করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউয়ে গত এক সপ্তাহে নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্ত বেড়েছে ৩৭ শতাংশ। এক সপ্তাহে মৃত্যু বেড়েছে ৪৮ শতাংশ।
তবে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ার মধ্যে চার দিন পর দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা নেমেছে ১০ হাজারের নিচে।
আজ শনিবার (১০ জুলাই) স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৮ হাজার ৭৭২ রোগী শনাক্তের খবর জানায়। বিডিনিউজ
গতকাল শুক্রবার শনাক্ত হয়েছিল ১১ হাজার ৩২৪ জন রোগী। তার আগের তিন দিনও এই সংখ্যা ১০ হাজারের উপরে ছিল।
শনিবার নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় রোগী শনাক্তের হার ছিল ৩১ দশমিক ৪৬ শতাংশ। শুক্রবার এই হার ছিল ৩০ দশমিক ৯৫ শতাংশ। আগের দিন ছিল ৩১ দশমিক ৬২ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, মহামারীর ২৫তম সপ্তাহের (৩ জুলাই-১০ জুলাই) চেয়ে ২৬তম সপ্তাহে (২৭ জুন-৩ জুলাই) রোগী শনাক্ত, মৃত্যু, সুস্থতা ও নমুনা পরীক্ষা সবই বেড়েছে।
এক সপ্তাহে শনাক্ত রোগী বেড়েছে ৩৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ, মৃত্যু বেড়েছে ৪৮ দশমিক ৬৬ শতাংশ। এই সময়ে নমুনা পরীক্ষা ১২ দশমিক ৩৯ এবং সুস্থতার হার ৩৭ দশমিক ৩৮ শতাংশ বেড়েছে।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গত বছর ৮ মার্চ; ৯ জুলাই তা ১০ লাখ ছাড়িয়ে যায়। ৮ জুলাই রেকর্ড ১১ হাজার ৬৫১ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ে।
গত এক দিনে আগের মতোই বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে ঢাকা বিভাগে ৪ হাজার ৪৯২ জন। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ৩০ দশমিক ৯৫ শতাংশ।
চট্টগ্রাম বিভাগে ১ হাজার ৬৯২, খুলনা বিভাগে ৭৭২, রাজশাহী বিভাগে ৬২০, সিলেট বিভাগে ৩৯৪, বরিশাল বিভাগে ২৮৪, রংপুর বিভাগে ২৭৮ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ২৪০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে।
জেলার হিসেবেও সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে ঢাকায় ৩ হাজার ৩৯৬ জন। তারপরে রয়েছে চট্টগ্রাম (৬০৩), কুমিল্লা (৩৭৫), সিলেট (২৯২), যশোর (২৫১), কক্সবাজার (২২৮), পাবনা (২০৪), টাঙ্গাইল (১৮৬), রাজবাড়ি (১৮২), কুষ্টিয়া (১৭৬), বরিশাল (১৭৬), ফরিদপুর (১৬৮), নোয়াখালী (১৬৪), খুলনা (১৬১), গোপালগঞ্জ (১৫৭), ময়মনসিংহ (১৫৪), দিনাজপুর (১৪২), গাজীপুর (১৩৬), রাজশাহী (১২৫), সিরাজগঞ্জ (১২১), নারায়ণগঞ্জ (১০০)।
সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কা সামলে বাংলাদেশে দৈনিক শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা কিছুটা কমে এসেছিল মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে।
কিন্তু করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ডেল্টার সামাজিক বিস্তার বা কমিউনিটি ট্রান্সমিশন ঘটায় জুনের শুরু থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সংক্রমণ ও মৃত্যু আবার বাড়তে শুরু করে।
ভাইরাসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে গত ৩০ জুন থেকে সারা দেশে জারি করা লকডাউনের বিধিনিষেধের মধ্যেই গত ৬ জুলাই প্রথমবারের মতো ১০ হাজার ছাড়িয়ে যায় শনাক্ত রোগীর সংখ্যা। সেদিন ১১ হাজার ৫২৫ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ে।
এরপর টানা তিন দিন ধরেই দৈনিক শনাক্ত ১১ হাজারের উপরে ছিল। এর আগে ৫ জুলাই ৯ হাজার ৯৬৪ জনের দেহে সংক্রমণ ধরা পড়েছিল।
তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, কঠোর লকডাউনের মধ্যে জুলাইয়ের প্রথম ১০ দিনেই আক্রান্ত হয়েছে ৯৬ হাজার ৫৭ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, দেশে এই মুহূর্তে সক্রিয় কোভিড রোগী রয়েছে প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার। অর্থাৎ শনাক্ত রোগীদের মধ্যে এ সংখ্যক এখন সংক্রমণ নিয়ে রয়েছেন।
সংক্রমণ দ্রুত ছড়ানোর জন্য ডেল্টা ধরন প্রধান নিয়ামক বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গঠিত জনস্বাস্থ্য পরামর্শক কমিটির কমিটির সদস্য ডা. আবু জামিল ফয়সাল।
তিনি বলেন, “এই ভ্যারিয়েন্টের (ডেল্টা) সংক্রমণক্ষমতা বেশি বলে আক্রান্তও হয়েছে বেশি। শহর ছাড়িয়ে সংক্রমণ এখন গ্রামেও ছড়িয়ে পড়েছে।”
লকডাউন দেওয়া হলেও তা কার্যকরভাবে বাস্তবায়নে সরকারের ‘কিছু বিষয়ে অবহেলা’ ও মানুষের মধ্যে বিধি না মানার প্রবণতাকে ‘সংক্রমণ দ্রুত বাড়ার’ কারণ হিসেবে তুলে ধরেন ডা. ফয়সাল।
তিনি আরো বলেন, “আমরা লকডাউন মানিনি। শুধু বাস ছাড়া সব যানবাহনই চলাচল করেছে। সবচেয়ে বেশি সমস্যা হলো, আমরা মাস্ক পরি না। ১০-১৫ শতাংশ মানুষ হয়ত মাস্ক পরেছে। আবার সরকার কঠোরভাবে বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারল না। সমন্বয়হীনতা, পরিকল্পনার অভাব রয়েছে। আগ্রহের অভাব রয়েছে। এত কিছুর অভাব থাকলে কীভাবে হবে।?”
বাংলাদেশ এই মুহূর্তে সংক্রমণের চূড়ায় অবস্থান করছে বলে মনে করেন ডা. ফয়সাল। আগামী সপ্তাহখানেক বাড়ার পর সংক্রমণ কিছুটা কিছুটা কমতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
ডেল্টা ধরনে আক্রান্ত হলে ‘লক্ষণ-উপসর্গ’ তেমন দেখা না যাওয়ায় সংক্রমণ নিরবে দ্রুত ছড়াচ্ছে বলে মনে করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের সাবেক ডিন ডা. এবিএম আবদুল্লাহ।
সংক্রমণ ঠেকাতে স্বাস্থ্যবিধি মানার পাশাপাশি সবাইকে টিকা নেওয়ার পরামর্শও দেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত এই চিকিৎসক।
তিনি বলেন, “এই দুইটা ছাড়া উপায় নাই। কারণ ডেল্টার পরেও যে আরও কোনো নতুন ধরন আসবে না তা বলা যায় না।”