চট্টগ্রাম থেকে দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস চলাচল এখনো স্বাভাবিক হয়ে ওঠেনি। নগরীর কদমতলী, বিআরটিসি, গরীবুল্লাহ শাহর মাজার গেইটসহ ৬–৭টি স্থান থেকে প্রতিদিন ৮শ’র অধিক যাত্রীবাহী বাস দেশের বিভিন্ন জেলায় গেলেও গতকাল অর্ধেক গাড়িও ছেড়ে যায়নি। যে অল্প সংখ্যক গাড়ি ছেড়ে গেছে তাতে তেমন যাত্রী ছিল না। বলতে গেলে অনেকটা যাত্রীশূন্য ছিল প্রায় প্রত্যেকটা গাড়ি। আন্তঃজেলা বাস মালিক সামতির নেতারা বলছেন, মানুষজন এখনো এক স্থান থেকে আরেক স্থানে যাতায়াত করছেন না।
সরেজমিনে গতকাল বিকেলে কদমতলী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল এবং বিআরটিসি বাস স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, দীর্ঘক্ষণ পরপর দুই–একটি দূর পাল্লার এসি ও নন এসি বাস ছেড়ে গেলেও তাতে তেমন যাত্রী ছিল না। যাত্রীর জন্য অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর একটি–দুটি করে গাড়ি ছাড়া হয়। তাতেও পুরো গাড়ির অর্ধেক যাত্রী পাওয়া যায় না। এই ব্যাপারে আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতির সচিব মনোয়ার হোসেন আজাদীকে বলেন, দূরপাল্লার কিছু কিছু গাড়ি আমরা চালাচ্ছি–কিন্তু যাত্রী নেই। বলতে গেলে যাত্রী শূন্য। ১৬ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত কোন গাড়িই চালাতে পারিনি। দুই–একটি গাড়ি চললেও তেমন কোন যাত্রী ছিল না। ৫ আগস্টের পর গাড়ির স্টাফরা নিজেদের খরচের জন্য কিছু কিছু চালালেও তেমন যাত্রী নেই। এখনো মানুষজন এক জায়গা–থেকে অন্য জায়গায় তেমন একটা যাচ্ছে না। আন্দোলনের সময় আমাদের প্রায় ৩৫ থেকে ৩৬টির মত গাড়ি কুমিল্লা এলাকায় ভাঙচুর করা হয়েছে। ২টি গাড়িতে আগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। প্রশাসন আমাদের সাহস দিচ্ছে–গাড়ি চালানোর জন্য। গতকালও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এসে আমাদেরকে গাড়ি চালাতে বলেছেন–কোন সমস্যা হলে উনাদের ফোন নাম্বার দিয়ে গেছেন–ফোন করার জন্য।
কদমতলী বাস টার্মিনালে দূর পাল্লার বাসের হেলপার রফিক উল্লাহ ও সাইফুল অনেকটা হতাশার সুরে বলেন, ভাই আমাদের খবর (আমরা যারা গাড়ির শ্রমিক) কেউ নেয় না; গাড়ির চাকা ঘুরলে আমাদের পরিবার চলে। দিনে যা আয় করি কোনো রকমে খেয়ে বেঁচে থাকতে পারি। একদিন গাড়ি না চললে আমাদের পরিবার চলে না, উপোস থাকতে হয়। পরিবারে বৌ–বাচ্চা দিয়ে খুব কষ্টে আছি।
গতকাল কদমতলী বাস আন্তঃজেলা বাস স্টেশন থেকে মাত্র ৫২টি গাড়ি বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে বলে জানান আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতির সচিব মনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, স্বাভাবিক সময়ে এখান থেকে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে ১১০ থেকে ১১৫টির মতো বাস ছাড়ে। বিআরটিসি–স্টেশন রোড এবং গরিবুল্লাহ শাহ মাজার গেইট, অলংকার মোড়, কর্নেলহাটসহ অন্যান্য এলাকা থেকে প্রতিদিন ৭০০ গাড়ি ছেড়ে গেলেও গতকাল শনিবার মাত্র ২৫০টির মতো গাড়ি ছেড়ে গেছে। এসব গাড়িতে তেমন যাত্রী ছিল না বলে জানান মনোয়ার হোসেন।