এখন এডিস মশা কামড়ায় দিনে-রাতে সমানে

বদলে গেছে আচরণ

| শুক্রবার , ৭ জুলাই, ২০২৩ at ৫:৪৫ পূর্বাহ্ণ

ডেঙ্গু ভাইরাসের বাহক হল এডিস জাতের মশা। ভাইরাসবাহী মশার কামড়ে ডেঙ্গুর জীবাণু একজনের শরীর থেকে অন্যজনের শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তবে এই মশা কখন কামড়ায় এ নিয়ে অনেকেরই নানা মত আছে। এতদিন একটি ধারণা প্রচলিত ছিল এই মশাটি মূলত দিনের বেলা কামড়ায়। সচেতনতামূলক বিভিন্ন প্রচার প্রচারণায়ও দিনের বেলা মশারির ভেতরে থাকতে অথবা ফুলহাতা কাপড় পড়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, এই মশাটি শুধু দিনে নয় বরং রাতেও কামড়ায়। এর অর্থ মশাটির আচরণে পরিবর্তন ঘটেছে। যা জনস্বাস্থ্যের জন্য আশঙ্কার কারণ হয়ে উঠতে পারে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। খবর বিবিসি বাংলার।

এডিস মশা মানুষকে কেবল দিনের বেলায় কামড়ায় কিনা এমন ধারণা যাচাই করতে গত কয়েক বছর ধরে গবেষণা পরিচালনার কথা জানান কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার। এটি পরীক্ষার জন্য তিনি একজন মানুষকে মশারির ভিতরে রাখেন, তখন বাইরে তাকে কামড়াতে আসা মশাগুলোকে জীবিত ধরে ধরে একটি কাপে সংগ্রহ করা হয়। তারপর সেই মশাগুলোকে পরীক্ষাগারে এনে ক্লোরোফর্ম দিয়ে অজ্ঞান করে মাইক্রোস্কোপের নিচে পর্যবেক্ষণ করা হয় যে এগুলো কোন প্রজাতির মশা। কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন মৌসুমে টানা ২৪ ঘণ্টা ধরে এই মশা সংগ্রহ ও আচরণ পরীক্ষার কাজ করেছেন তিনি। তারা মূলত দেখতে চেয়েছিলেন কোন ধরনের মশা কোন সময়ে কামড়াতে বেশি পছন্দ করে। পরীক্ষায় তারা এসব মশার কামড়ানোর ছন্দ, কামড়ানোর সময় বা কর্মকাণ্ডের ধরন এক এক রকম দেখেন।

এই পরীক্ষা করতে গিয়েই অধ্যাপক বাশার জানতে পেরেছেন যে, এডিস মশা দিনের বেলা যেভাবে কামড়ায়, তেমনি রাতেও কামড়ায়। তবে রাতের বেলায় কামড়ানোর হার কিছুটা কম থাকে বলে তিন জানান। সম্প্রতি তিনি রাতের বেলায় তার শরীরে বসা মশার প্রজাতি পরীক্ষা করে এডিস মশার উপস্থিতি পেয়েছেন। এতে তিনি ধারণা করছেন, একসময়ে এডিস মশা শুধু দিনের বেলায় কামড়ালেও এখন এই মশার বৈশিষ্ট্যে বা আচরণগত পরিবর্তন এসেছে।

বাশার বলেন, ইতিপূর্বে আমরা জানতাম এডিস মশা শুধুমাত্র দিনের বেলায়, বিশেষ করে সকালে এবং বিকেলে কামড়ায়। কিন্তু আমাদের গবেষণায় সেটি ভুল প্রমাণিত হয়েছে। আমাদের ল্যাবরেটরি এবং মাঠ পর্যায়ের গবেষণায় দেখেছি এডিস মশা রাতেও কামড়ায়।

এডিস মশার রাতেও সক্রিয় থাকার কারণ হিসেবে রাতের বেলা অতিরিক্ত উজ্জ্বল আলোর ব্যবহারকে একটি বড় কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে। অধ্যাপক বাশারের মতে, শহরে উজ্জ্বল আলোর ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় এডিস মশার আচরণে পরিবর্তন হয়েছে। অতিরিক্ত আলোর কারণে একে তো মশা দিনরাতের পার্থক্য বুঝতে পারছে না। তার ওপর এখন তারা রাতের পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথেও খাপ খাইয়ে নিয়েছে।

আলোর সাথে মশার আচরণ পরিবর্তনের বিষয়টি প্রথমবারের মতো তার সামনে এসেছে ২০১৯ সালে ঢাকার বিমানবন্দরে কাজ করতে গিয়ে। ওই বছর বিমানবন্দরে মশার কারণে একটি ফ্লাইট দুই ঘণ্টা দেরিতে ছেড়ে যায়। সে সময় বিমানবন্দরে মশার ঘনত্ব পরীক্ষা করতে তার ডাক পড়ে। রাতের বেলা মশা ধরতে গিয়ে তারা দেখতে পান যে বিমানবন্দরের ভেতরে উজ্জ্বল ও মৃদু আলোর মধ্যে এডিস মশা বিচরণ করছে। তারপরেই তিনি ঘোষণা দিয়েছেন যে এডিস মশা রাতেও কামড়ায়। ঢাকায় আরও বিভিন্ন স্থানে তার পর্যবেক্ষণ অনুসারে, এডিস মশা উজ্জ্বল কিংবা মৃদু সব ধরনের আলোতে সক্রিয় থাকে। তাই ঘর আলোকিত থাকলে রাতেও কামড়াতে পারে এই প্রজাতির মশা।

এ ব্যাপারে অধ্যাপক বাশার বলেন, এডিস মশা খুবই চতুর এবং যে কোনো পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এটি নিজেকে পরিবর্তন করে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। সারা বিশ্বে আলোর দূষণ বেড়েছে। অর্থাৎ আলো যতটা ব্যবহার উচিত ছিল তার চেয়ে বেশি ব্যবহার হচ্ছে। এই আলোর দূষণের সাথে এডিস মশা খাপ খাইয়া নিয়েছে এবং রাতের বেলাও কামড়াচ্ছে। সেই সাথে জলবায়ু পরিবর্তন, অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণ এই মশা তার আচরণ পরিবর্তন করে নিয়েছে বলে মনে করেন এই কীটতত্ত্ববিদ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচোখের জলে তামিম বললেন ‘বিদায়’
পরবর্তী নিবন্ধনগরে মশার হটস্পট ৪৯০টি