ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় ওই অপ্রাপ্তবয়স্ক অনুপযুক্ত ছেলে বা মেয়েকে এতিম বলা হয় যার পিতা জীবিত নন। সোজা কথায় এতিম বলা হয় তাদের, শিশু অবস্থায় যাদের বাবা মারা গেছে। ১৮ বছর বয়স অর্থাৎ বালেক হওয়ার আগে বা বিবাহ না হওয়া পর্যন্ত কোনও শিশুর বাবা মারা গেলে সেই শিশুই এতিম।
এতিমদের সম্পদ সংরক্ষণ করার ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে কঠোরভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন, এতিমদের সম্পদ তাদের ফেরত দিয়ে দাও। তাদের ভালো মাল তোমাদের খারাপ মালের সাথে মিলিও না। এটা বড় গুনাহ।
যে মানুষ বিশেষ করে এতিমের কাছের আত্মীয়দের মধ্য থেকে এতিমের অভিভাবক নিযুক্ত হবেন। তিনি যেন এতিম সন্তান বালক না হওয়া পর্যন্ত যত্ন সহকারে তাদেরকে বড় করে তুলেন। এতিমদের প্রতি কোনও প্রকার লোভ লালসা কিংবা তাদের সম্পদের প্রতি কোনও প্রকার লোভ লালসা ছাড়াই তাদের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে গুরুত্বপূর্ণ আদেশ রয়েছে। আর আল্লাহর পক্ষ হতে যা কিছু করা, না করা, আদেশ, নিষেধ সবই এবাদত হিসেবে গণ্য হয়। এতিম মানেই যেন কোনওরকম দায়সারা কর্তব্য। তাদের দেখাশোনা, খাওয়ানো বা পড়ালেখা করানোর অজুহাতে কোনও অবস্থাতেই তাদের সম্পদ আত্মসাৎ করতে পারবেন না। এটা তাদের ধর্মীয়, সামাজিক ও নৈতিক দায়িত্ব, যা তারা করেছে এবং সৃষ্টিকর্তার আদেশও বটে। এর সাথে তার বাবার রেখে যাওয়া সম্পদে কোনো সম্পর্ক নেই। এটা তাদের নৈতিক দায়িত্ব কিন্তু দুঃখের বিষয় এই এতিমদের লালন–পালনের অজুহাতে তারা তাদের সম্পদ শুধু লুটই করে না তারা এতিমদের মাথায় হাত বুলিয়ে, ভুলিয়ে–ভালিয়ে লোক দেখানো দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করে তাদের নিঃস্ব করে পথে পথে ঘুরান নিজেরা সাম্রাজ্য বানিয়ে। এটা ঘোর অন্যায়। শুধু নৈতিক ও সামাজিক দৃষ্টি কোণ থেকে নয় বরং এটা আল্লাহর কাছে সবচেয়ে ঘৃণিত কাজ। এর বিচার ইহ ও পর ও দুই কালেই হতে দেখা যায়।
এই পাপের নিস্তার নেই। এরা সামাজিক ও ধর্মীয়ভাবে ঘৃণিত। ভালো মানুষের মুখোশ পরে এরা যে ঘৃণ্য ও নোংরা কাজ করে তার ফলে সমাজেও এরা ভূমিদস্য নামে পরিচিত। এই এদের উপরে উপরে অবস্থানের কারণে সকলেই সম্মান করলেও আসলে এরা আল্লাহ ও মানুষ উভয়ের কাছে নিন্দনীয়। এদের মানুষও আল্লাহ ঘৃণা করে। এদের যেমন দুনিয়ায় সম্মান নাই তেমনি আখিরাতেও শান্তি নেই। এতিম শব্দটি বা এতিমরা আল্লাহ অতি আদরের। তাদের স্বয়ং আল্লাহ হেফাজত করেন এবং আমাদেরকেও তাই নির্দেশ দিয়েছেন। অতএব আমাদের এদের প্রতি যত্নবান হওয়া উচিত। পবিত্র কোরআনে তাদের প্রতি ইনসাফ করতে বলা হয়েছে। এই কর্তব্যে অবহেলা করলে মৃত্যুর পরে জীবনে কৈফিয়ত দিতে বাধ্য করা হবে এবং সেই অপরাধের শাস্তি ভোগ করতে হবে। সেই কারণে এতিমদের ব্যাপারে সতর্ক হতে না পারলে আত্মীয়–স্বজনদের উপর এবং সেই জাতি উপর আল্লাহর পক্ষ থেকে শাস্তি উপস্থিত হয়। এতিমের হক দিতে যারা কারসাজি করেছে এবং এর মাধ্যমে যারা সম্পদ ভোগ করছে আল্লাহর দরবারে তাদেরকে অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে। এত বড় পাপে ক্ষমা নাই। আল্লাহ সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুক। অন্যথায় তাদের কোনও দান, ইবাদত এবং ভালো কাজ আল্লাহর দরবারে গ্রহণ হবে না কারণ আল্লাহ স্বয়ং এতিমের হেফাজতকারী। আমরা যদি জানতে পারি যে, আমাদের পূর্বপুরুষেরা ভুল করেছিলেন তবে আমাদের কর্তব্য হবে সেই ভুলকে আমাদের সাধ্যমত সমাধান দিয়ে তাদের আত্মার শান্তির ব্যবস্থা করা। কারণ তারা সেই সম্পদ এতিমদের বঞ্চিত করে আপনাদের দিয়ে গেছেন। না হয় সমান পাপী আপনিও হবেন। কারণ আল্লাহ যেমন দয়াময় তেমনি ন্যায় বিচারকও বটে। দায় এড়ানো কোনও সুযোগ নেই আমাদের।