চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ নুরুল করিম বলেছেন, দীর্ঘকাল নগরীর প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা এবং যথেচ্ছাচারের কারণে সিডিএ’র অভ্যন্তরীণ সক্ষমতা ও শৃঙ্খলা ভেঙ্গে পড়েছিল। সংস্থার বিশাল কর্মযজ্ঞের তুলনায় জনবল ছিল অপ্রতুল এবং জনবল নিয়োগের ক্ষমতাও কেন্দ্রীভূত ছিল মন্ত্রণালয়ে। গত এক বছরে আমরা সরকারের সহায়তায় সিডিএ’র প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনায় নিয়ম প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি জনবলের ঘাটতিপূরণে উদ্যোগ নিই। মন্ত্রণালয় থেকে জনবল নিয়োগের বিষয়টি সিডিএ’র কাছে ন্যস্ত করা হয়েছে। এর ফলে বর্তমান জনবল ৩০০ থেকে ৫০০ জনে উন্নীত করার প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়েছে। নতুন জনবল নিয়োগ সম্পন্নের পর সিডিএ’র সেবার মান অনেক বৃদ্ধি পাবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সরকারের এক বছরের সময়কাল প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে সিডিএ চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ নুরুল করিম দৈনিক আজাদীকে বলেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার আন্দোলনের ফলে অবসান ঘটে ১৬ বছরের একটানা গণবিরোধী অপশাসনের। নতুন সম্ভাবনার সূর্যোদয়ে সারাদেশ অনুপ্রাণিত হয় সংস্কারের আকাঙ্ক্ষা এবং নতুন বৈষম্যমুক্ত গণতান্ত্রিক সুশাসনের বাংলাদেশ গঠনের প্রত্যয়ে। নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে আমাদের সিডিএ’র দায়িত্ব দেয়া হয়। আমি পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার, সেবার মান উন্নয়নে অগ্রসর হই। ইতোমধ্যে আমরা বিভিন্ন বিষয়ে সংস্কার করে কাজে–কর্মে প্রত্যাশিত গতিশীলতা আনার চেষ্টা করছি।
তিনি বলেন, আমরা আরো একটি বিষয়কে অগ্রাধিকার দিই, আর তা হচ্ছে স্থাবর সম্পদ ব্যবস্থাপনা। সিডিএ’র বেদখল হওয়া বহু জমি উদ্ধার করা হয়েছে এবং প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন সম্পদের পূর্ণাঙ্গ বিবরণী তৈরি করা হয়েছে। সিডিএ কর্তৃক দীর্ঘদিন পূর্বে বাস্তবায়িত আবাসিক প্রকল্পসমূহ যেমন– অনন্যা আবাসিক এলাকা, কর্ণফুলী আবাসিক এলাকা, সিলিমপুর আবাসিক এলাকা বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে পরিকল্পিত আবাসিক এলাকা হিসেবে গড়ে উঠতে পারেনি। বিশেষতঃ কর্ণফুলী আবাসিক এলাকাটি পানির অভাবে প্রায় ৩৩ বছর ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল। চউক কর্তৃক ফলপ্রসু জনবান্ধব উদ্যোগ গ্রহণের ফলে চট্টগ্রাম ওয়াসার সহযোগিতায় পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়েছে। ফলে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগকৃত আবাসিক এলাকায় নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। অসফল প্রকল্পগুলোকে সফল করার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি লুপরোড সংলগ্ন এলাকায় এবং ফতেয়াবাদ এলাকায় নতুন আবাসন প্রকল্প গ্রহণের সম্ভাব্যতা যাচাই চলছে। ওয়ান সিটি টু টাউন ধারণার আলোকে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণে পরিকল্পিত নগরায়নের স্থানভিত্তিক বিভিন্ন প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই চলছে।
সিডিএ চেয়ারম্যান বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প বাস্তবায়নের অগ্রণী প্রতিষ্ঠান হিসেবে জলাবদ্ধতামুক্ত চট্টগ্রাম গড়ার অঙ্গীকারে নিরলস কাজ করছে। গত ১ বছরে চউক অতীতের সমন্বয়হীনতা থেকে উত্তোরণ করে নগর উন্নয়ন, ব্যবস্থাপনা, প্রশাসনের সাথে সম্পৃক্ত সকল সংস্থার সাথে সুসমন্বিতভাবে কাজ করার উজ্জ্বল উদাহরণ তৈরি করেছে। যা নগরের উন্নয়ন কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য গতি সঞ্চার করেছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
তিনি গত এক বছরে সিডিএ কর্তৃক গৃহীত উল্লেখযোগ্য নতুন প্রকল্পসমূহের ব্যাপারে বলতে গিয়ে বলেন, অঙিজেন–কুয়াইশ রোড ছয় লেনে উন্নীতকরণের ডিপিপি প্রক্রিয়াধীণ রয়েছে। একইসাথে ওভারপাস নির্মাণসহ অঙিজেন জংশন উন্নয়ন, নর্থ–সাউথ রোড–১, আমবাগান থেকে বায়েজিদ লুপ রোড পর্যন্ত ৮০ ফুট প্রশস্ত ৩.৮ কি.মি নতুন সড়ক নির্মাণ, পতেঙ্গা রিং রোড দ্বিতীয় পর্যায় ১০ কি.মি ৮৪ ফুট প্রশস্ত সড়ক নির্মাণ এবং মেহেদীবাগ রোড, বৌদ্ধ মন্দির থেকে লাভলেইন পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণের ডিপিপি প্রস্তুতের কাজ চলছে।
সবুজায়ন ও নগর সৌন্দর্যবর্ধনে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেয়ার কথা উল্লেখ করে সিডিএ চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ নুরুল করিম বলেন, পতেঙ্গা রিং রোডের দুইপাশে লক্ষাধিক বৃক্ষরোপণ করা হয়েছে। নবনির্মিত উড়াল সড়কের নিচে সবুজায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কর্ণফুলী রিংরোড বরাবর সুদীর্ঘ এলাকায় সুপরিকল্পিত সবুজবেষ্টনি এবং পার্ক তৈরির পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়েছে। কর্ণফুলীর দক্ষিণ পাড়ে মইজ্জ্যারটেক এলাকায় প্রায় ২০ একর এলাকায় সবুজবেষ্টনি, পার্কসহ নাগরিক সুবিধাদি তৈরির পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র ও নির্মাণ অনুমোদন কার্যক্রমে ইন্সপেকশন পক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণে অনলাইন সিস্টেমে নির্দিষ্ট সাইট এর সঠিক তথ্য যথাযথভাবে প্রাপ্তির লক্ষ্যে রিয়েল টাইম ইন্সপেকশন মনিটরিং সিস্টেম (আরটিআইএমএস) সফটওয়ার বাস্তবায়ন ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে, যা স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা এবং গ্রাহক সেবা উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা রাখছে।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী যে কোন আবেদনকারী যাতে সহজে অফিসিয়ালী ভূমির ব্যবহার সম্পর্কে সহজে জানতে পারে এবং সেবা সহজীকরণ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে অনলাইন ভিত্তিক করার সফটওয়্যারটি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে, যা চালুকরণের চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
সিডিএ চেয়ারম্যান বলেন, পাহাড়, নদী, সাগরবেষ্টিত চট্টগ্রামের অনন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে সংরক্ষণ করে আধুনিক গতিশীল নগর গড়ে তোলাই সিডিএ’র লক্ষ্য। এ লক্ষ্য অর্জনে জনগণকে সাথে নিয়ে এগিয়ে চলার যে যাত্রা তা সামনের দিনগুলোতেও অব্যাহত থাকবে বলেও ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ নুরুল করিম তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।