এখনো বেহাত কয়েক হাজার কোটি টাকার ভূমি

পতেঙ্গা-ফৌজদারহাট বেড়িবাঁদের ১৭ কিমি এলাকা । এসব ভূমি উদ্ধার করে জলবদ্ধতা নিরসনে ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে

হাসান আকবর | রবিবার , ১০ আগস্ট, ২০২৫ at ৬:৪০ পূর্বাহ্ণ

নগরীর পতেঙ্গা থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত বেড়িবাঁধের পাশে সরকারের কয়েক হাজার কোটি টাকা দামের ভূমি বেহাত হয়ে রয়েছে। এসব ভূমি উদ্ধার করে জলাশয় নির্মাণ, পর্যটন এলাকা গড়ে তোলা এবং খালগুলোর মাঝে ইন্টারলিংক তৈরি করা গেলে নগরীকে জলাবদ্ধতামুক্ত রাখতে বড় ধরনের ভূমিকা রাখতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মন্তব্য করেছেন। ইতোমধ্যে কিছু ভূমি উদ্ধার করা হলেও বিপুল পরিমাণ ভূমি এখনো বেহাত আছে।

সূত্র জানিয়েছে, পতেঙ্গা থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত উপকূলীয় বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য ষাটের দশক থেকে নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত কয়েকশ একর ভূমি হুকুমদখল করা হয়। পতেঙ্গা থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত প্রায় ১৭ কিলোমিটার এলাকায় ৬০০ ফুট করে ৭৬৮ একর ভূমি বেড়িবাঁধের জন্য নির্দিষ্ট করা হয়। পরে দফায় দফায় বেড়িবাঁধ নির্মাণ এবং সংস্কার করা হয়। অবশেষে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) বেড়িবাঁধের উপর পতেঙ্গা লিংক রোড নির্মাণ করে। এতে বেড়িবাঁধ একটি স্থায়ী আদল পায়। তৈরি হয় চট্টগ্রামের অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি রাস্তাও। এই রাস্তা ও বেড়িবাঁধ নির্মাণে কোথাও তিনশ ফুট, কোথাও চারশ ফুট এবং সর্বোচ্চ সাড়ে চারশ ফুট পর্যন্ত জায়গা ব্যবহৃত হয়েছে। মোট ৬শ ফুট প্রস্থের জায়গার মধ্যে কোথাও তিনশ ফুট, কোথাও দুইশ ফুট এবং কোথাও একশ ফুট জায়গা অব্যবহৃত রয়ে গেছে।

পতেঙ্গা লিংক রোড লাগোয়া কান্ট্রি সাইডের এসব জায়গা দামি হয়ে ওঠে। গড়ে দেড়শ ফুট করে জায়গা থাকলেও পতেঙ্গা থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত প্রায় ১৭ কিলোমিটার জায়গায় অন্তত দুইশ একর ভূমি বেহাত রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসব ভূমি ব্যক্তি মালিকানায় ব্যবহৃত হচ্ছে। এসব জায়গা দখল করে নানা ধরনের বেসরকারি স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে। ইতোমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড জেলা প্রশাসনের সহায়তায় প্রভাবশালীদের কবল থেকে বেশ কিছু ভূমি উদ্ধার করেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের অভিযানের পর বেহাত থাকা এসব ভূমি নিয়ে আলোচনা হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, হুকুমদখলকৃত ভূমিতে পতেঙ্গা লিংক রোড নির্মাণের পর অনেক ভূমি পাশে রয়ে গেছে। রাস্তার কারণে এগুলোর গুরুত্ব অনেক বেড়ে গেছে। উপকূলীয় এসব ভূমি সরকার চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনের ক্ষেত্রে কাজে লাগাতে পারে মন্তব্য করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শহরের অনেক খাল পতেঙ্গা লিংক রোডের কাছে গিয়ে সরু হয়ে গেছে। প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল রেগুলেটর দিয়ে পানি নিষ্কাশন করার চেষ্টা করা হয়। একটি খালের সাথে অপর খালের কোনো ইন্টারকানেকশন নেই। পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসব ভূমিতে অনায়াসে জলাশয় নির্মাণ জলাবদ্ধতার পানি ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি, খাল এবং ছড়াগুলোর মধ্যে আড়াআড়িভাবে ইন্টারকানেকশন করে জলাশয় সৃষ্টি করে মাছ চাষ, পর্যটন খাতের বিভিন্ন অবকাঠামো গড়ে তোলার সুযোগ রয়েছে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন বা পানি উন্নয়ন বোর্ড এক্ষেত্রে প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে পারে।

চট্টগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমাদের জায়গাগুলো অনেক মূল্যবান হয়ে উঠেছে। এগুলোতে অনেকেরই চোখ পড়েছে। কোটি কোটি টাকার এসব জায়গা বেহাত হয়ে রয়েছে। উদ্ধার করার মতো লোকবল কিংবা প্রশাসনিক সক্ষমতা না থাকার সুযোগ নিয়ে প্রভাবশালী বিভিন্ন চক্র এসব জায়গা ব্যবহার করছে। তিনি বলেন, আমরা জেলা প্রশাসনের সহায়তা নিয়ে কিছু ভূমি উদ্ধার করেছি। অনেক ভূমি এখনো বেহাত রয়েছে।

অপর একজন কর্মকর্তা জানান, বেহাত থাকা ভূমির দাম কয়েক হাজার কোটি টাকা হবে।

সিটি কর্পোরেশনের জলাবদ্ধতা নিরসনে বিভিন্ন ধরনের কাজ করছেন শাহরিয়ার খালেদ। গতকাল আজাদীকে তিনি বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিপুল পরিমাণ ভূমি বেহাত হয়ে রয়েছে। এসব ভূমি উদ্ধার করে জলাবদ্ধতা নিরসনের ক্ষেত্রে ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে। বিষয়টি সিটি মেয়রের মাধ্যমে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে জানানোর উদ্যোগ নেওয়ার কথাও জানান তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসেপ্টেম্বরে ৫ কোটি শিশু-কিশোর পাবে টাইফয়েডের টিকা
পরবর্তী নিবন্ধসীতাকুণ্ডে গাড়ি চাপায় পথচারীর মৃত্যু