মহেশখালী উপজেলার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পরিত্যক্ত ঘোষণার পর দীর্ঘ এক যুগ পেরিয়ে গেলেও নানা জটিলতায় পুনর্নির্মাণ হয়নি আদালত ভবনটি। জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত সরকারি ডাকবাংলোর সংকীর্ণ জায়গায় যেনতেনভাবে চলছে আদালতের কার্যক্রম। ফলে বিচারক, আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের পোহাতে হচ্ছে সীমাহীন ভোগান্তি। উপকূলীয় দীপাঞ্চলের সাধারণ জনগণের বিচারপ্রাপ্তি সহজলভ্য ও জেলা সদরের সাথে নদী পাড়ি দিয়ে আদালত সংশ্লিষ্ট কার্যাদি সম্পাদনে ঝুঁকিপূর্ণ যাতায়াত থেকে পরিত্রাণ পেতে জরুরি ভিত্তিতে মহেশখালীতে পরিত্যক্ত আদালত ভবনটি পুনঃনির্মাণের দাবি জানিয়েছেন দ্বীপবাসী।
জানা গেছে, ১৯৮৪ সালে স্থাপিত হয় মহেশখালী উপজেলা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনটি। ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের ঘূর্ণিঝড়ে আদালত ভবনটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ১৯৯৯ সালের ২২ জুলাই ভূমিকম্পে ভবনের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় ফাটল দেখা দেয়। এরপর ভবনটি একাধিকবার সংস্কার করা হলেও তা কাজে আসেনি। এতে সামান্য বৃষ্টি হলেই ভবনের ছাদ চুইয়ে বিভিন্ন কক্ষে পানি পড়ে জরুরি কাগজপত্র নষ্ট হতো। বিচারকসহ কর্মকর্তাদের কাজ করতে হতো ঝুঁকি নিয়েই। এ অবস্থায় ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে কক্সবাজার গণপূর্ত বিভাগের তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজকে চিঠি দেন। জেলা ও দায়রা জজ বিষয়টি আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে জানালে মন্ত্রণালয় মহেশখালী জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের কার্যক্রম কক্সবাজার জেলা সদরে স্থানান্তর করার পরামর্শ দেয়।
এদিকে মহেশখালী জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের কার্যক্রম কক্সবাজারে স্থানান্তর না করে মহেশখালীতে বিকল্প তিনটি সরকারি ভবনে স্থানান্তরের দাবি জানিয়েছিলেন আইনজীবীসহ বিচারপ্রার্থীরা। অন্যদিকে এ ব্যাপারে উক্ত আদালতের আইনজীবী এড. আবু তালেব উচ্চ আদালতে রিট আবেদন দায়ের করার প্রেক্ষিতে আদালতের কার্যক্রম জেলা সদরে স্থানান্তরিত হয়নি। তৎপরবর্তী সময় ২০১৫ সাল থেকে মহেশখালী সরকারি ডাকবাংলাতে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের কার্যক্রম চলে আসছে।
এড. নুরুল আলম বলেন, বিচারকের আবাসিক ব্যবস্থা না থাকা ও আদালত ভবন পুনঃনির্মিত না হওয়ায় মহেশখালীতে বিচারিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। ফলে বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ে জেলা সদরে আদালতের শরণাপন্ন হতে হয়। এতে মহেশখালী উপকূলীয় এলাকার আইনজীবীসহ বিচারপ্রার্থীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। একজন বিচারপ্রার্থী কিংবা আসামি মাত্র ২০০ টাকা খরচ করে মহেশখালী আদালতে এসে মামলায় হাজিরা দিচ্ছেন। কিন্তু বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ে কক্সবাজার সদরে যাতায়াত ও আনুষঙ্গিক খাতে একেকজন বিচারপ্রার্থীসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির খরচ পড়বে হাজার টাকার বেশি। সময়ের অপচয়ও হবে প্রচুর। তাই দুর্গম যোগাযোগের উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর স্বার্থে মহেশখালীর আদালত ভবনটি জরুরি ভিত্তিতে পুনঃনির্মাণ করা অত্যন্ত প্রয়োজন।
আদালতের এডভোকেট ক্লার্ক নিলয় রফিক জানান, বিপুল সংখ্যক মামলার কারণে আদালতে প্রতিদিন ভিড় থাকে। দূর–দূরান্ত থেকে সেবা নিতে আসা মানুষজন ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে বাধ্য হন। বৃষ্টি হলে পড়তে হয় আরও ভয়াবহ দুর্ভোগে। স্থানীয় সেবাপ্রার্থী আলী হোসেন অভিযোগ করে বলেন, আদালতের যে কয়েকটি ওয়াশরুম আছে, সেগুলো সবসময় তালাবদ্ধ থাকে। ফলে বিচারপ্রার্থীরা ভীষণ ভোগান্তিতে পড়ে।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ওমর ফারুক জানান, আমাদের বড় দুর্ভাগ্য হলো বিচার বিভাগের জন্য বরাদ্দকৃত বাজেট মাত্র ২ শতাংশ। অথচ বিভিন্ন প্রশাসনিক ভবন নির্মাণে ব্যয় হয় প্রায় ৪৭ শতাংশ। এ বৈষম্য দীর্ঘদিনের পুরোনো সমস্যা হিসেবেই রয়ে গেছে। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, জরুরি ভিত্তিতে মহেশখালী আদালত ভবনের কাজ শুরু না হলে দ্বীপাঞ্চলের প্রান্তিক মানুষের বিচারপ্রাপ্তির পথ আরও সুদূরপরাহত হয়ে উঠবে।