এক বছরে নিষ্পত্তি হয়নি একটি মামলাও

সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনাল ।। ১১৯ মামলার ৯৫টিই আটকা সাক্ষ্যগ্রহণে, যুক্তিতর্কে মাত্র দুটি

হাবীবুর রহমান | বৃহস্পতিবার , ১১ জানুয়ারি, ২০২৪ at ৯:২৬ পূর্বাহ্ণ

জঙ্গিদের বিচারের জন্যই সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনালের যাত্রা। তিন মাসের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করতে হবে, রয়েছে এমন বিধানও। এই ট্রাইব্যুনালে গেল বছর নিষ্পত্তি হয়নি একটি মামলাও। সাক্ষ্যগ্রহণ, যুক্তিতর্কে ঝুলছে বিশেষ এই ট্রাইব্যুনালের ১১৯ মামলার ভবিষ্যৎ। ট্রাইব্যুনাল থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, ট্রাইব্যুনালে ২০২২ শেষে মামলার সংখ্যা ছিল ১১১টি। ২০২৩ এ নতুন করে যুক্ত হয়েছে আটটি। সবমিলে ২০২৩ শেষে ট্রাইব্যুনালে মামলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১৯টি। ট্রাইব্যুনালটির বাৎসরিক মামলার বিবরণী ঘেটে দেখা যায়, ২০২৩ এ ট্রাইব্যুনালটির একটি মামলাও নিষ্পত্তি হয়নি।

ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি রুবেল পাল আজাদীকে বলেন, নানা কারণে মামলা নিষ্পত্তি করা যায়নি। বিশেষ করে সাক্ষী হাজির না হওয়া। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করতে না পারলে মামলা যুক্তিতর্কে নেওয়া যায় না। তবে আমরা আন্তরিক। নতুন বছরে বেশ কিছু মামলা নিষ্পত্তি হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দুই নম্বর গেইটের পুলিশ বঙে বোমা হামলা মামলা, কাজির দেউরির নাসিমন ভবন এলাকায় সন্ত্রাসী কার্যকলাপের ঘটনায় ৫শর অধির ব্যক্তির বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা, জেএমবি ও হামজা ব্রিগেডসহ অনেকগুলো জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাসহ মোট ১১৯টি মামলা ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন রয়েছে। এর মধ্যে ৯৫টিই হচ্ছে সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে। দুটি রয়েছে যুক্তিতর্ক শুনানি পর্যায়ে। বাকীগুলো চার্জগঠনসহ নানা পর্যায়ে পেন্ডিং রয়েছে।

ট্রাইব্যুনালসূত্র জানায়, ট্রাইব্যুনালে থাকা মামলার অসংখ্য আসামি কারাগারে রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হামজা ব্রিগেডের তিন মামলার আসামিরা। এদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের সাত বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো রায় ঘোষণা হয়নি। আটকে আছে সাক্ষ্যগ্রহণ কার্যক্রমে। অথচ হালিশহর, হাটহাজারী ও বাঁশখালী থেকে অভিযান চালিয়ে অস্ত্রসস্ত্রসহ দুর্ধর্ষ হামজা ব্রিগেডের সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ অবস্থায় জঙ্গি মামলার ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, বিচার নিষ্পত্তি করতে পারলে জঙ্গিরা ভয় পাবে। তাদের অবস্থান থেকে সরে আসবে।

কারাগার সূত্র জানিয়েছে, কারাগারের হেফাজতে জঙ্গিদের সকলকে একটি ভবনে রাখা হয়েছে। অন্য বন্দিদের সঙ্গে যাতে মেলামেশা করতে না পারে তাই এ ব্যবস্থা। সূত্র জানায়, কারাগারে থাকা জঙ্গির মধ্যে কয়েকজনের সাজা হয়েছে। এরমধ্যে জেএমবি নেতা জাবেদ ইকবাল, শামীম হোসেন, শফিকুল ইসলাম ও মনজুরুল মুরাদ। জাবেদ ইকবালের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। এসব মামলায় এ পর্যন্ত তাকে একশ বছরেরও বেশি সাজা দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ ২০২১ সালের ৩ অক্টোবর আদালতে বোমা হামলা মামলার রায়েও তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে। বাকিদের মামলা বিচারাধীন।

ট্রাইব্যুনাল সূত্র জানায়, হামজা ব্রিগেড ছাড়াও জেএমবি, নব্য জেএমবি, হিজবুত তাহরীর, হরকাতুল জিহাদ (হুজি) নামের জঙ্গি সংগঠনগুলোরও মামলা রয়েছে সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনালে। এদের মধ্যে বেশিরভাগ মামলা হচ্ছে জেএমবি ও নব্য জেএমবির। এর পরের অবস্থানে রয়েছে হিজবুত তাহরীর। হরকাতুল জিহাদ সদস্যদের রয়েছে ৫টি মামলা।

প্রসঙ্গত, ২০২২ সালে উচ্চ আদালতের বিচারক রুহুল কুদ্দুস সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনাল পরিদর্শন করেন। তখন রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, জঙ্গিদের বিচারে আগের তুলনায় গতি পাবে। গতি কীভাবে বাড়ানো যায় সেই বিষয়ে নির্দেশনা দিতেই বিচারকের ট্রাইব্যুনাল পরিদর্শন বলে জানিয়েছিলেন তৎকালীন পিপি মনোরঞ্জন দাশ।

জেলা পিপি শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী আজাদীকে বলেন, সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনাল খুবই গুরুত্বপূর্ণ ট্রাইব্যুনাল। এখানে জেএমবি, নব্য জেএমবি, হামজা ব্রিগেড, হরকাতুল জিহাদসহ জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো রয়েছে। জঙ্গিদের বিশেষভাবে বিচার করার জন্যই এই ট্রাইব্যুনালের গঠন। এমন একটি ট্রাইব্যুনালে পুরো বছর মিলে একটি মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া দুঃখজনক। কেন এমনটা হয়েছে আমি বুঝতে পারছি না। দ্রুত এসব মামলা নিষ্পত্তি হওয়া প্রয়োজন বলেও জানান জেলা পিপি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাংলাদেশের অগ্রযাত্রা কেউ ঠেকাতে পারবে না : প্রধানমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮০ যাত্রী নিয়ে কক্সবাজার পৌঁছালো পর্যটক এক্সপ্রেস