ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কে প্রাণের ঝুঁকি বাড়ছে। একদিকে বাড়ছে যানবাহন, অপরদিকে কোনো বহুমুখী টার্নে নেই ট্রাফিক বা গোলচত্বর। এসব স্থানে প্রতিনিয়ত বাড়ছে দুর্ঘটনা। পুরো মহাসড়কজুড়ে বেড়েছে ঝুঁকি।
মীরসরাইয়ের জাতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রবেশমুখে সপ্তমুখী রাস্তার মুখে মহাসড়কের সাথে নেই কোনো গোলচত্বর। আবার সেখানে যত্রতত্র পার্কিংও রয়েছে। ফলে রাস্তা পার হবার সময় দেখা যায় রাস্তার অপরদিক থেকে ছুটে আসা দ্রুতগতির গাড়ি; ঘটছে দুর্ঘটনা। গত কয়েক মাসে এ স্থানে মৃত্যুবরণ করেছে এক স্কুলশিক্ষার্থীসহ কয়েকজন। মহাসড়কের মীরসরাই অংশে এক বছরে ৮২টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৪২ জন, আহত হয়েছেন ১৩৪ জন। দুর্ঘটনার ঘটনায় জোরারগঞ্জ ও কুমিরা হাইওয়ে থানায় দায়ের হয়েছে ৩১টি মামলা। জোরারগঞ্জ ও কুমিরা হাইওয়ে থানা, বারইয়ারহাট ও মীরসরাই ফায়ার সার্ভিস এবং গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত এই দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘটেছে বেপরোয়া গতির বিভিন্ন যানবাহনের কারণে।
তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, মোট দুর্ঘটনার ৬৫ দশমিক ৮৫ শতাংশই ঘটেছে ভারী যানবাহনের কারণে। ৮২টি দুর্ঘটনার মধ্যে ৫৪টিতে ট্রাক ও লরি জড়িত। এর মধ্যে ২৫টি ছিল ট্রাক–লরির মুখোমুখি সংঘর্ষ। এসব ঘটনায় ১৪ জন চালক ও সহকারী নিহত হন। এছাড়া ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান উল্টে যাওয়ার ২৯টি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন আরও ৩ জন। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটেছে ১১টি, এতে মারা গেছেন ৭ জন। সিএনজিচালিত টেক্সির সঙ্গে সংঘর্ষে মারা গেছেন আরও ৪ জন। যাত্রীবাহী বাসের ৪টি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৪ জন। এছাড়া গত এক বছরে মহাসড়ক পারাপার বা হাঁটার সময় মীরসরাই এলাকায় ১০ জন পথচারী নিহত হয়েছেন।
হাইওয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের তথ্যমতে, মীরসরাই উপজেলার দক্ষিণে বড়দারগারহাট থেকে উত্তরে ধুমঘাট সেতু পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার এলাকায় দুর্ঘটনার হার বেশি। রাস্তার গর্ত, খানাখন্দ, ইউটার্নে দাঁড়ানো গাড়ি, চালকের চোখে ঘুম, অতিরিক্ত গতি এবং সিএনজিচালিত টেঙির অবাধ চলাচল এসব দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। গত এক বছরে মীরসরাইয়ে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনায় জোরারগঞ্জ ও কুমিরা হাইওয়ে থানায় ৩১টি মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে জোরারগঞ্জ হাইওয়ে থানায় ২৫টি ও কুমিরা হাইওয়ে থানায় ৬টি মামলা হয়েছে। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ১০৮ জন জোরারগঞ্জ হাইওয়ে থানা ও ২৬ জন কুমিরা হাইওয়ে থানার এলাকায় দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন।
জোরারগঞ্জ হাইওয়ে থানার উপপরিদর্শক বোরহান উদ্দিন বলেন, মহাসড়কে অনেক সময় বড় কাভার্ডভ্যান, লরি অবৈধভাবে পার্কিং করে রাখা হয়। দ্রুতগতির ট্রাক–লরি এসে এসব গাড়িকে ধাক্কা দিয়ে দুর্ঘটনা ঘটায়। এতে শুধু চালক–সহকারীরই মৃত্যু হয়েছে ১৪ জনের। বারইয়ারহাট ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন বলেন, অনেক দুর্ঘটনাই ঘটে মহাসড়কের ওপর থেমে থাকা গাড়ির পেছনে ধাক্কা লাগার কারণে। বিশেষ করে গাড়ি বিকল হয়ে দাঁড়ালে চালকের চোখে ঘুম থাকায় সামনের যানবাহন দেখতে পান না।
জোরারগঞ্জ হাইওয়ে থানার ওসি সরকার আবদুল্লা আল মামুন বলেন, বর্ষাকালে মহাসড়কে খানাখন্দ সৃষ্টি হওয়ায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে যায়। আবার দীর্ঘ সময় গাড়ি চালানোর কারণে চালকের চোখে ঘুম আসাও দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় হাইওয়ে পুলিশ চালকদের সচেতন করতে মাঠপর্যায়ে কাজ করছে। পাশাপাশি মহাসড়কে অটোরিকশার অবৈধ চলাচল রোধে প্রতিদিন অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে, মাসে গড়ে প্রায় ৬০টি মামলা দিচ্ছি। জাতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চলের সম্মুখ প্রবেশপথ বড়তাকিয়ায় ৭ রাস্তার মুখে কী ব্যবস্থা নেয়া যায়–এ বিষয়ে ওসি বলেন, আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে এ বিষয়ে আলোচনা করে উদ্যোগ গ্রহণ করবো।












