৩৮ দিন আগে সম্পন্ন হয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) নির্বাচন। ইতোমধ্যে নির্বাচিত মেয়রও আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। অথচ এখনো চসিক নির্বাচনকে ইস্যু বানিয়ে সাংগঠনিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। গত একমাসে ইভিএম রেজাল্ট শিটের জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তাকে সময় বেঁধে দেয়া, নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে মামলার পাশাপাশি তিনটি বিভাগীয় শহরে সমাবেশও করেছে দলটি। এরই ধারাবাহিকতায় শীঘ্রই নগরেও বড় ধরনের সমাবেশ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। অনুষ্ঠেয় সমাবেশে চট্টগ্রামসহ দেশের ৬টি সিটি কর্পোরেশনে মেয়র পদে অংশ নেয়া দলীয় প্রার্থীদের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
সিএমপি সূত্রে জানা গেছে, নগরে সমাবেশ করার বিষয়টি গতকাল শনিবার সিএমপি’র নগর বিশেষ শাখার উপ-পুলিশ কমিশনারকে চিঠি দিয়ে অবহিত করা হয়েছে। এতে সমাবেশের সম্ভাব্য তারিখ ২০ মার্চ উল্লেখ করা হয়েছে। তবে ২৭ মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আরেকটি সমাবেশ করার কথা রয়েছে। সেক্ষেত্রে নির্বাচন ইস্যুতে ২০ মার্চের সমাবেশ এপ্রিলে আয়োজন করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন নগর বিএনপি’র আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন।
গতকাল সিএমপিতে দেয়া নগর বিএনপি’র সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, নির্বাচনে কারচুপির প্রতিবাদে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি দেশের ছয়টি কর্পোরেশন এলাকায় নগর সমাবেশ কর্মসূচির ঘোষণা করেছে। এর অংশ হিসেবে ২০ মার্চ চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি লালদীঘির পাড়স্থ জেলা পরিষদ চত্বর অথবা কাজীর দেউড়ি মোড়ে সমাবেশের আয়োজন করছে। সমাবেশে দলের কেন্দ্রীয়, মহানগর ও জেলা নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন।
নির্বাচন ইস্যুতে যেভাবে সক্রিয় : চসিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল গত ২৭ জানুয়ারি। এতে ৩ লাখ ৬৯ হাজার ২৪৮ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন রেজাউল করিম চৌধুরী। বিএনপি’র মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন ৫২ হাজার ৪৮৯ ভোট পেয়ে জামানত হারান। এমনকি সাধারণ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের বিজয়ী ৫৫ জন কাউন্সিলরের একজনও নেই দলটির।
নির্বাচন ইস্যুতে বিএনপি’র গত এক মাসের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, দলের প্রার্থী পরাজিত হলেও নিবাচনী ইস্যুতে থেমে নেই দলটি। প্রথম থেকেই নির্বাচনে বিভিন্ন অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ করে আসছে বিএনপি নেতারা। চসিক নির্বাচন বিএনপিকে অনেকটা সাংগঠনিক তৎপরতা বৃদ্ধির সুযোগ করে দিয়েছে।
ভোটগ্রহণের চতুর্থ দিন ৩১ জানুয়ারি ইভিএমের প্রিন্টেড ফলাফল দিতে না পারলে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে মামলা করার ঘোষণা দেন ডা. শাহাদাত হোসেন। একইসঙ্গে নির্বাচনের দিন প্রতি ঘণ্টায় ঘণ্টায় ভোট গ্রহণের পার্সেন্টিজ না জানানো এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের ‘মিথ্যা’ আশ্বাস দেয়ায় আরো দুইটি পৃথক মামলা করারও ঘোষণা দেন তিনি। একইদিন রিটার্নিং কর্মকর্তাকে ৭৩৩টি ভোটকেন্দ্রের ইভিএম প্রিন্টেড রেজাল্ট শিট সরবরাহের জন্য চিঠি দেন। এতে সাতদিন সময় দেয়া হয়েছিল।
পরবর্তীতে ২৪ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের প্রথম যুগ্ম জেলা জজ (নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল) খায়রুল আমিনের আদালতে বাদী হয়ে মামলা করেন ডা. শাহাদাত। এতে নির্বাচিত মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদাসহ ৯ জনকে বিবাদী করা হয়। আগামী ২১ মার্চ মামলাটির শুনানির তারিখ ধার্য্য আছে।
এর আগে গত ৪ ফেব্রুয়ারি রাজধানীতে সংবাদ সম্মেলন করে চসিক নির্বাচনে নানা অনিয়ম হয়েছে দাবি করে বিভাগীয় শহরে সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এর প্রেক্ষিতে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি বরিশাল, ২৭ ফেব্রুয়ারি খুলনা ও ২ মার্চ রাজশাহীতে সমাবেশ করে। মাঝখানে ১২ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামে সমাবেশ করার ঘোষণা দিলেও তা পিছিয়ে দেয়া হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নগর বিএনপি’র এক যুগ্ম আহ্বায়ক দৈনিক আজাদীকে বলেন, পরাজিত হলেও নির্বাচন ইস্যুেেত সাংগঠনিকভাবে বেশকিছু সুফল পেয়েছে বিএনপি। যেমন প্রচার-প্রচারণা, ওয়ার্ড পর্যায়ে সভা-সমাবেশ এবং গণসংযোগকে ঘিরে চাঙ্গা হয়েছে দলের কর্মীরা। মেয়র প্রার্থীর প্রধান নির্বাচনী ক্যাম্প করা হয় দলীয় কার্যালয়ে। ফলে প্রায় একমাস ধরে একটানা নেতাকর্মীদের পদচারণায় মুখর ছিল নাসিমন ভবন। যা তৃণমূলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ বৃদ্ধি করেছে। পরবর্তীতে নির্বাচনী ইস্যুতেও সক্রিয় আছে দল। একইভাবে সামনে যে সমাবেশ হবে সেটা ঘিরে নগরের ৪৩ সাংগঠনিক ওয়ার্ডের নেতাকর্মীদের প্রস্তুতি সভাসহ নানা তৎপরতা তৈরি হবে। এটা দলের জন্য ইতিবাচক।
ধারাবাাহিক কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে কি এটাই প্রমাণিত হচ্ছে চসিক নির্র্বাচন বিএনপি’র সাংগঠনিক তৎপরতা বৃদ্ধির সুযোগ করে দিয়েছে? এমন প্রশ্নে নগর বিএনপি’র আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত বলেন, চসিক নির্বাচনের পরপর আমরা বিভাগীয় শহরে সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছিলাম। তিনটি শহরে সমাবেশ করেছি। দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব না-সেটা সমাবেশ থেকে আমরা বার্তা দিচ্ছি। আমাদের দাবি, ভোট বাতিল করতে হবে। তিনি বলেন, ইভিএমের রেজাল্ট শিট দিতেই হবে। অন্যথায় ভোটে অনিয়ম হয়েছে সেটা স্বীকার করুক।