এক স্ট্যান্ডে এত স্যালাইন!

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ১৪ নভেম্বর, ২০২২ at ৭:২৫ পূর্বাহ্ণ

দুটি শয্যার মাঝখানে একটি স্ট্যান্ড। তাতে অনেকগুলো স্যালাইন ঝুলানো। ছড়িয়ে ছিটিয়ে নলগুলো ভাগ হয়ে গেছে শয্যায় শুয়ে থাকা কোমল হাতগুলোতে। এক শয্যায় চারজন শিশু রোগী। দুটি শয্যায় ৮ জন। এই ৮ জন রোগীর স্যালাইন ঝুলানো হয়েছে একটি স্ট্যান্ডে। নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা সময়ে সময়ে এসে রোগীর স্যালাইনে ইনজেকশন পুশ করেন। কিন্তু কোন রোগীর স্যালাইনে পুশ করবেন, তা খুঁজে পাওয়া ভার। অনেক চেষ্টায় সংশ্লিষ্ট রোগীর স্যালাইনটি খুঁজে বের করতে হয় তাদের।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের চিত্র এটি। রোগীর চাপে এই ওয়ার্ডে ঠাঁই নেই অবস্থা। শয্যা সংকটে এক শয্যায় চার থেকে পাঁচজন শিশুকে রেখে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে এখানে। শয্যার পাশাপাশি ওয়ার্ডে জায়গা সংকটেও হিমশিম অবস্থা বলে জানালেন চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান। মূলত জায়গা সংকটের কারণেই দুটি বেডের জন্য একটি স্ট্যান্ড দিয়ে স্যালাইন চালানো হচ্ছে বলে জানান তিনি।
হাসপাতালের পরিচালকের দাবি, বাধ্য হয়েই এক বেডে চারজন করে শিশুকে রাখতে হচ্ছে। কারণ হাসপাতালে আসা ৫ম পৃষ্ঠার ৭ম কলাম
কোনো রোগীকে ফিরিয়ে দেয়ার নিয়ম বা সুযোগ কোনোটাই আমাদের নেই। এখানে চিকিৎসা নিতে আসা বেশিরভাগই নিম্নবিত্ত পরিবারের। যাদের বেশিরভাগের বাইরে বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা খরচ মেটানোর সামর্থ্য নেই। যার কারণে তারাও অনেকটা বাধ্য হয়ে এখানে চিকিৎসা নিচ্ছে। আমাদেরও বাধ্য হয়ে এক বেডে ৪/৫ জন শিশু রোগীকে রাখতে হচ্ছে।
তিনি জানান, প্রতিটি শিশুর সাথে মাসহ একাধিক এটেন্ডেন্ট থাকছে। এতে করে রোগীর এটেন্ডেন্টদের চাপেও ওয়ার্ড গিজগিজ করছে। পা ফেলার জায়গা থাকছে না। জায়গা সংকটের কারণেই দুটি বেডের জন্য একটি স্ট্যান্ড রেখে স্যালাইন দেয়া হচ্ছে। আর এক বেডে রোগী বেশি থাকায় স্যালাইনের সংখ্যাও বেড়েছে। নতুন অবকাঠামো না হলে এই জায়গা সংকট সহসা কাটবে না বলে মনে করেন তিনি।
শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, শিশু ওয়ার্ডের দুটি সাধারণ ইউনিটে শয্যা রয়েছে ৮৪টি। বিপরীতে প্রতিদিন রোগী ভর্তি থাকছে প্রায় চারশ। আর বিশেষ চারটি ইউনিটসহ বিভাগের মোট ১৩২ শয্যার বিপরীতে গত বেশ কিছুদিন ধরে প্রায় পাঁচশ শিশু রোগী চিকিৎসাধীন। হিসেবে শয্যার তুলনায় প্রায় চার গুণ বেশি শিশু রোগী ভর্তি থাকছে এই বিভাগে।
ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা বলছেন, পুরো হাসপাতালে দৈনিক আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার রোগী ভর্তি থাকে। এর মধ্যে কেবল শিশু স্বাস্থ্য বিভাগেই ভর্তি রোগীর সংখ্যা পাঁচশর কিছু কম-বেশি। হিসেবে হাসপাতালের মোট রোগীর এক পঞ্চমাংশই ভর্তি থাকছে শিশু স্বাস্থ্য বিভাগে। যদিও হাসপাতালে মোট ওয়ার্ড সংখ্যা ৪০টির কম নয়। দিন দিন রোগীর চাপ বাড়ায় শয্যা সংকট প্রকট হয়েছে শিশু বিভাগে।
শয্যা সংকটের কারণে বাধ্য হয়ে এক শয্যায় চার শিশুকে রেখে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে জানিয়ে শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. রেজাউল করিম আজাদীকে বলেন, গরিব-অসহায় পরিবারের শিশু রোগীদের চিকিৎসায় এই হাসপাতালই একমাত্র ভরসা। বৃহত্তর চট্টগ্রামের দূর-দূরান্ত থেকে শিশু রোগীদের এখানে নিয়ে আসা হয়। যার কারণে এখানে সবসময় রোগীর চাপ থাকে। এই সময়ে রোগীর চাপ অতিরিক্ত বেড়েছে। চাপ সামাল দিতে বিভাগের শয্যা সংখ্যা বাড়ানো জরুরি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসপ্তাহে দুদিন অফিস করেন প্রকল্প পরিচালক
পরবর্তী নিবন্ধলোহাগাড়ায় জনপ্রিয় হচ্ছে জৈব সার