কক্সবাজারের চকরিয়া পৌরশহরের বাঁশঘাটা সড়কের বাসিন্দা ইলেকট্রিক মিস্ত্রী আবদুর রহিমের শিশুপুত্র মোহাম্মদ আবদুল্লাহ সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে দুই পা হারায় একসঙ্গে। দুইবছর আগে ভয়াবহ দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার পর এক পর্যায়ে হাঁটুর উপরিভাগ পর্যন্ত কেটে ফেলতে হয়। এর পর থেকে তাকে চলতে হতো অনেক কষ্টে হামাগুড়ি দিয়ে। তবে সেই যন্ত্রণা তাকে আর সহ্য করতে হবে না। কৃত্রিম দুই পায়ের ওপর ভর করেই আবদুল্লাহ গতকাল শনিবার থেকে হাঁটতে শুরু করেছে। প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এসএআরপিভি’র উদ্যোগে কৃত্রিম পা পায় ১০ বছরের শিশু আবদুল্লাহ। চিরিঙ্গা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণির এ ছাত্র আজাদীকে বলে, ইতোপূর্বে আমাকে দুটি কৃত্রিম পা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এতই ওজন ছিল যে, হেঁটে অল্প দূরত্বে যেতেই হাঁফিয়ে উঠতাম। তাই সেগুলো ব্যবহার করতে পারতাম না। এবার একেবারে স্বল্প ওজনের দুটি কৃত্রিম পা সংযোজন হওয়ায় ভালভাবে হাঁটাচলা করা যাচ্ছে। এতে আমি ভীষণ খুশি। এখন থেকে পায়ে হেঁটেই নিয়মিত স্কুলে যেতে পারব। এজন্য এসএআরপিভির প্রতি আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।
শুধু আবদুল্লাহ নয় তার মতো নানা দুর্ঘটনায় পা হারানো আরও তিনজন পেয়েছেন কৃত্রিম পা। তারা হলেন মহেশখালী থানা পাড়ার মৃত আবদুল গণির পুত্র মোহাম্মদ জামাল (৬৪), ডুলাহাজারা ইউনিয়নের মালুমঘাটের চা–বাগান এলাকার মো. নুরুল আমিন (৭৫) ও একই এলাকার আজিজুর রহমানের স্ত্রী আনজুমান আরা (৪১)।
পা হারানোর বর্ণনা দিতে গিয়ে আনজুমান আরা জানান, ২০১২ সালে ডান পায়ের তলায় বাঁশের একটি কঞ্চি ঢুকেছিল। সেই কঞ্চি থেকে এক পর্যায়ে ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়ে। অনেক চিকিৎসার পর ২০১৪ সালে কেটে ফেলতে হয় সেই পা। তখন থেকে হুইল চেয়ারে চেপে সাংসারিক কাজ সারতে হয়েছে তাকে। তিনি বলেন, এখন নতুন করে কৃত্রিম পা পেয়ে আমার কষ্ট লাঘব হয়েছে।
বৃদ্ধ নুরুল আমিন জানান, ১৯৮৫ সালে ভয়াবহ দুর্ঘটনার শিকার হয়ে হারিয়েছিলেন বাম পা। তখন থেকে নড়াচড়ায় কষ্টের সীমা ছিল না। তিনি বলেন, এতবছর পর কৃত্রিম পা পেয়ে চলাফেরার সেই কষ্ট দূর হয়ে গেল।
মহেশখালী থানাপাড়ার জামাল উদ্দিন জানান, ১৯৯৭ সালে সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়ে হারিয়েছেন ডান পা। এখন কৃত্রিম পা দিয়ে অনায়াসে চলতে–ফিরতে পারবেন তিনি।
গতকাল শনিবার এ চার প্রতিবন্ধীর কাছে কৃত্রিম পা সরবরাহসহ যাবতীয় সরঞ্জামাদি প্রদানের সময় উপস্থিত ছিলেন কঙবাজার–১ আসনের সংসদ সদস্য জাফর আলম। এ সময় তিনি বলেন, এসএআরপিভি নামক এই সংস্থাটি দক্ষিণ চট্টগ্রামের অনেক প্রতিবন্ধী নারী–পুরুষকে দেখিয়েছেন জীবনের দিশা। সংস্থাটি তাদের কার্যক্রম যাতে আরো বেশি বেগবান করতে পারে সেজন্য আমার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে যথাযথ সহায়তা দেওয়া হবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির ভাইস প্রেসিডেন্ট ডা. তৈয়ব সিকদার, এসএআরপিভির উপদেষ্টা মাহমুদুল হাসান, প্রকৌশলী মো. নাছির উদ্দিন, এসএআরপিভির আঞ্চলিক পরিচালক কাজী মাকসুদুল আলম মুহিত প্রমুখ।
কাজী মাকসুদুল আলম মুহিত দৈনিক আজাদীকে বলেন, প্রায় ২২ বছর ধরে কঙবাজার জেলা এবং দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রতিবন্ধীদের একমাত্র নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হয়েছে আমাদের সংস্থা। রিকেটস রোগে আক্রান্ত হওয়া, নানাভাবে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে যেসব মানুষ প্রতিবন্ধী হয়ে গেছেন তাদের জীবনের দিশা খুঁজে পেয়েছেন এসএআরপিভি থেকে। আমাদের এই প্রয়াস অব্যাহত থাকবে।