এতবড় অমানবিক যে, তাকেও মানবতা দেখিয়েছি

খালেদা জিয়া প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ।। চেয়ারম্যান প্রতীক দিচ্ছি দেখেই মারামারি তা কিন্তু না অনেক দিয়েছি, আর কত টাকা ভর্তুকি দেব?

| বৃহস্পতিবার , ১৮ নভেম্বর, ২০২১ at ৫:৩৩ পূর্বাহ্ণ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য সরকারের নির্বাহী ক্ষমতায় যা করার ছিল, তা তিনি করেছেন, এখন বাকিটা আইনের ব্যাপার। সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রীর এমন জবাব আসে। যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স সফরের অভিজ্ঞতা জানাতে গতকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় যেমন ইউপি নির্বাচনে সহিংসতা, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, ক্রিকেট ছাড়াও অসুস্থ খালেদা জিয়া প্রসঙ্গ উঠে আসে। খবর বিডিনিউজের।
শেখ হাসিনা বলেন, এতবড় অমানবিক যে, তাকে আমি মানবতা দেখিয়েছি। আমার হাতে যেটুকু পাওয়ার সেটুকু আমি দেখিয়েছি। আর কত চান? খালেদা জিয়ার অসুস্থতা ও বিদেশ পাঠানো নিয়ে পরিবারের আবেদনের প্রসঙ্গ তুলে একজন সাংবাদিক জানতে চেয়েছিলেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিশেষ কোনো পদক্ষেপ তিনি নেবেন কি না। উত্তর দিতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমার কাছে চান কীভাবে বলেন তো? খালেদা জিয়াকে যে কারাগার থেকে বাসায় থাকতে দিছি, চিকিৎসা করতে দিছি, এটাই কি বেশি না? আপনাকে যদি কেউ হত্যা করার চেষ্টা করত, আপনি কি তাকে গলায় ফুলের মালা দিয়ে নিয়ে আসতেন? বলেন আমাকে? বা আপনার পরিবারকে কেউ যদি হত্যা করত, আর সেই হত্যাকারীর যদি কেউ বিচার না করে, পুরস্কৃত করে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিত, তাদের জন্য আপনারা কী করতেন?
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার ঘটনায় খালেদা জিয়ার স্বামী সাবেক সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানকেই দায়ী করেন শেখ হাসিনা। পরে ক্ষমতায় এসে খালেদা জিয়াও একই পথে হেঁটেছেন- সে অভিযোগ তুলে শেখ হাসিনা বলেন, আমার হাতে যেটুকু পাওয়ার সেটুকু আমি দেখিয়েছি। আর কত চান? আমাকে বলেন। এখন সে (খালেদা জিয়া) অসুস্থ। ওই যে বললাম না, রাখে আল্লাহ মারে কে, মারে আল্লাহ রাখে কে? সেটি মনে করে বসে থাকেন। এখানে আমার কিছু করার নাই। আমার যেটা করার ছিল করেছি। এটা আইনের মাধ্যমে।
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সহিংসতার প্রসঙ্গ এনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থিতা উন্মুক্ত করে দেবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে দলীয় প্রার্থিতা উন্মুক্ত করে দেওয়ার সম্ভাবনা নাকচ করে সহিংসতার জন্য বিএনপিকে দায়ী করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, মুশকিল হচ্ছে এখানে আমরা শুধু চেয়ারম্যান পদে প্রতীক দিচ্ছি, কিন্তু মেম্বার পদে কোনো প্রতীক নেই। তাদের কোনো প্রতীক থাকে না। আপনারা যদি ঘটনাগুলো দেখেন, মেম্বারদের মধ্যেও গোলমাল, তাদের মধ্যেও কাটাকাটি। শুধু যে চেয়ারম্যান প্রতীক দিচ্ছি দেখেই মারামারি তা কিন্তু না। শেখ হাসিনা বলেন, তৃণমূলে দেখা যায় একজনকে নমিনেশন দেওয়া হয়েছে, অনেকের আকাঙ্ক্ষা থাকে। নির্বাচন তো সবাই করছে, আমরা যেমন আওয়ামী লীগের নামে করছি, বিএনপি নাম ছাড়া করছে, অন্যান্য দলও করছে। এই যে হানাহানি মারামারি, কোথায় কোথায়, কাদের মধ্যে হচ্ছে- সেটা আপনারা দেখেন। আমাদের দলের মধ্যে যেগুলো হবে, আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।
জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ, সারসহ বিভিন্ন খাত মিলিয়ে সরকারকে বছরে ৫৩ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হয় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রেখেছেন- আর কত টাকা ভর্তুকি সরকার দিতে পারবে? সংবাদ সম্মেলনে ডিজেলের দাম বৃদ্ধি নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে সরকারপ্রধানের এমন মন্তব্য আসে। ডিজেলের দাম বৃদ্ধির কারণে বাসের ভাড়া বেড়েছে এবং বাজারেও তার প্রভাব পড়েছে জানিয়ে একজন সাংবাদিক প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চেয়েছিলেন, ডিজেলের দাম কমানোর কোনো পরিকল্পনা সরকারের আছে কি না। উত্তর দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশেকে বিদেশ থেকে ডিজেল কিনে আনতে হয়। বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়ে গেছে বলেই দেশেও দাম বাড়াতে হয়েছে। কিন্তু তারপরও অনেক খাতে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। তিনি বলেন, আমাদের উপায়টা কী? উপার্জনটা কী? আমাদের কী সম্পদ আছে? উন্নত দেশে যান, খাদ্যের জন্য হাহাকার। সুপারমার্কেট খালি, খোদ লন্ডনের কথা বলছি। আমাদের দেশে তো খাদ্যের অভাব হয় নাই।
বাংলাদেশ ক্রিকেট দল সুপার টুয়েলভের সব ম্যাচ হেরে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিলেও তাতে হতাশ না হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, হ্যাঁ, যেটা আমরা আশা করেছিলাম, সেটা হয়নি। আমি কিন্তু আমাদের ছেলে-পেলেদের কখনো হতাশ করি না। তাদেরকে বলি আরো ভালো খেলো, আরো মনোযোগী হও, আরো প্র্যাকটিস কর।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএবারও সর্বোচ্চ করদাতার ট্যাক্স কার্ড পাচ্ছেন আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক
পরবর্তী নিবন্ধচর কেটে কর্ণফুলীর গতিপথ ঠিক রাখার চেষ্টা