এক মোবাইলের জন্য ছুরির ১৬ আঘাত

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ২২ মার্চ, ২০২১ at ৬:৪০ পূর্বাহ্ণ

টার্গেট তাদের দামি মোবাইল ফোন ছিনতাই। আর এ কাজে তারা এতটাই নৃশংস যে খুন করতেও পিছপা দ্বিধা করত না। নগরীতে এমনই এক নৃশংস ছিনতাইকারী গ্রুপের ৭ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। তারা হলেন- মো. জাহিদ হোসেন, মো. সুমন ওরফে বিল্লা, মো. অন্তর, মো. আশরাফুল, মো. রাহাত, মো. শাহিন ও মো. মানিক হোসেন।
গত বৃহস্পতিবার (১৯ মার্চ) রাতে সিফাত নামে এক কলেজ ছাত্রের মোবাইল ছিনতাই ও ছুরিকাঘাতের তদন্ত করতে দিয়ে নগর গোয়েন্দা পুলিশ এ গ্রুপের খোঁজ পায়। সিফাতের কাছ থেকে মোবাইল ছিনতাই করতে গিয়ে তার শরীরে ১৬টি ছুরির আঘাত করা হয়। উপর্যপুরি ছুরিকাঘাতে আহত কলেজ ছাত্র সিফাত বর্তমানে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে রয়েছেন। এ ঘটনায় সিফাতের ভাই ফরহান হোসেন বাদী হয়ে খুলশী থানায় মামলা দায়ের করেন। মহানগর হাকিম হোসেন মোহাম্মদ রেজার আদালতে তাদের হাজির করা হলে গ্রেপ্তারকৃত জাহিদ ও মানিক ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন। এছাড়া বাকি পাঁচজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার শাহ মোহাম্মদ আবদুর রউফ আজাদীকে জানান, অভাবের সংসারে একটু স্বচ্ছলতার আশায় ৬ মাস আগে নগরীর একটি জুতার দোকানে খণ্ডকালীন কাজ নেন কলেজ ছাত্র সাফায়েত হোসেন সিফাত। ১৮ মার্চ রাত সাড়ে ৮টার দিকে দোকান থেকে পায়ে হেঁটে টাইগারপাস রেলওয়ে কলোনিতে ফিরছিলেন তিনি। মোবাইলে কথা বলতে বলতে হাঁটছিলেন। বাটালি হিল সংলগ্ন ফুটপাতে তার পথরোধ করে জাহিদ ও বিল্লা। মোবাইল টান দিলে সেটি হাত থেকে পড়ে যায়। জাহিদ সেটা তুলে নিতে গেলে সিফাত তাকে জাপটে ধরে। তখন জাহিদ তাকে ছোরা দিয়ে আঘাত করে। এরপরও জাহিদকে ছাড়েনি সে। তখন জাহিদ মোবাইল ও ছোরা ছুঁড়ে দেয় বিল্লাকে। বিল্লা সেগুলো নিলে সিফাত জাহিদকে ছেড়ে দিয়ে তাকে জাপটে ধরে। তখন বিল্লা এলোপাথাড়ি ছুরিকাঘাত করে। সিফাত পড়ে গেলে দু’জন মোবাইল ও ছোরা নিয়ে চলে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় সিফাতকে দুইজন পথচারী চমেক হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন। সিফাত এখন চমেক হাসপাতালের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইনসেনটিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন আছেন। ইতোমধ্যে তাকে ৬ ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনো জ্ঞান ফিরেনি।
ঘটনার পরপরই অভিযানে নামেন জানিয়ে এডিসি রউফ জানান, শুরুতে এই গ্রুপের চার সদস্যকে আটক করা হয়। তাদের নিয়ে শুরু হয় ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত ছুরি উদ্ধারের অভিযান। পুকুর থেকে উদ্ধার হয় সিফাতকে আঘাত করা সেই ছুরি।
আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে জাহিদ জানান, মোবাইল ছিনিয়ে নিতে প্রথমে তিনি সিফাতকে দুই থেকে তিনটি ছুরিকাঘাত করেন। পাশে থাকা সুমন ওরফে বিল্লা আরও কয়েকবার ছুরিকাঘাত করে মোবাইল ছিনিয়ে নেয়। এ দু’জন সরাসরি অংশ নিলেও অন্তর, আশরাফ ও রাহাত পাহারায় ছিলেন। আটক মানিক ও শাহিন মোবাইলের লক খোলা ও ছিনতাই হওয়া মোবাইলের ক্রেতা। গত কয়েক মাসে এক হাজারের বেশি ছিনতাই করা মোবাইলের ডাটা ফ্ল্যাশ করেছে ওই দুই টেকনিশিয়ান। ছিনতাইয়ের পর ছুরিটি ডবলমুরিং থানার দেওয়ানহাট সিএসডি গোডাউন সংলগ্ন পরিত্যক্ত পুকুরে ফেলে দিয়েছিলেন তাদের অপর সহযোগী হৃদয়। সেখান থেকে ছুরিটি উদ্ধার করা হলেও হৃদয় পলাতক। তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবেড়েছে শনাক্তের হার
পরবর্তী নিবন্ধপোল্ট্রি খামারের বর্জ্যে শঙ্খে দূষণ