুই রবে নারে’ ও ‘চার কালেমা সাক্ষীদেবে’ গান দু’টির প্রচার তাকে তুমুল জনপ্রিয়তা এনে দেয়। ‘এরপর রেললাইনের ওই বস্তিতে’ গানটি গেয়ে রীতিমতো হইচই ফেলে দেন। ‘ওরে সালেকা ওরে মালেকা’, ‘আসি আসি বলে তুমি আর এলে না’, ‘আলাল ও দুলাল’, ‘হারিয়ে গেছে খুঁজে পাব না’ এমন অনেক গানে গানে তিনি শ্রোতাদের মাতিয়ে তোলেন। যা তখন মানুষের মুখে মুখে ফিরতো।