এক মহান বিজ্ঞানী

লিটন কুমার চৌধুরী | বুধবার , ৩ জুলাই, ২০২৪ at ১১:২২ পূর্বাহ্ণ

পদার্থবিজ্ঞানী, জ্যোতি বিজ্ঞানী, গণিতজ্ঞ এবং দার্শনিক যিনি বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের সাথে বেশ নিবিড় সম্পৃক্ত । তার সবচেয়ে বড় উল্লেখযোগ্য অবদানের মধ্যে রয়েছে দুরবীক্ষণ যন্ত্রের ঊন্নতি সাধন। যা জ্যোতি বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে। তার হাতে আধুনিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির সুচনা হয়। তিনি প্রথম দেখান পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষণ এবং সুশৃঙ্খলভাবে ভৌতরাশির সংজ্ঞা প্রদান ও এদের মধ্যে সর্ম্পক নির্ধারণেই বৈজ্ঞানিক কর্মের মুল ভিত্তি। তিনি নিউটনের গতির প্রথম ও দ্বিতীয় সুত্র এবং কোপার্নিকাসের মতবাদের পক্ষে একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ। তিনি অ্যারিস্টটলের “কেন” প্রশ্নের পরিবর্তে “কেমন করে” প্রশ্নের অবতারণার মাধ্যমে অ্যারিস্টটলীয় ধারণার অবসানে তার আবিষ্কারগুলো বড় ভূমিকা রেখেছে ।

গ্যালিলিও ১৫৬৪ সালের ১৫ ফ্রেরুয়ারী ইতালির টুসকানিতে অবস্থিত পিসা নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন । তার বাবা ভিনসেঞ্জো গ্যালিলি গণিতজ্ঞ ও সংগীত শিল্পী আর মা গিউলিয়া আমানাটি ছিলেন গৃহিণী। গ্যালিলিও ছিলেন তার বাবামার সাত সন্তানের মধ্যে সবার বড় আর মেধাবী। বেশ অল্প বয়স থেকে তিনি শিক্ষাজীবন শুরু করেন। প্রথম জীবনে তিনি চিকিৎসাশাস্ত্র নিয়ে পড়াশুনা শুরু করেন। একদিন ঘটনাক্রমে তিনি জ্যামিতি বিষয়ে একটি বক্তৃতা শুনেন। এই বক্তৃতায় তার জীবনের গতিপথ বদলে দেয় এবং পৃথিবীর ইতিহাসে এক নতুন দিগন্তের সুচনা হয়। তিনি চিকিৎসাবিজ্ঞান ছেড়ে দিয়ে গণিতের প্রতি আগ্রহী হয়ে পড়াশুনা শুরু করেন। কিন্তু অর্থ তার পড়ালেখায় কাল হয়ে দাড়ায়। একরকমভাবে পড়ালেখা বন্ধ করে দিতে হয়। নানা প্রতিকুলতার সত্ত্বেও ১৫৫৯ সালে গ্যালিলিও পিসা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার জন্য একাট পদ পান এবং সেখানে গণিত পড়ানো শুরু করেন। কেননা তিনি ইতিমধ্যেই ভৌতবিজ্ঞানের ওপর কিছু অসাধারণ তত্ত্ব ও চিন্তাভাবনা প্রকাশ করে ফেলেছেন। এর পরপরই তিনি পাদুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যান এবং সেখানকার অনুষদে জ্যামিতি বলবিদ্যা ও জ্যোতি বিজ্ঞান বিষয়ে ১৬১০ সালের পূর্ব পর্যন্ত অধ্যাপনা করেন। ১৬১০ সালে তিনি প্রথম জ্যোতিবিদ্যা বিষয়ক টেলিস্কোপ আবিষ্কার করেন এবং এর সাহায্যে বৃহস্পতি গ্রহের চারটি উপগ্রহ ও চাঁদের পীঠে পাহাড় আবিষ্কার করেন। এই যন্ত্রের মাধ্যমে তিনি পৃথিবী পর্যবেক্ষণ শুরু করলেন, পৃথিবী থেকে প্রথমবারের মতো অনেক নতুন জিনিস দেখতে পেলেন যা এর আগে আর কারো চোখে ধরা পড়েনি। শনিগ্রহের বলয়গুলো প্রথম সুষ্পষ্টভাবে তার চোখে ধরা পড়ে। এরপর ১৬২৪ সালে এ বিষয়ে পোপের অনুমতি পান “জগতের অবস্থা” নিয়ে কোপর্নিকাস ও টলেমির তত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করার জন্য। ১৬৩২ সালে তার “ডায়লগ কনসানিং দ্যা টু টিফ ওয়াল্ড সিস্টেমস্‌” প্রকাশিত হওয়ার সাথে সাথে সমস্ত ইউরোপ তোলপাড় শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ আধুনিক দর্শন ও বিজ্ঞানের গ্রন্থ হিসেবে স্বীকৃতি পেলো। কিন্তু গ্যালিলি কে এর চরম মূল্য দিতে হলো। ধর্মযাজকদের রোষানলে পড়ে তাকে গ্রেফতার হতে হলো। তাকে দেখানো হলো শারীরিক অত্যাচারের ভয়। শেষ পর্যন্ত স্থির হলো ফ্লোরেন্সের তার নিজ বাড়িতে তাকে অন্তরীন অবস্থায় বাকী জীবন কাটাতে হবে। এতকিছুর সত্ত্বেও তিনি দমলেন না,নিজ বাড়িতেই তার পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাতে লাগলেন। এসব পরীক্ষা নিরীক্ষায় যেসব সিদ্ধান্তে উপনীত হতেন সেগুলি লিখে শেষ করলেন তার বিখ্যাত বই “ডায়ালাগ কনসানিং দ্যা নিউ সায়েন্স”। এই বইয়ে তিনি পদার্থবিজ্ঞান ও বলবিদ্যা নিয়ে তার যাবতীয় চিন্তাধারা লিপিবদ্ধ করেছেন। ১৬৩৮ সালে প্রোটে স্টান্টরা হল্যান্ড থেকে এই বইটি প্রকাশ করেন। এর চারবছর পর ১৬৪২ সালে ৮ জানুয়ারী ফ্লোরেন্সের কাছে অবস্থিত আজেন্টিনায় অন্ধ হয়ে অন্তরীণ অবস্থাতেই গ্যালিলিওর মৃত্যু হয়। কিন্তু তিনি জেনে গেছেন “এই বিশ্ব, এই জগৎ, এই পৃথিবী আর আগের অবস্থায় নেই । প্রাচীনতার গন্ডি পেরিয়ে এগিয়েছে অনেক অনেক দূর ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধতাসমিয়ার শখ
পরবর্তী নিবন্ধপ্রগতি সাহিত্য সংসদের সাহিত্য আড্ডা শুদ্ধ সাহিত্য চর্চার ওপর গুরুত্বারোপ