এক রানের জয়ে কুমিল্লার তৃতীয় শিরোপা

বিপিএলের রূদ্ধশ্বাস ফাইনাল

ক্রীড়া প্রতিবেদক | শনিবার , ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৮:১৯ পূর্বাহ্ণ

পারলেন না সাকিব। পারল না বরিশাল। তিনবার বিপিএলের ফাইনালে উঠেও একবারও শিরোপা জিততে পারল তারা। তাই এবারের আসরে শিরোপা জয়ের লক্ষ্যে সেরা দল গড়েছিল বরিশাল। সাকিবের চোখেমুখেও ছিল সেই স্বপ্ন। কিন্তু স্বপ্ন পূরণ হলো না। আরো একবার ফাইনালে গিয়েও ফিরতে হলো খালি হাতে। অপরদিকে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স তিনবার ফাইনালে গিয়ে প্রতিবারই জিতেছে শিরোপা। গতকাল মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ফাইনালে বরিশালকে ১ রানে হারিয়ে শিরোপা জিতে নেয় কুমিল্লা। সাকিব, গেইল, ব্রাভোরা পারলেন না মঈন আলি, ডুপ্লেসিস, সুনিল নারাইন, মোস্তাফিজদের সাথে। উল্লাসে মাতা হলো না সাকিবদের। ক্ষণে ক্ষণে রং বদলানো ফাইনাল ম্যাচে শেষ হাসিটা হাসল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।
ম্যাচের শুরুতে নারাইন ঝড়। দ্বিতীয় ভাগে সৈকত ঝড়। আবার দুদলের বোলারদের লাগাম টানার চেষ্টা। শেষ ওভারের পর শেষ বলের নাটক। সবকিছুকে ছাপিয়ে শেষ পর্যন্ত শিরোপা জয়ী দলটির নাম কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।
টস জিতে ব্যাট করতে নামা কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের ওপেনার সুনিল নারাইন রীতিমত ঝড় তোলেন। আগের ম্যাচে চট্টগ্রামের বোলারদের কচু কাটা করা নারাইন গতকাল আরো বেশি আগ্রাসী ছিলেন বরিশালের বোলারদের উপর। নারাইনের সৌজন্যে প্রথম দুই ওভারে ৩৬ রান তুলে নেয় কুমিল্লা। তৃতীয় ওভারে বল হাতে আসেন সাকিব আল হাসান। ওভারের শেষ বলে লিটন দাসকে বোল্ড করলে ভাঙে ৪০ রানের উদ্বোধনী জুটি। লিটন ৬ বলে ৪ রান করে ফেরেন। অপর প্রান্তে ঝড় অব্যাহত রাখেন নারাইন। সাকিব আল হাসানের দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলে তিন রান নিয়ে পূর্ণ করেন হাফ সেঞ্চুরি। আগের ম্যাচে ১৩ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করা নারাইন গতকাল করেন ২১ বলে। ষষ্ঠ ওভারে মেহেদি হাসান রানার বলে একেবারে সীমানায় নাজমুল হোসেন শান্তর হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন নারাইন। আউট হওয়ার আগে ২৩ বলে ৫টি চার আর ৫টি ছক্কার সাহায্যে ৫৭ রান করেন এই ক্যারিবীয়ান। নারাইন আউট হওয়ার পর রানের গতি যেমন কমে আসে তেমনি উইকেটও হারাতে থাকে কুমিল্লা। ৭ম ওভারে মাহমুদুল হাসান জয় রান আউট হন দলীয় ৭৩ রানে। এরপর ফাফ ডু প্লেসিস ৭ বলে ৪ আর ইমরুল কায়েস ১২ বলে ১২ রান করে ব্রাভোর শিকার হয়ে ফিরলে ১০ ওভারে ৯৪ রানে ৫ উইকেট হারায় কুমিল্লা। ১১তম আরিফুল ইসলাম রানের খাতা খোলার আগেই ফিরে এলে আবু হায়দার রনিকে সঙ্গে নিয়ে বিপর্যয় সামাল দেন মঈন আলী। এই দুই ব্যাটার ৭ম উইকেটে গড়েন ৫৪ রানের জুটি। শেষ দিকে মঈন আলী ৩২ বলে ৩৮ রান করে রানআউট হয়ে ফিরেন। আর রনি ২৭ বলে ১৯ রান করে শফিকুলের বলে আউট হন। আর তাতে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৫১ রান সংগ্রহ করে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। বরিশালের হয়ে দুটি করে উইকেট নেন মুজিব উর রহমান এবং শফিকুল ইসলাম। একটি করে উইকেট নিয়েছেন সাকিব আল হাসান, ডুয়েন ব্রাভো এবং মেহেদি হাসান রানা।
১৫২ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দ্বিতীয় ওভারেই ইনফর্ম মুনিম শাহরিয়ারকে হারায় বরিশাল। রানের খাতা খোলার আগেই শহীদুলের বলে ডু প্লেসিসের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন মুনিম। এরপর গেইলের সাথে জুটি বাধেন সৈকত আলি। গেইলকে দর্শক বানিয়ে ব্যাট হাতে ঝড় তুলতে থাকেন সৈকত আলি। দ্বিতীয় উইকেটে দুজন মিলে ৭৪ রান যোগ করলেও সেখানে সৈকত আলির অবদান ৩৪ বলে ৫৮ রান। যেখানে ১১টি চার আর একটি ছক্কা মেরেছেন সৈকত। এজুটি ভাঙ্গার পর খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেন ক্রিস গেইল। কিন্তু পারেননি স্বরূপে ফিরতে। ৩১ বলে একটি চার দুটি ছক্কার সাহায্যে ৩৩ রান করে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরেন গেইল। এরপর নুরুল হাসান সোহানের সাথে যোগ দেন সাকিব। কিন্তু অধিনায়ক পারলেন না দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে। ৭ রান করে ফিরলেন সাকিব। শান্তকে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন সোহান। কিন্তু তিনিও পারলেন না দলকে জয়ের কিনারায় নিয়ে যেতে। ১৪ রান করে সোহান ফেরার পর দ্রুত ফিরেন ডুয়াইন ব্রাভোও। বল আর রানের ব্যবধান প্রায় সমান হলেও ম্যাচটা যেন কঠিন হয়ে যাচ্ছিল বরিশারের জন্য। শেষ ১২ বলে যখন ১৬ রান দরকার তখন ১৯ তম ওভারে বল হাতে নেন মোস্তাফিজ। ওভারের দ্বিতীয় বলে শান্তকে এলবিডব্লিউ করে ফেরান কাটার মাস্টার। চাপ আরো বাড়ে বরিশাল শিবিরে। শেষ ওভারে বরিশালের জয়ের জন্য দরকার পড়ে ১০ রানের। শহীদুলের করা প্রথম বল থেকে কোনো রান নিতে পারেননি তৌহিদ হৃদয়। দ্বিতীয় বলে নেন এক রান। তৃতীয় বলে মুজিব নেন এক রান। চতুর্থ বলটি ওয়াইড হলে তিন বলে সমীকরণ দাঁড়ায় ৭ রানের। চতুর্থ বলে ২ রান নেন তৌহিদ। পঞ্চম বলে ক্যাচ তুলে দিয়েও বেঁচে যান তৌহিদ। সে বলে নেন দুই রান। শেষ বলে তিন রানের সমীকরণ। কিন্তু তৌহিদ হৃদয় এক রানের বেশি নিতে পারেননি। আর তাতেই ১ রানের জয়ে বিপিএলের তৃতীয় শিরোপা জিতে নেয় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে করোনা সংক্রমণের হার ৪.৩৬ শতাংশ
পরবর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা