চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কে লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি ইউনিয়নের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণে বসানো রাম্বল স্ট্রিপ বৃষ্টিতে বিলীন হয়ে গেছে। যার ফলে পুনরায় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এছাড়া সড়ক নিরাপত্তা ও অবকাঠামোর স্থায়ীত্ব নিয়েও উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সচেতন মহল।
জানা যায়, গত ঈদুল ফিতরের দিন থেকে ৪৮ ঘণ্টার ব্যবধানে মহাসড়কে চুনতি ইউনিয়নের দুর্ঘটনার হটস্পট জাঙ্গালিয়া এলাকায় ৩ সড়ক দুর্ঘটনায় নারী–শিশুসহ ১৬ জনের প্রাণহানী ও ২০ জন আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। এরপর চট্টগ্রাম দক্ষিণ সড়ক ও জনপথ বিভাগ দুর্ঘটনা প্রতিরোধে যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণে চুনতি ইউনিয়নের জাঙ্গালিয়ার আধা কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ৭ স্থানে ও একই ইউনিয়নের হাজি রাস্তার মাথা এলাকায় ২ স্থানে বসান ‘রাম্বল স্ট্রিপ’। কিন্তু চলতি বর্ষায় বৃষ্টিতে গতি নিয়ন্ত্রণে বসানো সবগুলো রাম্বল স্ট্রিপ বিলীন হয়ে গেছে। যার ফলে বেপরোয়া গতিতে চলছে যানবাহন। এতে যেকোন সময় পুনরায় বড় ধরনের দুর্ঘটনায় হতাহতের আশঙ্কা রয়েছে। গত বুধবার রাতে উপজেলার চুনতি ইউনিয়নের জাঙ্গালিয়া এলাকায় দ্রুতগতির একটি প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মহাসড়কের পাশে গাছের সাথে ধাক্কা দেয়। এতে কারে থাকা প্রায় ৬ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, দুর্ঘটনা প্রতিরোধে যানবাহনের গতিরোধে বসানো সবগুলো রাম্বল স্ট্রিপ বৃষ্টির কারণে বিলীন হয়ে গেছে। যার ফলে দুর্ঘটনা প্রবণ এলাকায়ও বেপরোয়া গতিতে যানবাহন চলতে দেখা গেছে। এছাড়া বৃষ্টির কারণে মহাসড়কের একাধিক স্থানে ছোট–বড় অসংখ্য গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। রাম্বল স্ট্রিপ বসানোর পর থেকে ওইসব এলাকায় বড় ধরনের কোন দুর্ঘটনা ঘটেনি বলে জানান স্থানীয়রা।
স্থানীয় সচেতন মহল জানান, দুর্ঘটনার হটস্পট জাঙ্গালিয়ায় লোকদেখানো গতিরোধক রাম্বল স্ট্রিপ বসিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দায়সারা কাজ করছেন। বৃষ্টিপাতে মহাসড়কে যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণে বসানো রাম্বল স্ট্রিপগুলো বিলীন হয়ে গেছে, যা সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। এ ধরনের অবকাঠামো নির্মাণে টেকসই উপকরণ ও সঠিক পরিকল্পনার অভাব রয়েছে। এছাড়া অপ্রশস্ত সড়ক, বিপদজনক বাঁক, বেপরোয়া গতি, ওভারটেকিং, অপ্রশিক্ষিত চালক, লবন পানিতে মহাসড়ক পিচ্ছিল, গাড়ির এলইডি হেডলাইটের আলো, মহাসড়কে নিষিদ্ধ ছোট যানবাহন চলাচল, ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত ওজন নিয়ে চলাচল ও সড়কে দু’পাশে অসমান অংশসহ কয়েকটি কারণে এই সড়কে দুর্ঘটনা ঘটে বেশি। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটন নগরী কক্সবাজার আসেন পর্যটকরা। দূর–দূরান্ত থেকে আসা চালকদের এই সড়কের ব্যাপারে অভিজ্ঞতা না থাকাও দুর্ঘটনার অন্যতম একটি কারণ।
নিরাপদ সড়ক চাই লোহাগাড়া শাখার সাবেক সভাপতি মোজাহিদ হোসাইন সাগর জানান, মহাসড়কের চুনতি ইউনিয়নের দুর্ঘটনা কবলিত এলাকায় যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণে বসানো রাম্বল স্ট্রিপগুলো এক বর্ষা পার হবার আগেই বিলীন হয়ে গেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দায়সারাভাবে এসব রাম্বল স্ট্রিপগুলো বসানোর কাজ করেছেন। যা খুবই দুঃখজনক। দ্রুত বিলীন হয়ে যাওয়া রাম্বল স্ট্রিপগুলো পুনরায় বসানো জরুরি। অন্যথায় পুনরায় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়ক ৪ বা ৬ লেনে উন্নীত করা ও অসংখ্য বাঁক সোজা করার জন্য দীর্ঘদিন থেকে দাবি জানিয়ে আসছি আমরা। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তা আমলে নিচ্ছে না। ১৪৮ কিলোমিটার এই মহাসড়কে প্রতিদিন কোথাও না কোথাও দুর্ঘটনা ঘটে। এতে প্রতিনিয়ত হতাহতের ঘটনাও ঘটছে। মহাসড়ক প্রশস্ত না করা পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনা থামার সম্ভাবনা নেই বলেও জানান তিনি।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ–সহকারী প্রকৌশলী আবু হানিফ জানান, বৃষ্টিতে রাম্বল স্ট্রিপগুলো বিলীন হয়ে যাবার ব্যাপারে অবগত হয়েছেন। তবে বৃষ্টির কারণে রাম্বল স্ট্রিপগুলো পুনরায় বসানোর কাজ করা যাচ্ছে না। বৃষ্টি কমে গেলে শীঘ্রই রাম্বল স্ট্রিপগুলো পুনরায় বসানো হবে।