দীর্ঘস্থায়ী বৃষ্টিপাতের কারণে চলতি মৌসুমে শঙ্খচরে শীতকালীন সবজি চাষাবাদে দুই মাস দেরি হয় কৃষকদের। পরে বৃষ্টিবাধা কাটিয়ে পুরোদমে সবজি চাষাবাদে নেমে পড়েন কৃষকরা। শঙ্খচরের সকল অনাবাদি জমি এখন বিভিন্ন প্রকারের সবজি ক্ষেতে ছেয়ে গেছে। কৃষকরা রাতদিন পরিশ্রম করছেন দ্রুত সবজি বাজারে তুলতে। ক্ষেতের পরিচর্যা, সার ও কীটনাশক প্রয়োগ এবং আগাছা পরিষ্কারে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। যাতে অল্প সময়ের মধ্যেই সবজি বাজারে তুলে ভালো দাম পেতে পারেন।
জানা যায়, গত মৌসুমে রবি শস্যসহ শীতকালীন সকল প্রকার সবজি মিলে প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জমিতে সবজির চাষাবাদ করেন কৃষকরা। চলতি মৌসুমে ৪ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে উপজেলা কৃষি অফিস। ইতিমধ্যেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে।
সরেজমিন শঙ্খচরে গিয়ে দেখা যায়, শঙ্খের চরে গত ১৫–২০ দিন আগেও যে সকল চাষযোগ্য জমি অনাবাদি পড়েছিল পরিবেশ অনুকূলে আসার সাথে সাথেই কৃষকরা চাষাবাদের আওতায় নিয়ে এসেছেন। নানা ধরনের শীতকালীন সবজিতে পুরো চরাঞ্চল ছেয়ে গেছে। সামনে আর কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার না হলে এক মাসের মধ্যেই ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিমসহ সকল প্রকার সবজি বাজারে তুলতে পারবেন। তবে ইতিমধ্যে মুলা, বেগুন, বরবটি, মিষ্টি লাউ, বাংলা লাউ, তিত করলা, শষা, ধনে পাতাসহ কয়েক প্রকারের সবজি বাজারে তুলেছেন।
বিস্তীর্ণ মুলা ক্ষেতের পরিচর্যা করার সময় কথা হয় শঙ্খচরের প্রবীণ কৃষক সাতকানিয়ার উত্তর কালিয়াইশের নুরুল ইসলাম নুরুর সঙ্গে। তিনি জানান, প্রতি মৌসুমে শঙ্খচরে প্রায় ৪৫০ শতক জমিতে বিভিন্ন প্রকারের শীতকালীন সবজির আবাদ করেন। আগাম শীতকালীন সবজি চাষাবাদ করতে গিয়ে বৃষ্টি বাধায় গত ২ মাসে কমপক্ষে ৮ লাখ টাকা লোকসান দিয়েছেন। বিশাল এ লোকসান কিভাবে পুষিয়ে উঠবেন তা তার জানা নেই, তারপরও তিনি ধারদেনা ও ঋণ নিয়ে চাষাবাদ করে যাচ্ছেন। বিগত ৩০ থেকে ৩৫ বছর ধরে শঙ্খনদের চরে চাষাবাদ করে যেমন লাভবান হয়েছেন তেমন লোকসানের ঘানিও টেনেছেন। প্রতি বর্ষায় বন্যা ও পাহাড়ি ঢলে লোকসান দিলেও কোনো ধরনের সরকারি সহায়তা এ পর্যন্ত পাননি। কারণ হিসেবে তিনি জানান, তারা শঙ্খনদের যে চরটিতে চাষাবাদ করেন তা পড়েছে সাতকানিয়া ও চন্দনাইশ উপজেলা সীমান্তের মধ্য বরাবর। তাই সাতকানিয়া ও চন্দনাইশ কৃষি অফিস থেকে কেউ এসে কখনো খোঁজও করেনি তারা কেমন আছে। তার মতো একই চরে চাষাবাদ করা মাহামুদুল হক মাহাদু, আবু বক্কর, মোজাম্মেল হক, মোস্তফা জামান, ওবাইদুল ইসলাম, আহমদ নবী, আবদুল আজিজ মুন্সি, মো. হাসান, জহুর আহমদ, আবু তৈয়ব, মোহাম্মদ খোরশেদসহ শত শত কৃষক প্রতি মৌসুমে লোকসান দিলেও তারাও কোনো সময় সরকারি সহায়তা পাননি বলে জানিয়েছেন।
বরবটি ক্ষেতে কীটনাশক প্রয়োগের সময় কৃষক মোহাম্মদ মারুফ জানান, চলতি মৌসুমে ২ থেকে ৩ বার লোকসান দিয়েছি। তারমধ্যে সবজি উৎপাদন খরচও বেড়েছে চলতি মৌসুমে। ৪০ শতক (এক কানি) জমিতে গত মৌসুমে উৎপাদন খরচ হয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। যা চলতি মৌসুমে ৫০ হাজার টাকা ছাড়িয়ে যাবে। তাই চলতি মৌসুমে উৎপাদন খচর তুলতে পারবেন কিনা তা নিয়েও সংশয়ে আছেন তারা। আগাম শীতকালীন সবজি বিক্রি করতে পারলেই তারা লাভবান হতেন বেশি।
দক্ষিণ চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় পাইকারি সবজি বাজার দোহাজারী রেলওয়ে ময়দান থেকে প্রতিদিন সবজি ক্রয়কারী পাইকারি ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী জানান, গত মৌসুমের এই সময়ে শঙ্খচরে উৎপাদিত শীতকালীন অন্যতম সবজি মুলা, বেগুন, শিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, বরবটি, মিষ্টি লাউসহ সবকিছুই পুরোদমে পাওয়া যেত। কিন্তু চলতি মৌসুমে এখনো পুরোপুরি সবজি পাওয়া যাচ্ছে না। যেগুলো পাওয়া যাচ্ছে তাও প্রতি কেজিতে গত মৌসুমের তুলনায় দ্বিগুন দামে কিনতে হচ্ছে। একইভাবে গত মৌসুমের তুলনায় চলতি মৌসুমে পরিবহন খরচও বেড়েছে। দোহাজারী থেকে দেড় টনা ট্রাকে এক ট্রাক সবজি চট্টগ্রামে নিতে ভাড়া গুনতে হচ্ছে ২২শ থেকে ২৩শ টাকা পর্যন্ত। যা গত মৌসুমে ছিল ১৭শ থেকে ১৮শ টাকা।
চন্দনাইশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আজাদ হোসেন জানান, গত ১৬ অক্টোবর থেকে শুরু হয়েছে রবি মৌসুম। তবে চলতি মৌসুমে আগাম শীতকালীন সবজির মধ্যে ইতিমধ্যে খরিপ–২ এর আওতায় চাষাবাদ করা কৃষকরা বৃষ্টিপাত দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। কৃষকরা যাতে সে ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারে তার জন্য মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের নানা পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।