এখনই শুরু হোক পবিত্র রমজানের ইবাদতের প্রস্তুতি

ফখরুল ইসলাম নোমানী | শুক্রবার , ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ at ৫:৪২ পূর্বাহ্ণ

রমজান মাস হচ্ছে আল্লাহতায়ালার নৈকট্যলাভের বিশেষ মৌসুম। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই শুরু হতে যাচ্ছে পবিত্র মাহে রমজান। পশ্চিমাকাশে রমজানের চাঁদ উদিত হলেই আরম্ভ হবে এই মহিমান্বিত মাস। এই মাসে প্রত্যেক বালেগ ও সক্ষম মুসলিম নারীপুরুষের ওপর রোজা রাখা ফরজ। রাসুলুল্লাহ (সা.) রজব ও শাবান মাসব্যাপী এ দোয়া বেশি বেশি পড়তেন: আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজবা ওয়া শাবানা ওয়া বাল্লিগ না রমাদান। অর্থাৎহে আল্লাহ! রজব মাস ও শাবান মাস আমাদের জন্য বরকতময় করুন; রমজান আমাদের নসিব করুন। যেন আমরা রমজান মাস পেয়ে অধিক হারে ইবাদত বন্দেগি, রোজা, তারাবি, লাইলাতুল কদরের ইবাদত, ইতিকাফ ইত্যাদির মাধ্যমে পবিত্র রমজান মাসের ফজিলত লাভে ধন্য হই। মাহে রমজানের আগমনী বার্তা নিয়ে বিশ্ব মুসলিমের মাঝে হাজির হলো পবিত্র শাবান মাস। সর্বশ্রেষ্ঠ মাস রমজানের আগাম প্রস্তুতির তাগিদ ও শবে বরাতের উপহার নিয়ে এলো বরকতময় শাবান মাস। এ মাস বিশেষ মর্যাদা ও ফজিলতপূর্ণ। শাবান মাসের ফজিলত সম্পর্কে নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন রজব আল্লাহর মাস, শাবান আমার মাস এবং রমজান আমার উম্মতের মাস। শাবান মাসকে রমজান মাসের প্রস্তুতি ও সোপান মনে করে রাসূলুল্লাহ (সা.) বিশেষ দোয়া করতেন এবং অন্যদের তা শিক্ষা দিতেন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেছেন, নবী করিম (সা.) কখনো নফল রোজা রাখতে শুরু করলে আমরা বলাবলি করতাম তিনি বিরতি দেবেন না। আর রোজার বিরতি দিলে আমরা বলতাম যে তিনি মনে হয় এখন আর নফল রোজা রাখবেন না। আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) কে রমজান ব্যতীত অন্য কোনো মাসে পূর্ণ এক মাস রোজা পালন করতে দেখিনি। কিন্তু শাবান মাসে তিনি বেশি নফল রোজা রেখেছেন। অন্য একটি হাদিসে বর্ণিত আছে শাবান মাস ছাড়া অন্য কোনো মাসে রাসূলুল্লাহ (সা.) এত অধিক হারে নফল রোজা আদায় করতেন না। পবিত্র রজব মাস শেষ হওয়ার পর আকাশেবাতাসে বরকতময় শাবান মাসের আগমন। এখন থেকে ধর্মপ্রাণ ও খোদামুখী বান্দারা পবিত্র রমজান মাসে প্রবেশের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে।

একজন মুমিনের কাছে রমজান বছরের শ্রেষ্ঠ মাস। মহানবী (সা.) এ পবিত্র মাসকে বেশ গুরুত্ব দিতেন। অন্যান্য কাজকর্ম থেকে নিজেকে গুটিয়ে অধিক পরিমাণে ইবাদতে মশগুল হতেন। সাহাবিদের অভ্যাসও ছিল একই রকম। গুরুত্ব বিবেচনায় রমজানের প্রস্তুতিও শুরু হতো বেশ আগে থেকেই। রজব মাসের চাঁদ দেখার পর থেকেই মহানবী (সা.) অধীর আগ্রহে রমজানের অপেক্ষা করতেন। রমজান পর্যন্ত হায়াত পাওয়ার দোয়া করতেন। আর এখন চলছে পবিত্র শাবান মাস। তাই এখনই সময় রমজানের আগাম প্রস্তুতি সেরে নেওয়ার। শাবান মাসের বিশেষ আমল সমূহের মধ্যে অন্যতম হলোবেশি বেশি নফল রোজা পালন করা। মাস জুড়ে প্রিয় নবি (সা.) এর নিয়মিত আমল প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার রোজা পালন করা। এছাড়া শুক্রবারসহ এমাসেও আইয়ামে বিজের রোজা অর্থাৎ চান্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ নফল রোজা পালন করা। রোজা রাখার পাশাপাশি এ মাস জুড়ে নফল নামাজ বেশি বেশি আদায় করা। বিশেষ করে তাহাজ্জুদ, ইশরাক, চাশ্‌তদোহা, জাওয়াল, আওয়াবিন, তাহিয়াতুল মসজিদ, দুখুলুল মসজিদ ইত্যাদি নামাজের ব্যাপারে যত্নবান হওয়া খুবই জরুরি। আর সব সময় প্রিয় নবি করিম (সা.) এর শেখানো দোয়াটি পড়া আমাদের জন্য একান্ত কর্তব্য। হযরত উসামা বিন যায়েদ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন আমি নবী করিম (সা.) কে জিজ্ঞেস করলাম হে আল্লাহর রাসূল! আপনাকে শাবান মাসে অন্যান্য মাস অপেক্ষা বেশি নফল রোজা রাখতে দেখি। এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন রজব ও রমজানের মধ্যবর্তী এ মাস অনেকেই খেয়াল করে না। এটি এমন একটি মাস যে মাসে মানুষের সব কর্মকাণ্ড আল্লাহর সামনে উপস্থাপন করা হয়।

হযরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) বর্ণিত একটি হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন আল্লাহতাআলা মধ্য শাবানের রজনীতে তার সৃষ্টির (বান্দাদের) প্রতি দৃষ্টি দেন এবং সবাইকে ক্ষমা করে দেন তবে তারা ব্যতীত যারা আল্লাহর সঙ্গে কাউকে অংশীদার সাব্যস্ত করে এবং অপরকে ক্ষতি সাধনের বাসনা পোষণ করে। শাবান মাসে শবে বরাত নামে বিশেষ একটি রজনী আছে যে রজনীতে বান্দার সারা বছরের আমল আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয় এবং আগামী এক বছরের জন্য বান্দার হায়াত, মউত, রিজিক, দৌলত ইত্যাদির নতুন বন্দোবস্ত দেওয়া হয়। যে কারণে শাবান মাসকে এত বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। এ মাসে মুসলমানদের আমলআখলাক যেন সুন্দর হয় রাসূলুল্লাহ (সা.) সে দিকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছেন। শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত ১৫ তারিখের রাতকে ‘শবে বরাত’ বলা হয়। শবে বরাত কথাটি ফারসি। শব মানে রাত বারাআত মানে মুক্তি; শবে বরাত অর্থ মুক্তির রাত। শবে বরাতের আরবি হলো ‘লাইলাতুল বারাআত’ তথা মুক্তির রজনী। এ রাতে ইবাদত করা ও দিনে রোজা রাখা সুন্নত। হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন ১৫ শাবানের রাত (১৪ তারিখ দিবাগত রাত) যখন আসে তখন তোমরা তা ইবাদতবন্দেগিতে কাটাও এবং পরদিন রোজা রাখো।

শাবান মাস ইবাদতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়। নফল রোজা, নফল নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, দরুদ শরিফ, জিকির আজকার, তাসবিহতাহলিল, দোয়াকালাম, দানসদকাহ খয়রাত, ওমরাহ হজ ইত্যাদির মাধ্যমে এই মাসকে সার্থক ও সাফল্যময় করা যায়। রমজানের প্রস্তুতি মানে ইবাদতের প্রস্তুতির। তাই এই মাস থেকেই ইবাদতের পরিমাণ বাড়াতে হবে অন্যদেরও নেক আমলে উৎসাহিত করতে হবে। রমজানের শেষ দশকে রয়েছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আমল ইতিকাফ। পূর্ব থেকেই তার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। এজন্য ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের আজ থেকেই রমজানের প্রস্তুতি শুরু করা উচিত। সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত শাবান মাস জুড়ে নিজেদের ইবাদত বন্দেগিতে নিয়োজিত রাখা। এভাবে পরিকল্পনার আলোকে যদি আমরা মাহে রমজান মাস অতিবাহিত করতে পারি তাহলেই এই মাসের পরিপূর্ণ হক আদায় হবে এবং রোজার প্রকৃত ফজিলত অর্জিত হবে। নেক কাজের পরিকল্পনাও একটি নেক কাজ। তাই আসুন রমজানের শুরুতে রমজানকে বরণ করে নেওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করি। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সেই তাওফিক দান করুন। আমিন!

লেখক : ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভালোবাসা কী -আদৌ কি আমরা তা জানি!
পরবর্তী নিবন্ধশবে বরাত : তাৎপর্যমণ্ডিত রাত