বৃহত্তর চট্টগ্রামের গ্যাস, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, বন্দর, জলাবদ্ধতা নিরসন, রাস্তাঘাট নির্মাণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ১ লাখ কোটিরও বেশি টাকা ব্যয়ে দুই শতাধিক প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। দেশের অর্থনীতির চেহারা পাল্টে দেওয়া, মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নসহ আর্থসামাজিক উন্নয়নে এসব প্রকল্প বড় ধরনের ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রামের উন্নয়নে নানা প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। বিশেষ করে বন্দর, বিদ্যুৎ, জ্বালানি এবং যোগাযোগের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনার কার্যক্রম চলছে। এসব কার্যক্রমের মাধ্যমে চট্টগ্রামের আবাসন, শিল্পায়ন ও পর্যটনের ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যেও বড় প্রভাব পড়বে।
কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে নির্মাণ করা হচ্ছে গভীর সমুদ্র বন্দর। প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের গভীর সমুদ্র বন্দরের অভাব ঘুচে যাবে। আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে এই বন্দর আগামী অন্তত একশ বছরের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে বলে সূত্রগুলো জানিয়েছে। মাতারবাড়ীতে বন্দরের পাশাপাশি ৬শ মেগাওয়াটের দুটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার এই দুটি কেন্দ্র দেশের বিদ্যুৎ সেক্টরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দরের মতো ১২শ মেগাওয়াটের এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রও জাপানের জাইকার সহায়তায় নির্মিত হচ্ছে।
প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধু টানেল। এই টানেল কক্সবাজারসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিস্তৃত এলাকার সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেবে। প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নগরীতে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মিত হচ্ছে। এতে শহরের যান চলাচলের ক্ষেত্রে গতি আসবে। চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প, কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন সম্প্রসারণসহ বহুমুখী প্রকল্প বাস্তবায়নের পাশাপাশি বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় ১৯৮টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ প্রকল্পগুলোতে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। ১ লাখ কোটি টাকারও বেশি অর্থ ব্যয়ে বাস্তবায়িত দুই শতাধিক প্রকল্প চট্টগ্রামের সার্বিক উন্নয়নকে ভিন্ন উচ্চতায় নিয়ে যাবে বলে সংশ্লিষ্টরা মন্তব্য করেছেন।
চট্টগ্রামের উন্নয়নের ব্যাপারে মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের সাবেক পরিচালক এবং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (অ্যাডমিন অ্যান্ড প্ল্যানিং) মোহাম্মদ জাফর আলম বলেন, মাতারবাড়ী বন্দর দেশকে ভিন্ন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।
বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার হারুনুর রশীদ বলেন, নির্দিষ্ট সময়ে এই টানেল দিয়ে গাড়ি চলাচল শুরু করার লক্ষ্য নিয়েই আমরা অগ্রসর হচ্ছি। এই টানেল চট্টগ্রামকে চীনের সাংহাইয়ের মতো ওয়ান সিটি টু টাউনের মর্যাদা দেবে।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চিফ ইঞ্জিনিয়ার কাজী হাসান বিন শামস বলেন, চট্টগ্রামের উন্নয়নে বহু প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বেড়িবাঁধ কাম আউটার রিং রোড নির্মাণ, জলাবদ্ধতা নিরসনসহ নানা ক্ষেত্রে কাজ করছে সিডিএ। সরকার চট্টগ্রামের উন্নয়নে অকাতরে সহায়তা করেছে।
প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি ড. মইনুল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রামে যেসব উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে সেগুলো বাস্তবায়িত হলে মানুষের জীবনযাত্রার মানে বড় ধরনের ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এসব প্রকল্প জিডিপিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তবে প্রকল্পগুলো যাতে অনিয়ম ও দীর্ঘসূত্রতার কবলে না পড়ে সেদিকে সজাগ থাকার জন্য তিনি সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান।