চট্টগ্রাম বন্দরে থেমে নেই মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানি। মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানি ঠেকাতে জরিমানা বাড়ানোর পরেও নিত্য নতুন কৌশলে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে পণ্য আসছে। অভিযোগ রয়েছে, মিথ্যা ঘোষণায় আসা আমদানি পণ্য খালাসে সহায়তা করে থাকে কিছু অসাধু কাস্টমস কর্মকর্তা। মাঝে মাঝে কিছু চালান জব্দ হয়, কিন্তু তারচেয়ে কয়েকগুণ বেশি পণ্য চালান বন্দর থেকে খালাস হয়ে যায়। তবে কাস্টমস কর্মকতারা বলছেন, কাস্টমসের অডিট ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড রিসার্চ (এআইআর) শাখার তৎপরতার কারণে আগের চেয়ে মিথ্যা ঘোষণার আমদানি চালান কমেছে।
চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহের মধ্যে মিথ্যা ঘোষণায় আসা দুটি আমদানি নিষিদ্ধ পণ্যের চালান শনাক্তের তথ্য জানিয়েছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এরমধ্যে পাকিস্তান থেকে পাখির খাদ্য ঘোষণায় দুই কন্টেনার (২৪ হাজার ৯৬০ কেজি) আমদানি নিষিদ্ধ পপি সিড বা পোস্তা দানা নিয়ে আসে নগরীর কোরবানিগঞ্জের মেসার্স আদিব ট্রেডিং। চালানটি ছাবের আহমেদ টিম্বার কোম্পানি লিমিটেডের অফডকে রাখা ছিল। গত মাসের ৯ অক্টোবর চালানটি বন্দরে পৌঁছায়। পরবর্তীতে ১৪ অক্টোবর নগরীর হালিশহরের শান্তিবাগের সিএন্ডএফ এজেন্ট এমএইচ ট্রেডিং পণ্য খালাসের জন্য বিল অব এন্ট্রি দাখিল করে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খালাস কার্যক্রম স্থগিত করার পর ডিপো কর্তৃপক্ষ ও সিএন্ডএফ প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে ২২ অক্টোবর কায়িক পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় দেখা যায়, কন্টেনারের ‘বার্ড ফুড’ বা পাখির খাদ্য সাজিয়ে রাখা হলেও তার পেছনে ২৪ হাজার ৯৬০ কেজি পপি সিড বা পোস্তা দানা লুকানো ছিল। এতে আরও ৭ হাজার ২০০ কেজি বার্ড ফুড পাওয়া যায়। পণ্যের নমুনা সংগ্রহ করে উদ্ভিদ সংগনিরোধ দপ্তর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যানোপ্রযুক্তি সেন্টার ও খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ল্যাবে পাঠানো হয়। পরীক্ষার প্রতিবেদনে একটি নমুনা পপি সিড হিসেবে শনাক্ত হয়।
অপরদিকে গত সোমবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, রাজধানীর আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এসপি ট্রেডার্স চীন থেকে পলিঅ্যালমুনিয়াম ক্লোরাইড ঘোষণায় ৩৯ টন আমদানি নিষিদ্ধ ঘনচিনি বা সোডিয়াম সাইক্লামেট আমদানি করে। এসব পণ্য খালাসের জন্য আমদানিকারকের প্রতিনিধি নগরীর জুবলি রোডের সিএন্ডএফ এজেন্ট সি বার্ড কর্পোরেশন গত ৭ অক্টোবর বিল অব এন্ট্রি দাখিল করেন। তবে পণ্য চালানটি খালাসের জন্য ট্রাকের লোড করা হলে গোপন সংবাদের খালাস কার্যক্রম স্থগিত করে। পরবর্তীতে গত ২৮ অক্টোবর সিএন্ডএফ প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে কায়িক পরীক্ষা করা হয়। কায়িক পরীক্ষায় দুই ধরণের দেখতে পান কাস্টমস কর্মকর্তারা। পণ্যের নমুনা উত্তোলন করে চট্টগ্রাম কাস্টমসের ল্যাবে পাঠানো হয়। রাসায়নিক পরীক্ষায় ঘোষণা অনুযায়ী ২৪ টন পলিঅ্যালমুনিয়াম ক্লোরাইড এবং বাকি ৩৯ টন পণ্যকে ঘনচিনি হিসেবে নিশ্চিত করেন রাসায়নিক পরীক্ষকরা।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম কাস্টমসের উপ–কমিশনার এইচ এম কবির জানান, মিথ্যা ঘোষণায় আসা পণ্যের চালান ঠেকাতে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ সব সময় সতর্ক রয়েছে। ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার আওয়তায় অনেক চালান আলাদাভাবে নজরদারিতে রাখা হয়। সরকারি রাজস্ব সুরক্ষায় আমরা সব সময় বদ্ধপরিকর।










