দেশের সবচেয়ে ব্যস্ততম ও গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়ক চারলেনে উন্নীত হওয়ার পর গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষ কমে এলেও থামছে না দুর্ঘটনা। সড়কের মীরসরাই অংশের ৩০ কিলোমিটারে দু–একদিন পর কোথাও না কোথাও ঘটছে দুর্ঘটনা। সড়ক পারাপারে হতাহতের ঘটনাও কম নয়।
ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফৌজদারহাটে গত ৫ আগস্ট একটি কন্টেইনার লরির নিচে চাপা পড়ে একটি প্রাইভেটকার। এসময় ভয়াবহ মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচলেও একই পরিবারের ৪ জন গুরুতর আহত হয়। এই রুটে ভারীগাড়ি আর হালকা গাড়ি দুটোই এতো বেশী বেড়েছে যে, সড়কও ভারী গাড়ির ভারে দেবে যায়। ভারী গাড়িগুলো হালকা গাড়ির উপর পড়ে অনেক সময় প্রাণ হারাচ্ছে। ২০২২ সালের আগস্ট মাস থেকে চলতি বছরের আগস্ট মাস পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনায় এই রুটে অন্তত অর্ধশত মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। আহত হয়েছেন অন্তত শতাধিক। এছাড়া উপজেলার আঞ্চলিক সড়কেও মাঝে মধ্যে দুর্ঘটনা ঘটে। সংশ্লিষ্টরা জানান, পথচারীদের অসচেতনতা, চোখে ঘুম নিয়ে গাড়ি চালানো, সড়কের উপর গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখা, ওভারটেক, অবৈধ পার্কিং, পথচারী ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার না করা দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ।
উপজেলার বড়দারোগাহাট থেকে বারইয়ারহাট পর্যন্ত বিভিন্ন ফিলিং স্টেশন, রেস্টুরেন্ট ও কয়েকটি শিল্প কারখানার সামনে সড়কের ওপর গাড়ি পার্কিংয়ের কারণেও ঘটছে দুর্ঘটনা। প্রায় সময় গাড়ি পার্কিং করে চালক–চালকের সহকারী বাইরে আড্ডা দেয়। জোরারগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মীরসরাই উপজেলার দক্ষিণে বড় দারোগারহাট থেকে উত্তরে ধুমঘাট ব্রিজ পর্যন্ত ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের ২৯ কিলোমিটার অংশ আছে। এ অংশের ধুমঘাট থেকে বড়তাকিয়া পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটারের দায়িত্বে আছে জোরারগঞ্জ হাইওয়ে থানা পুলিশ। বাকি ১০ কিলোমিটার অংশ কুমিরা হাইওয়ে পুলিশের আওতায়। যা দেখভাল করার জন্য টেরিয়াইলের হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন করা হয়েছে। উপজেলায় সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে বারইয়ারহাট পৌরবাজার, সোনাপাহাড়, ঠাকুরদীঘি, মিঠাছড়া ইউটার্ন, মীরসরাই ফিলিং স্টেশন, বড়তাকিয়া ইউটার্ন ও নিজামপুর কলেজ এলাকায়।
সমপ্রতি মহাসড়কের বড়তাকিয়া এলাকা ঘুরে দেখা যায়, চট্টগ্রামমুখী লেনে সড়কের ওপর বাস–লেগুনা পার্কিং ও যানবাহন থামিয়ে যাত্রী তোলা হচ্ছে। এর মধ্যেই পথচারীরা যে যার মতো ঝুঁকি নিয়ে সড়ক পার হচ্ছেন। উপজেলার বারইয়ারহাট, মীরসরাই সদর ও নিজামপুর এলাকায় ফুটওভারব্রিজ থাকলেও মানুষ ব্যবহার না করে বিভাজকের ওপর দিয়ে রাস্তা পারাপার হন। অনেক সময় পার হতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে মীরসরাই ফায়ার সার্ভিসের স্টেশনের ইনচার্জ মো. ইমাম হোসেন পাটোয়ারি বলেন, সব সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য আমাদের কাছে নেই। কেবল যেসব দুর্ঘটনার পর আমাদের উদ্ধার অভিযান চালাতে হয়, সেগুলোরই তথ্য নথিভুক্ত করা হয়। এ তথ্যের বাইরেও অনেক দুর্ঘটনা ঘটে। সেগুলো আমাদের হিসাবে থাকে না।
জোরারগঞ্জ হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সোহেল সরকার বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে নিয়মিত তদারকি করে থাকি। ফিটনেস ছাড়া যানবাহন চলাচল, অবৈধ পার্কিংসহ বিভিন্ন অপরাধে গত এক মাসেই জোরারগঞ্জ হাইওয়ে থানায় প্রায় দুই শতাধিক মামলা হয়। এর বাইরে চালক ও পথচারীদের সচেতনতা তৈরিরও চেষ্টা চলছে। হাইওয়ে ওসি আরও বলেন, পথচারীদের সচেতন হতে হবে। পথচারীরা সচেতন হলে দুর্ঘটনা আরও কমে যাবে।