নানান নাটকীয়তা আর তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার পর ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনই হোয়াইট হাউসের চাবি পেতে প্রয়োজনীয় ২৭০টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট ব্যাগে ভরতে পেরেছেন বলে সব রাজ্যের গণনাকৃত ভোটের ফলে স্পষ্ট হয়েছে। তবে এর মানে এই নয় যে, এখনই তিনি তার যাবতীয় সব আসবাবপত্র নিয়ে ওয়াশিংটন ডিসির ১৬০০ পেনসিলভেইনিয়া অ্যাভেনিউর ঠিকানার হোয়াইট হাউসে উঠে যাবেন। যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর হোয়াইট হাউসে আবাস গাড়ার আগ পর্যন্ত বেশ কিছু ধাপ ও আনুষ্ঠানিকতা পার হওয়া লাগে। সাধারণত এই প্রক্রিয়ায় কোনো ধরনের ঝঞ্জাট বাধে না। যদিও এবার ডোনাল্ড ট্রাম্প ভোটের ফল নিয়ে আইনি লড়াইয়ে নামার ঘোষণা দেওয়ায় খানিক জটিলতা দেখা দিতে পারে। বিবিসির এক প্রতিবেদনে এসব বিষয়ের উপরই কিছুটা আলোকপাত করা হয়েছে। জো বাইডেন কখন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্ট হবেন? খবর বিডিনিউজের।
প্রথমে প্রত্যেক রাজ্যের ভোটের ফল প্র্রত্যয়িত হতে হবে। এটা একটা আনুষ্ঠানিকতা, যা আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে হয়ে যাবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির স্থানীয় সময় ২০ জানুয়ারি দুপুরে নতুন প্রেসিডেন্টের চার বছরের মেয়াদ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। ওয়াশিংটন ডিসিতে একটি অভিষেক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নতুন প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্টের যাত্রা শুরু হয়, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি তাদের শপথ পড়ান। সেই ধারাবাহিকতায় আগামী বছরের ২০ জানুয়ারিতে জো বাইডেন ও কমলা হ্যারিসের অভিষেক হতে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই সময়সূচির ব্যতিক্রমও হয়, যদি প্রেসিডেন্ট দায়িত্বে থাকা অবস্থায় মারা যান কিংবা পদত্যাগ করেন তাহলে তার ভাইস প্রেসিডেন্টকে যত দ্রুত সম্ভব শপথ নিতে হয়।
প্রেসিডেন্সিয়াল ট্রানজিশন কী? এটি হচ্ছে নির্বাচনের ফল নির্ধারিত হওয়ার পর থেকে ২০ জানুয়ারি নতুন প্রেসিডেন্টের দায়িত্বভার গ্রহণের মধ্যবর্তী সময়কাল। নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট একদল লোককে একত্রিত করে তার ‘ট্রানজিশন টিম’ গঠন করবেন, যারা অভিষেকের পরপরই আগের প্রশাসনের যাবতীয় ক্ষমতা তাদের হাতে নিয়ে নেবে। বাইডেনের শিবির এরইমধ্যে একটি ‘ট্রাঞ্জিশন’ ওয়েবসাইট প্রস্তুত করে ফেলেছে। এই ‘ট্রানজিশন টিম’ নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের বাছাই করবে, নতুন প্রশাসনে কোন কোন নীতি অগ্রাধিকার পাবে এবং দেশ পরিচালনার প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করবে। দলটির সদস্যরা বিভিন্ন কেন্দ্রীয় সংস্থার কাছ থেকে বিভিন্ন বিষয়ের সময়সীমা, বাজেট, কোন কোন আমলা কী করছেন সে বিষয়ক তথ্য সংগ্রহ করবেন। বিভিন্ন কার্যালয়ে যারা নতুন প্রশাসনের হয়ে কাজ করতে আসবেন, তাদের সম্পর্কে সব ধরনের তথ্য সংগ্রহ করবেন এবং অভিষেকের পরও প্রেসিডেন্টকে সাহায্য করার জন্য প্রস্তুত থাকবেন। দলটির কেউ কেউ ‘ট্রানজিশন পর্ব’ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও নতুন প্রশাসনে থাকতে পারেন। জো বাইডেন গত কয়েক মাস লাগিয়ে তার ‘ট্রানজিশন টিমটি’ গঠন করেছেন, তা পরিচালনা করার জন্য অর্থ সংগ্রহ করেছেন এবং গত সপ্তাহে তিনি এর ওয়েবসাইটও চালু করেছেন।
এখন বেশি শোনা যাবে যেসব শব্দ: প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট বা নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট: সাধারণত কোনো প্রার্থী নির্বাচনে জয় লাভের পর থেকে ২০ জানুয়ারি নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার আগ পর্যন্ত তাকে এভাবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। ক্যাবিনেট বা মন্ত্রিসভা: সরকার পরিচালনার সর্বোচ্চ স্তর। বাইডেন শিগগিরই তার মন্ত্রিসভার বিভিন্ন পদে কাকে কোথায় চান, তা ঘোষণা করা শুরু করবেন। কনফার্মেশন হিয়ারিং বা নিয়োগ শুনানি: মন্ত্রিসভাসহ বিভিন্ন পদে নতুন প্রেসিডেন্ট যাদের মনোনয়ন দেবেন তাদের নিয়োগের চূড়ান্ত অনুমোদন দেবে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেট। এক্ষেত্রে বাইডেনের পছন্দের ব্যক্তিদেরকে সিনেটের বিভিন্ন কমিটির শুনানিতে হাজিরা দিতে হবে। এরপর ওই কমিটিগুলোর সদস্যদের ভোট প্রেসিডেন্ট মনোনীত ব্যক্তির নিয়োগ চূড়ান্ত করবে বা তাকে প্রত্যাখ্যান করবে।
কেলটিক: প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার কারণে বাইডেন বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার বাড়তি নিরাপত্তা পাবেন, তার সাংকেতিক নাম ঠিক হয়েছে – ‘কেলটিক’। প্রার্থীরা নিজেরাই তাদের এ সাংকেতিক নাম পছন্দ করে থাকেন। ট্রাম্পের ক্ষেত্রে এ নাম ছিল ‘মোগল’, আর কমলা হ্যারিস বেছে নিয়েছেন ‘পাইওনিয়ার’। কোনো আইনি বাধার মুখে কি পড়তে হচ্ছে? সম্ভাবনা অনেকটাই। ভোট গণনার শেষ বেলায় যেসব রাজ্য বাইডেনের দিকে হেলে পড়েছে সেসব রাজ্যে ভোট জালিয়াতির অভিযোগে মামলা করবেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। যদিও নিজের অভিযোগের সপক্ষে কোনো প্রমাণ হাজির করেননি তিনি। তার প্রচার শিবির এরই মধ্যে আইনি লড়াইয়ের জন্য শীর্ষ সব আইনজীবীদের সন্ধানে নেমে পড়েছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানানোও হয়েছে।