আধুনিক পেপার মেশিন ঢেলে যাচ্ছে বিটুমিনযুক্ত কাঁচামাল। সেই মেশিন আবার চেপেও যাচ্ছে। ইট-বালির সড়ক মুহূর্তেই কালো কার্পেটিংয়ে পাল্টে যাচ্ছে। এমন দৃশ্য দেখা গেছে ফটিকছড়ি পৌর সদরের বিবিরহাট এলাকায়। এভাবে পাল্টে যাচ্ছে উত্তর চট্টগ্রামের চিত্র। দৃশ্যমান হচ্ছে সম্প্রসারিত হাটহাজারী-ফটিকছড়ি-খাগড়াছড়ি আঞ্চলিক মহাসড়কের ৩২.৫ কিলোমিটার সড়ক। ২০১৯ সালে শুরু হওয়া মহাসড়কের উন্নয়ন কাজটি চলতি অর্থ বছরেই শেষ হবে বলে আশা করছেন সড়ক ও জনপদ বিভাগের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা। সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ইস্টার্ন বাংলাদেশ ব্রিজ ইম্প্রুভমেন্ট প্রজেক্ট (ইবিবিআইপি)-এর আওতায় সড়কটির উন্নয়নকাজ শুরু হয় ২০১৯ সালে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ও র্যাব আরসি লিঃ এই উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ করছে। প্রকল্পের অধীনে বিদ্যমান ১৮ ফুট প্রস্থের সড়কটি সম্প্রসারিত হয়ে ৩৪ ফুটে উন্নীত হচ্ছে। হাটহাজারী বাস স্টেশন জিরো পয়েন্ট থেকে শুরু হয়ে নাজিরহাট-ফটিকছড়ি শেষ সীমান্তে খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি সীমান্ত আর্মি ক্যাম্প পর্যন্ত ৩২ দশমিক ৫০ কিলোমিটার সড়কটি তিন লেনে উন্নীত করা হচ্ছে। নির্মিত হচ্ছে ৩০৮ মিটারের ৩৮টি আরসিসি কালভার্ট। মোট ৪টি প্যাকেজে এ কাজ সম্পন্ন হচ্ছে। এর মধ্যে প্যাকেজ-১ এর আওতায় হাটহাজারী থেকে সরকারহাট বাজার পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার সড়ক ও ৯টি কালভার্টের জন্য প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৯১.৮৭ কোটি টাকা।
প্যাকেজ-২ এর আওতায় সরকারহাট থেকে নাজিরহাট পর্যন্ত ৮ কি. মি সড়ক ও ১৩টি কালভার্টের জন্য প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৭.৯৩ কোটি টাকা। প্যাকেজ-৩ এর আওতায় নাজিরহাট-বিবিরহাট পর্যন্ত ৮ কি. মি সড়ক ও ১১টি কালভার্টের জন্য প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৭.৩৬ কোটি টাকা। প্যাকেজ-৪ এর আওতায় বিবিরহাট-আর্মি ক্যাম্প চেকপোস্ট নয়া বাজার পর্যন্ত ৮.৫ কি.মি সড়ক ও ৫টি কালভার্টের জন্য প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৩.৩১ কোটি টাকা। সড়ক-বাঁধ প্রশস্ত করতে ব্যবহার হচ্ছে ৬ লাখ ৪৬ হাজার ৫০৫ দশমিক ৬ ঘনমিটার মাটি।
হাটহাজারী-খাগড়াছড়ি মহাসড়কের এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে উত্তর চট্টগ্রামের মানুষের যাতায়ত ক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ লাগব হবে বলে মনে করছেন ফটিকছড়ি পৌরসভার মেয়র ইছমাইল হোসেন। তিনি আরো বলেন, উত্তর চট্টগ্রামে হাটহাজারী-ফটিকছড়ি সড়কটি দীর্ঘদিন অবহেলিত ছিল। বর্তমান সরকার সড়কটি উন্নয়ন করে চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়কে যানজট হলে বিকল্প সড়ক হিসেবে হাটহাজারী-খাগড়াছড়ি হয়ে ঢাকা এবং একইভাবে কম সময়ের মধ্যে ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি-ফটিকছড়ি-হাটহাজারী হয়ে চট্টগ্রাম যাতায়াত করা সম্ভব হবে।
নাজিরহাট পৌরসভার মেয়র সিরাজ-উদ-দৌল্লা বলেন, এই সড়কের উন্নয়নের ফলে চট্টগ্রামের সঙ্গে ফটিকছড়ি-খাগড়াছড়ির যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন আসবে। ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, মানিকছড়ি এলাকায় কৃষিভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে। কৃষি পণ্য পরিবহনও বাজারজাতকরণ সজহ হবে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান র্যাব আরসি লিঃ এর প্রকল্প ম্যানেজার মনিরুজ্জামান জানান, চারটি প্যাকেজের মধ্যে তিনটি আমাদের প্রতিষ্ঠান বাস্তবায়ন করছে। আমরা প্রকল্পের সিংহভাগ কাজ সম্পন্ন করেছি। কিন্তু করোনা ও লকডাউনের কারণে আমাদের তুলনামূলক বিল দিতে পারেনি সওজ। তাই আমরা এখন জরুরি অংশগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে প্রকল্পের কাজ পরিচালনা করছি। এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপদ বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী শাহরিয়ার কামাল বলেন, প্রকল্পের সব কালভার্ট শেষ হয়েছে। এখন সড়কে কার্পেটিংয়ের কাজ চলছে। নয়া বাজার আর্মি ক্যাম্প থেকে কার্পেটিং সম্পন্ন হয়ে এখন ফটিকছড়ি বিবিরহাট সদরে চলছে। প্রকল্প এলাকায় বিদ্যুৎ বিভাগের কাজগুলো দ্রুত সম্পন্ন হলে আশা করি এই অর্থবছরেই আমরা সড়কের কাজ শেষ করতে পারবো।