এক মাসেই শনাক্ত বেড়েছে ৬৮ গুণ

টিকা নিলেও মাস্ক পরা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ৩১ জানুয়ারি, ২০২২ at ৬:২৩ পূর্বাহ্ণ

গত বছরের ডিসেম্বর মাসে চট্টগ্রামে সব মিলিয়ে ২৪০ জনের করোনা শনাক্ত হয়। আর চলতি জানুয়ারির ৩০ দিনে শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৪৮৫ জনে। হিসেবে ডিসেম্বরের তুলনায় জানুয়ারিতে শনাক্তের সংখ্যা ৬৮ গুণ বেশি। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে করোনা সংক্রমণ ৬৮ গুণ বেড়েছে চট্টগ্রামে। চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, জানুয়ারি মাস জুড়ে দৈনিক গড়ে ৫৫০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে চট্টগ্রামে। অবশ্য, ডিসেম্বরের শেষ সময় থেকে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে। জানুয়ারির প্রথম দিনে শনাক্তের হার ছিল ১ শতাংশের নিচে, যা ১৫ জানুয়ারি বেড়ে দাঁড়ায় ১২ শতাংশে। এর দশ দিনের মাথায় ২৪ জানুয়ারি শনাক্তের হার ৪০ শতাংশে ঠেকে। সামপ্রতিক সময়ে শনাক্তের এ হার (৪০ শতাংশ) ছিল সর্বোচ্চ। অবশ্য, এরপর থেকে শনাক্তের হার পর্যায়ক্রমে কমছে। সর্বশেষ ৩০ জানুয়ারি শনাক্তের হার নেমেছে ২৭ শতাংশে। ডিসেম্বরের তুলনায় জানুয়ারিতে সংক্রমণ অনেক বেশি জানিয়ে সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলছেন, সংক্রমণ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার কারণ হিসেবে টিকা গ্রহীতাদেরও দোষ রয়েছে। করোনার টিকা গ্রহণের পর মানুষের মাঝে এক ধরনের বেপরোয়া ভাব দেখা যাচ্ছে। তারা স্বাস্থ্যবিধি মানা তো দূরের কথা, মাস্কটিও ঠিক মতো মুখে রাখছেন না। তাদের ধারণা, টিকা নেওয়ায় ভাইরাস তাদের আর আক্রান্ত করবে না। বিশেষ করে এই কারণেই টিকা গ্রহীতারা বেপরোয়াভাবে চলাফেরা করছেন। যার কারণে ব্যাপক হারে সংক্রমণের বিস্তার ঘটছে।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য বলছে, গত বছর চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ সংক্রমণের মাস ছিল জুলাই। ওই মাসে ২৩ হাজার ১৯৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়। পরের মাস আগস্ট থেকে সংক্রমণ কমতে থাকে। আগস্টে শনাক্তের সংখ্যা ছিল ১৭ হাজার ৩৮২ জন। সেপ্টেম্বরে শনাক্ত কমে দাঁড়ায় ২ হাজার ৩৮৩ জনে। অক্টোবরে শনাক্ত হয় ৫০৬ জন। তবে গত বছর সবচেয়ে কম শনাক্ত হয় নভেম্বরে। নভেম্বরে মাত্র ১৬৮ জনের করোনা শনাক্ত হয় চট্টগ্রামে। তবে ডিসেম্বর থেকে সংক্রমণ ফের বাড়তে শুরু করে। মোট ২৪০ জন শনাক্ত হয় শেষ ডিসেম্বরে। জানুয়ারিতে শনাক্তের এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজারের বেশি। আরো একদিন বাকি থাকায় জানুয়ারিতে শনাক্তের সংখ্যা ১৭ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে। এদিকে চলতি মাসের ৩০ দিনে চট্টগ্রামে ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
করোনার ওমিক্রন ধরনের বিস্তার ঘটে যাওয়ায় সংক্রমণ বেড়েছে বলে মনে করেন চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালের উদ্যোক্তা ও প্রধান নির্বাহী ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া। তিনি বলেন, ভাইরাসের এ ধরন অন্যান্য ধরনের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি সংক্রামক। খুব বেশি দ্রুত ছড়ায়। যা ইতোমধ্যে ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়েছে। অর্থাৎ সামাজিক সংক্রমণ ঘটে গেছে। যার ফলে টেস্ট করলেই পজিটিভ পাওয়া যাচ্ছে।
তিনি বলেন, গত ২/১ দিনে শনাক্তের হার কিছুটা কমছে বৈকি। তবে সার্বিকভাবে সংক্রমণ কমছে বলার সময় এখনো আসেনি। টিকা নিলেও অবশ্যই মাস্ক পরার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
সংক্রমণ বাড়লেও আক্রান্ত সবাইকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হচ্ছে না জানিয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী বলেন, আগে সংক্রমণ বাড়লেই পরিস্থিতি নাজুক হয়ে পড়ত। তবে এখন আক্রান্ত হলেও রোগীরা আগের মতো গুরুতর অবস্থার সম্মুখীন হচ্ছেন না। জটিলতা কম দেখা যাচ্ছে। যার কারণে ঘরে থেকেই বেশিরভাগ রোগী সুস্থ হয়ে উঠছেন। এটি টিকা গ্রহণের বড় ধরনের সুফল। তবে যারা টিকা নেননি আক্রান্ত হলে তাদের ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। এজন্য সবাইকে টিকা গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবঙ্গোপসাগরে অবাধে হাঙ্গর শিকার
পরবর্তী নিবন্ধসিনহার হত্যাকারীদের ‘সর্বোচ্চ শাস্তি’ চান শিপ্রা