এক লাখ ৩৬ হাজার কিশোরীকে এইচভিপি টিকা দিবে চসিক

জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধে মাসব্যাপী টিকাদান কার্যক্রম শুরু আজ

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ২৪ অক্টোবর, ২০২৪ at ৮:০১ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামসহ দেশের সাত বিভাগে (ঢাকা ব্যতীত) কিশোরীদের জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধে বিনামূল্যে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) টিকাদান কর্মসূচি শুরু হচ্ছে আজ বৃহষ্পতিবার। ক্যাম্পেইনে ৬২ লাখ ১২ হাজার ৫৩২ জন কিশোরীকে এইচপিভি টিকা দেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

এর মধ্যে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) ব্যবস্থাপনায় নগরে বিদ্যালয় ও বিদ্যালয় বহির্ভূত কিশোরীদের ১ লাখ ৩৬ হাজার টিকা দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। একইভাবে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে চট্টগ্রাম জেলার ১৫ উপজেলার ৪ হাজার ৩৮৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৩৩০ জন কিশোরী এবং স্কুল বহির্ভূত কমিউনিটির ১০ হাজার ২১৯ জন কিশোরীকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৫ম৯ম শ্রেণীর ছাত্রীরা টিকা পাবে। কেউ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে টিকা নিতে অসমর্থ হলে তারা স্থায়ী কেন্দ্রে টিকা নিতে পারবে। এছাড়া স্থায়ী কেন্দ্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বহির্ভূত ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী কিশোরীরাও টিকা গ্রহণ করতে পারবে।

এদিকে নগরে এইচপিভি টিকা ক্যাম্পেইন উপলক্ষে গতকাল সকালে চসিক জেনারেল হাসপাতালে সংবাদ সম্মেলন করে সিটি কর্পোরেশন। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, ভারপ্রাপ্ত প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ ইমাম হোসেন রানা। উপস্থিত ছিলেন সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. তপন কুমার চক্রবর্তী, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোঅর্ডিনেটর ডা. মো. সরওয়ার আলম ও ইউনিসেফ কনসালটেন্ট ডা. প্রসূন রায়।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, কিশোরী ও মাতৃমৃত্যু হার কমানোর লক্ষ্যে মাসব্যাপী জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরাধে টিকার প্রথম ডোজের কার্যক্রম আজ বৃহষ্পতিবার শুরু হবে। এর আওতায় নগরের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যায়নরত ৫ম থেকে ৯ম শ্রেণি পড়ুয়া ছাত্রীদের ১০ দিন এই টিকা দেয়া হবে। পরবর্তীতে চসিকের ৪১টি ওয়ার্ডে স্থায়ী ও অস্থায়ী টিকাদান কেন্দ্রে ৮ দিন ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী বিদ্যালয় বহির্ভূত কিশোরীদের টিকা প্রদান করা হবে। জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধে এইচপিভি টিকার একটি ডোজই যথেষ্ট। এই টিকা বিশ্বব্যাপী পরীক্ষিত নিরাপদ ও কার্যকর। এ বছর সরকারি উদ্যোগে বিনামূল্যে এই টিকা প্রদান করা হবে। বক্তাগণ রাজনৈতিক, সামাজিক, পেশাজীবী, ক্লাব সংগঠন ও মসজিদের ইমাম এবং মন্দিরের পুরোহিতদের এইচপিভি টিকার গুরুত্ব তুলে ধরার আহ্বান জানান।

সংবাদ সম্মেলনে কোনো কিশোরী যাতে টিকা গ্রহণে বাদ না পড়ে সেদিকে সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিকতার সাথে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানানো হয়। কারণ এইচপিভি টিকা কিশোরী মাতৃমৃত্যুর ঝুঁকি হ্রাস করে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বছরে বিশ্বের প্রায় ছয় লাখ নারী জরায়ুমুখ ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। যার মধ্যে তিন লাখ মৃত্যুবরণ করেন। বাংলাদেশে বছরে আক্রান্ত হন ৮ হাজার ২০০ জন, আর মারা যান ৪ হাজার ৯০০ নারী। দেশে নারীরা যত ধরনের ক্যান্সারে আক্রান্ত হন, তার মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ হচ্ছে জরায়ুমুখ ক্যান্সার। সাধারণত এই ভাইরাস দ্বারা সংক্রামিত হওয়া থেকে জরায়ুমুখ ক্যান্সারের লক্ষণ প্রকাশ পেতে ১৫২০ বছর সময় লাগে। এজন্য এই রোগকে নীরব ঘাতক বলা হয়। আক্রান্ত রোগীদের অধিকাংশই প্রায় শেষ পর্যায়ে শনাক্ত হন যখন রোগ থেকে সেরে ওঠা খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। কিশোরীদের নির্দিষ্ট বয়সে ১ ডোজ এইচপিভি টিকা প্রদান করলে এই ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব। গত বছর (২০২৩) ঢাকা বিভাগের প্রায় ১৫ লক্ষাধিক কিশোরীকে এক ডোজ এইচপিভি টিকা প্রদান করা হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনাসরাল্লাহর পর নিহত হিজবুল্লাহর পরবর্তী নেতা সাফিয়েদ্দিনও
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে আরও ৫৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত