সময়টা ২০১৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর। সকাল দশটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী চত্বরে শ্রদ্ধা জানান ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক ভার্সিটি এক্সপ্রেস (ভিএক্স) ও চুজ ফ্রেন্ড উইথ কেয়ার (সিএফসি) দুই পক্ষ। শ্রদ্ধা জানিয়ে ফেরার পর এই দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এসময় ভিএক্স শাহজালাল হলে এবং সিএফসি শাহ আমানত হলে অবস্থান নেয়। এরমধ্যে প্রতিপক্ষের ছোঁড়া গুলিতে নিহত হন সিএফসি পক্ষের ছাত্রলীগকর্মী তাপস সরকার। দীর্ঘ সময় পরও এ হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়নি। আজও সন্তানের জন্য কাঁদছেন তাপসের মা। বিশ্ববিদ্যালয়ের কারো ফোন পেলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।ভাই হারিয়ে শোকাতুর জীবন কাটাচ্ছেন তাপসের ছোট ভাই শ্রাবণ। শ্রাবণ আজাদীকে বলেন, শুধু ১৪ ডিসেম্বর আসলে তাপসকে নিয়ে মাতামাতি হয়, এরপর সবাই ভুলে যায়। আমাদের সকল আশা শেষ। ভাইকে হারিয়ে বিবর্ণ জীবন কাটাচ্ছি। এখন একটাই চাওয়া,সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে ভাই হত্যার বিচার।
এক বুক আশা নিয়ে গ্রাম থেকে এসে ভর্তিযুদ্ধে জয়ী হয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পান তাপস। সংস্কৃত বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন তাপস। তাপসের গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলায়। তার বাবার নাম বাবুল সরকার। দিনমজুর বাবার পাঁচ সন্তানের মধ্যে তাপস তৃতীয়। ক্যাম্পাসে আসার পর সিএফসির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয় তাপস। কিন্তু রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের গুলি তাঁর স্বপ্ন ভেঙ্গে দেয়। গুলির আঘাতে ছিন্নভিন্ন হলো বুক। একরাশ স্বপ্ন নিয়ে পাঠানো তাপস লাশ হয়ে ফিরল মায়ের কাছে।
জানা যায়, হত্যাকাণ্ডের দিন রাতেই পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে অস্ত্র আইনে মামলা হয় হাটহাজারী থানায়। এতে অজ্ঞাতনামা ৬০ জনকে আসামি করা হয়। পরদিন রাতে হাটহাজারী থানায় হত্যা মামলা করেন তাপসের সহপাঠী হাফিজুল ইসলাম। এই মামলায় ৩০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ১৫ থেকে ২০ জনকে আসামি করা হয়। এতে ছাত্রলীগের সাবেক উপ-সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক আশরাফুজ্জামান ওরফে আশাকে একনম্বর আসামি করা হয়।
অপরদিকে, পুলিশের করা মামলায় আশরাফুজ্জামানকে দুই নম্বর আসামি করা হয়। হত্যার প্রায় দেড় বছর পর ২০১৬ সালের ২ মে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের ২৯ নেতাকর্মীর নামে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। ওই অভিযোগপত্রে বলা হয়, আশরাফুজ্জামানের ব্যবহার করা পিস্তলের গুলিতেই খুন হয়েছে তাপস। এরপর ২০১৭ সালের ৪ অক্টোবর চট্টগ্রামের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হেলাল উদ্দিনের আদালতে আত্মসমর্পণ করেন আশরাফুজ্জামান। ২০১৮ সালের শুরুর দিকে তিনি অস্থায়ী জামিন পান। এমামলায় বিভিন্ন সময়ে ১৫ জন গ্রেপ্তার হন। এই ১৫ জনও জামিনে আছেন। বাকিরা পলাতক। বর্তমানে মামলাটি বিচারাধীন। আসামিদের মধ্যে দুইজন এখনো ক্যাম্পাসে আছেন বলে জানা যায়। তাপসের সহপাঠী ও মামলার বাদী হাফিজুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, খুনিরা এখনও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ছয় বছর পার হলেও বিচার কাজ শেষ হয়নি। আদৌ বিচার হবে কিনা, তা নিয়েও সন্দিহান তিনি।
দ্রুত বিচার দাবি করে ছাত্রলীগের শাখা সভাপতি রেজাউল হক রুবেল আজাদীকে বলেন, দেশের অন্যান্য হত্যাকাণ্ডের বিচারের ন্যায় তাপস হত্যার দ্রুত বিচার চাই। অভিযুক্তদের বিচারের আওতায় না আনায় তারা প্রশ্রয় পেয়ে যাচ্ছে।