চন্দনাইশে চলতি মৌসুমে পেয়ারার ভালো ফলন হয়েছে। বাজারে আসতে শুরু করেছে এ অঞ্চলের পেয়ারা। প্রতিদিন চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের রওশনহাট, বাদামতল, বাগিচাহাট ও দোহাজারী এলাকায় বসছে পেয়ারা বাজার। সেখান থেকে ক্রয় করে পাইকাররা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিয়ে যাচ্ছেন। কোনো ধরনের ক্ষতিকারক কীটনাশক প্রয়োগ ছাড়াই উৎপাদন হওয়ায় অর্গানিক পেয়ারা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে এখানকার পেয়ারা।
জানা যায়, উপজেলার পাহাড়ি অঞ্চল কাঞ্চননগর, হাশিমপুর, দোহাজারী, ধোপাছড়ি এখন পেয়ারা গ্রাম হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে কাঞ্চননগরে সর্বাধিক উৎপাদন হওয়ায় এখানকার পেয়ারার নামকরনও হয়ে গেছে ‘কাঞ্চন পেয়ারা’ হিসেবে। পেয়ারা বাগান করে কয়েক হাজার মানুষ তাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে নিয়েছেন। শত শত বেকার যুবক স্বাবলম্বী হয়ে পরিবারের হাল ধরেছেন। পাশাপাশি সংগ্রহ, পরিবহনেও কয়েক হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। আবার অনেকেই পেয়ারা চাষে শূণ্য থেকে পরিণত হয়েছে লাখপতিতে। চলতি মৌসুমে ৭৫০ হেক্টর পাহাড়ি ভূমিতে পেয়ারার চাষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ স্মৃতি রানী সরকার। এ অঞ্চলে উৎপাদিত পেয়ারা সংরক্ষণের জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতায় কৃষি বিপনন বিভাগ থেকে হিমাগার নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তিনি জানান, চলতি মৌসুমে পেয়ারার ফলন ভালো হয়েছে। পেয়ারা চাষে প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করা হয় চাষিদের।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, প্রতি মৌসুমে চন্দনাইশের পাহাড়ি অঞ্চলে কমপক্ষে দু’হাজার বাগানে পেয়ারা চাষ হয়। এখানকার উৎপাদিত পেয়ারা সাইজে বড়, দেখতে সুন্দর, খেতে সুস্বাদু এবং পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ হওয়ায় দেশব্যাপী প্রচুর চাহিদা রয়েছে। দূর-দূরান্ত থেকে এসে অনেকেই ট্রাকসহ বিভিন্ন পরিবহনে করে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সরবরাহ করেন।
সাইজ অনুযায়ী বর্তমানে খুচরা বাজারে প্রতি ডজন পেয়ারা ৫০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক সংলগ্ন রওশনহাটের বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় প্রতিদিন ভোরে বসে পেয়ারার সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার। লাল কাপড়ে মোড়ানো ২ পুটলি (এক ভার) পেয়ারা বর্তমানে ১ হাজার থেকে ১২’শ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।
বিক্রির নির্দিষ্ট কোনো স্থান না থাকায় বাধ্য হয়ে পেয়ারা বিক্রেতারা চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পাশে বসেই বিক্রি করেন। প্রতিদিন ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত চলে বেচাকেনা। আবার কাঞ্চননগর থেকে দোহাজারী পর্যন্ত শত শত কিশোর ও যুবক পেয়ারা নিয়ে মহাসড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থেকে মহাসড়কে চলাচলরত বিলাসবহুল গাড়ির যাত্রীদের কাছে ডজন হিসেবেও খুচরা বিক্রি করে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে যাতায়ত করার সময় দেখা যায় এমন চিত্র।
ধোপাছড়ি ইউনিয়নের চাপাছড়ি এলাকার পেয়ারা বাগান মালিক মো. আজম, ইকবাল হোসেন, মোহাম্মদ আলী, কাঞ্চননগর এলাকার আবুল হাশেম, ফোরকান উদ্দিন, দোহাজারী জামিজুরী এলাকার আবু বক্করসহ একাধিক পেয়ারা চাষির সাথে আলাপ করে জানা যায়, এ অঞ্চলটি পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় কোনো ধরনের যত্মআত্তি ছাড়াই এখানে পেয়ারার প্রচুর উৎপাদন হয়। এখানকার পেয়ারা সু-স্বাদু ও পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ হওয়ায় সারা দেশে এর চাহিদা রয়েছে। আধুনিক প্রশিক্ষণ দিয়ে সুদমুক্ত ঋনদানের ব্যবস্থা করা হলে এ অঞ্চলে শুধুমাত্র পেয়ারা চাষ করেই দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখতে পারবেন তারা।
তারা জানান, প্রতি বছর খাজনা দিয়ে পেয়ারা চাষ করেন তারা। খাজনা দিয়ে অনেক সময় পাহাড়গুলো বন্দোবস্তি নিতেও চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয় তাদের। প্রতি মৌসুমে কোটি কোটি টাকার পেয়ারা উৎপাদন হওয়া সরকারি এসব পাহাড়গুলো চাষিরা যাতে স্থ্থায়ী বন্দোবস্থ পায় সে দাবি জানিয়েছেন অনেকেই।