এক যুগেও পূর্ণতা পায়নি বাকলিয়া স্টেডিয়াম

ক্রীড়া প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার , ১৪ জানুয়ারি, ২০২১ at ৭:০০ পূর্বাহ্ণ

মাঠের এক পাশে বস্তি, যা ক্রমশ চলে আসছে মাঠের দিকে। আরেক পাশে ঘাস, যা বনে রূপ পেয়েছে। বাকি যেটুকু রয়েছে তাতে চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ময়লা আবর্জনা। আর তার মধ্যে চলছে বাধাহীন খেলাধুলা। মাঠের দক্ষিণ প্রান্ত থেকে সদর্পে লোকজন চলে আসে অপর প্রান্তে। মাঠে দিব্যি চড়ছে ছাগল আর হাস মুরগি। আবার মাঠের একপ্রান্তে শাক, সবজির ক্ষেত খামার করে ভালই দিন কাটাচ্ছে বস্তিবাসী। শুধু তাই নয় মাঠের আরেকপাশে নলকুপ বসিয়ে চলছে গোসল কিংবা কাপড় চোপড় ধোয়ার কাজও। এই হচ্ছে নগরীর বাকলিয়া স্টেডিয়ামের বর্তমান চিত্র। অথচ নগরীর মাঠ সংকট কাটাতে ২০০৮ সালে তৎকালীন সিটি মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী কর্ণফুলী নদীর তীরে এই বাকলিয়া স্টেডিয়াম নির্মাণের পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। কিন্তু একযুগ পার হয়ে গেলেও আলোর মুখ দেখেনি সেই বাকলিয়া স্টেডিয়াম। এখনো পাড়া গায়ের কোন অরক্ষিত মাঠ হিসেবেই পড়ে আছে স্টেডিয়ামটি। অথচ এটি হতে পারতো দেশের অন্যতম সুন্দর একটি স্টেডিয়াম। নদীর একেবারে তীর ঘেষে গড়ে উঠা স্টেডিয়ামটি দর্শনীয় এক স্টেডিয়ামে পরিণত হতে পারতো। কর্ণফুলীর তীর ঘেষে গড়ে উঠা এই স্টেডিয়ামটি শহরের এক পাশে হলেও যেকোন জায়গা থেকে একেবারেই কাছে। তাছাড়া রাস্তাঘাটও এখন বেশ প্রশস্থ। কিন্তু কোন অদৃশ্য কারণে স্টেডিয়ামটি পূর্ণতা পায়নি তার সদুত্তর মেলেনি কারো কাছ থেকে। সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর আমলে প্রায় তিন একর জায়গা ক্রয় করা হয় একটি স্টেডিয়াম নির্মাণের জন্য। পরবর্তীতে সাবেক মেয়র মনজুর আলমের আমলে মাঠে মাটি ভরানো এবং একপাশে গ্যালারির মত করে শেড নির্মাণের কাজ করা হয়। এরপর এই মাঠে সিটি কর্পোরেশনের বেশ কিছু অনুষ্ঠান এবং কিছু খেলাধুলাও করা হয়। কিন্তু সময় গড়ানোর সাথে সাথে যেখানে স্টেডিয়ামটি পূর্ণতা পাওয়ার কথা সেখানে কাজ এগুয়নি মোটেও। যদিও সদ্য সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের আমলে মাঠের কিছু ড্রেনেজ সিস্টেমের কাজ করা হয়েছে। কিন্তু মাঠটি মোটেও খেলার উপযোগী করে গড়ে তোলা যায়নি। তার উপর মাঠের দক্ষিণ পাশের সীমানা দেওয়ালও ভেঙে পড়েছে অনেক আগে।
গতকাল বুধবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেল যেন পরিত্যক্ত একটি জায়গা পড়ে আছে। আর সেখানে খেলার চেষ্টা করছে ছেলেরা। মাঠের মাঝখানে নির্মাণ করা হচ্ছে ক্রিকেটের জন্য উইকেট। আর সেটি করছে ব্রাদার্স ক্রিকেট একাডেমি। একাডেমির কোচ মোমিনুল হক জানালেন মাঠের যে অংশটুকু পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে সেটা তারা নিজেরা ঘাস কেটে পরিষ্কার করেছে। এরপর কিছু মাটি দিয়ে রোলিং করে মাঠটাকে কিছুৃটা হলেও খেলার উপযোগী করে তুলেছে। তিনি জানান, প্রতিদিনই তাদের একাডেমির ছেলেরা এই মাঠ পরিষ্কারের কাজ করে। মাঠের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে ক্রিকেট নেটে অনুশীলন করছে ছেলেরা। বিকেলে আরেকদল ছেলে হকি অনুশীলন করে। কেউবা ফুটবল খেলে। কিন্তু স্টেডিয়ামটির মাঠের যা অবস্থা তা মোটেও খেলাধুলার উযোগী নয়। তারপরও ঝুঁকি নিয়ে খেলছে ছেলেরা। মোমিনুল হক জানান, নদীর এপার এবং ওপার, দুই পারের ছেলেরা এসে এখানে অনুীশলন করছে। কিন্তু মাঠ সমান না হওয়ায় ইনজুরিতে পড়ার ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে। তারপরও আমরা যতটুকু পারছি মাঠটাকে ঠিক করে খেলাধুলা করার চেষ্টা করছি। অথচ এই স্টেডিয়ামটিতে অনেকগুলো ইভেন্ট করা যাবে।
একযুগেও কেন স্টেডিয়ামটি পূর্ণতা পেলনা তেমন প্রশ্নের জবাবে দীর্ঘ সময় ধরে সিটি কর্পোরেশনের ক্রীড়া বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির দায়িত্ব পালন করা সাবেক কাউন্সিলর মোহাম্মদ ইসমাইল জানান, বারবার চেষ্টা করা হয়েছে স্টেডিয়ামটিকে পূর্ণতা দেওয়ার জন্য। ধাপে ধাপে কিছু কিছু কাজ হয়েছে। কিন্তু সবকাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। যদিও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের আমলে জিডিএফ ফান্ডের আওতায় ৩৭ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছিল। হয়তো সেটি পাশও হয়ে গেছে। আর সেটি পাওয়া গেলে স্টেডিয়ামটিকে পরিপূণূ একটি স্টেডিয়ামে পরিণত করা যাবে। মাঠের একপাশে গড়ে উঠা বস্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সে জায়গাটুকু রয়েছে সেগুলো কিছু জায়গা সিটি কর্পোরেশনের, কিছু জায়গা খাস, আবার কিছু জায়গা মানুষ দখল করে ঘরবাড়ি, স্কুল, কলেজ তৈরি করে ফেলেছে। কিছু জায়গা নিয়ে মামলা চলছে। যেকারণে পূর্ব পাশে সীমানা প্রাচীর দিতে পরেনি সিটি কর্পোরেশন। এদিকে স্টেডিয়ামের পূর্ব পাশের পুরোটা বস্তি থাকায় সেটি স্টেডিয়ামের সৌন্দর্য এবং নিরাপত্তা দুটোই ব্যাহত করছে বলে মনে করছেন এলাকার মানুষ। চারপাশে বস্তি আর অরক্ষিত থাকায় স্টেডিয়ামে মাদক সেবনসহ নানা অপরাধমূলক কাজ সংগঠিত হয় বলেও জানিয়েছেন একাধিক এলাকাবাসী। অথচ মাঠ সংকটের এই সময়ে স্থানীয় এবং জাতীয় পর্যায়ের অনেক খেলাধুলা এই স্টেডিয়ামে হতে পারতো। যদিও স্টেডিয়ামটিকে একটি পরিপূর্ণ স্টেডিয়াম করার সব ধরনের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু কেন কোন অদৃশ্য শক্তির কারণে তা হয়ে উঠেনি তার কোন সদুত্তর মেলেনি কারো কাছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবড়পুকুরিয়া খনির সাবেক ছয় এমডিসহ ২২ জন কারাগারে
পরবর্তী নিবন্ধকাস্টমসে ৪০ টন কাপড় আটক