চার দিনের সফরে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস আজ বৃহস্পতিবার ঢাকায় আসছেন। সফরকালে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের সময় তিনি মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে আসা এক লাখ রোহিঙ্গার সঙ্গে ইফতারে অংশ নেবেন, যেখানে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসও উপস্থিত থাকবেন। গতকাল বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক ব্রিফিংয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবের সফরসূচি তুলে ধরে এসব তথ্য দেন প্রধান উপদেষ্টার উপ প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার। খবর বিডিনিউজের।
তিনি বলেন, জাতিসংঘ মহাসচিব বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টায় ঢাকা আসবেন। রোববার–১৬ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশে অবস্থানের মধ্যে তার সফরের প্রধান কর্মসূচি শুক্র ও শনিবার (১৪ ও ১৫ মার্চ)। শুক্রবার তিনি প্রধান উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। আজাদ বলেন, এরপর ওইদিনই প্রধান উপদেষ্টাসহ জাতিসংঘ মহাসচিব রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে কক্সবাজার যাবেন। কক্সবাজারে প্রধান উপদেষ্টার আলাদা কিছু কর্মসূচি আছে। তিনি কক্সবাজার বিমানবন্দরের একটি প্রকল্প উদ্বোধন করবেন এবং একটি জলবায়ু উদ্বাস্তু কেন্দ্র পরিদর্শন করবেন। পাশাপাশি একটি মডেল মসজিদেরও উদ্বোধন করবেন। জাতিসংঘ মহাসচিব কক্সবাজারে নেমে সরাসরি চলে যাবেন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। যেখানে তিনি একটি ক্যাম্পে রোহিঙ্গা শিশুদের নিয়ে একটি ক্যাম্পেইন এবং রোহিঙ্গাদের পুষ্টি ও সহায়তার বিষয় নিয়ে একটি প্রেজেন্টেশন শুনবেন। এরপর রোহিঙ্গা কালচারাল সেন্টারে গিয়ে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা দেখবেন। এছাড়া তিনি কক্সবাজারের একটি লার্নিং সেন্টার পরিদর্শন করবেন।
এসব অনুষ্ঠান শেষে জাতিসংঘ মহাসচিব রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ইফতার করবেন, যেখানে প্রধান উপদেষ্টার উপস্থিত থাকার সূচি তুলে ধরে উপপ্রেস সচিব বলেন, আমরা আশা করছি, এক লাখ রোহিঙ্গা এই ইফতারে অংশ নেবেন। ইফতার আয়োজন করা হচ্ছে প্রধান উপদেষ্টার সৌজন্যে। এটি রোহিঙ্গাদের জন্য একটি ইউনিক এক্সপেরিয়েন্স হবে, যেখানে তাদের দুঃখ–কষ্টের মাঝে কিছুটা স্বস্তি মিলবে।
তিনি বলেন, তারা দুজন সেদিনই কক্সবাজার থেকে ফিরে আসবেন। পরদিন শনিবার মহাসচিব কর্মব্যস্ত দিন কাটাবেন। ঢাকায় জাতিসংঘের কার্যালয় পরিদর্শন করবেন। দুপুরে ঐকমত্য কমিশন এবং পরে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। সেদিনই সংবাদ সম্মেলনে আসবেন তিনি। এরপর প্রধান উপদেষ্টা তার সম্মানে ইফতার ও রাতের খাবারের আয়োজন করেছেন, সেখানে যোগদান করবেন আন্তোনিও গুতেরেস। পরদিন তিনি বাংলাদেশ ছেড়ে যাবেন।
ব্রিফিংয়ে প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, জাতিসংঘ মহাসচিবের এ সফর রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে বিশ্বনেতাদের নজর কাড়তে সহায়তা করবে। আমরা আশা করছি, এই সফর রোহিঙ্গাদের জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা এবং অগ্রগতির পথ উন্মুক্ত করবে। রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা অনেক কমে গেছে। আমরা আশা করছি জাতিসংঘ মহাসচিবের সফরের মাধ্যমে এই মানবিক সহায়তাগুলো জোগাড় করার ওপর একটি ভূমিকা রাখবে। তাদের পুষ্টি সহায়তা খুবই জরুরি।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য প্রতিমাসে প্রায় ১৫ মিলিয়ন ডলার আন্তর্জাতিক সহায়তার প্রয়োজন হয়। রোহিঙ্গাদের জন্য যে সহায়তা আসে সেটা যেন বন্ধ না হয়, তাতে যেন কোনও প্রভাব না পড়ে সে চেষ্টা চলছে। প্রেস সচিব বলেন, জাতিসংঘ সেপ্টেম্বরে রোহিঙ্গা বিষয়ে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজন করতে যাচ্ছে। ফিনল্যান্ড ও মালয়েশিয়া এতে কো–স্পন্সর হিসেবে যুক্ত হয়েছে। এ সম্মেলনের মাধ্যমে রোহিঙ্গা সমস্যার দ্রুত সমাধান হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পকে বলা হয় বিশ্বের সর্ববৃহৎ আশ্রয় শিবির। যেখানে বসবাস করছে ১২ লাখের বেশি মিয়ানমারের নাগরিক। প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘ মহাসচিবের সফর ঘিরে তাদের মধ্যে আশার আলো সঞ্চার হয়েছে।
আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জোবায়ের বলেন, মিয়ানমার ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের তাড়িয়ে দেয়ার পর ২০১৮ সালে বাংলাদেশে এসে জাতিসংঘের মহাসচিব আমাদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। এখন এই মাসের ১৪ তারিখ আবার তিনি আমাদের সঙ্গে দেখা করতে ক্যাম্প আসছেন শুনে খুব খুশি লাগছে। আন্তোনিও গুতেরেসকে একটা কথায় বলব, বাংলাদেশ আমাদের দেশ নয়, এই ক্যাম্পে আর দীর্ঘ সময় থাকতে চাই না। আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে স্বদেশ আরাকানে ফিরে যেতে চাই।
শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, জাতিসংঘের মহাসচিব বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উখিয়ায় পৌঁছাবেন। পরিদর্শনের সময় একটি ওয়াচ টাওয়ারে উঠে ক্যাম্পর বর্তমান চিত্র পর্যবেক্ষণ করবেন। এছাড়া জাতিসংঘের উদ্বাস্তু বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি), আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থাসহ (আইওএম) বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরাও সেবা কার্যক্রমের হালচাল তুলে ধরবেন। বিশেষ করে খাদ্য সহায়তা কমে আসা এবং খাদ্য সংকট তৈরি হওয়ার বিষয়টি বলা হবে। বিকেলে কুতুপালং ক্যাম্পে হেলিপ্যাডের কাছে একটি সেন্টারে রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতা, ধর্মীয় নেতা, শিক্ষক ও নারীদের সঙ্গে কথা বলবেন। পরে অংশ নেবেন লাখো রোহিঙ্গার সঙ্গে ইফতারে।