এক বছরেও শুরু হয়নি বিচার

চকরিয়ায় সড়কে ৬ ভাই নিহতের ঘটনা

চকরিয়া প্রতিনিধি | মঙ্গলবার , ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৫:২০ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজারের চকরিয়ার মালুমঘাটে চট্টগ্রামকক্সবাজার মহাসড়কে পণ্য বোঝাই পিকআপ চাপায় ছয় ভাই নিহত হওয়ার ঘটনার বিচারকার্য এক বছরেও শুরু হয়নি। আগামীকাল বুধবার আলোচিত এই ঘটনার এক বছর পূর্ণ হবে।

উপজেলা জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর ও চকরিয়া অ্যাডভোকেট এসোসিয়েশনের সভাপতি এ এইচ এম শহীদুল্লাহ চৌধুরী আজাদীকে বলেন, এই ঘটনায় থানায় রুজুকৃত মামলাটি দীর্ঘ সময় তদন্ত করে আদালতে অভিযোগপত্রও দাখিল করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। দাখিলকৃত সেই অভিযোগপত্রের ওপর একবার শুনানি শেষে মামলাটির বিচারকার্য শুরু করতে নিয়ম অনুযায়ী নিম্ন আদালত থেকে জেলা জজ আদালতে চলে যাবে।

পিবিআইয়ের তদন্তে উঠে এসেছে এটি নিছক সড়ক দুর্ঘটনা ছিল না। ইচ্ছাকৃতভাবে ছয় ভাইয়ের মৃত্যু নিশ্চিত করতেই পিকআপ চালক দ্বিতীয়বার চাপা দেয়। এমনকি চাপা দেওয়ার পরও তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে না নেওয়া, পুলিশকে খবর না দেওয়াসহ চালক, পিকআপ মালিক ও তার ছেলের (পিকআপ হেলপার) উদাসীনতার কারণে ঘটনাস্থলে প্রাণ হারায় পাঁচ ভাই এবং আরেক ভাই মারা যায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৪ দিন পর। চকরিয়া উপজেলা জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালত পুলিশের কর্মকর্তা (সিএসআই) মো. সফিকুল ইসলাম গতকাল আজাদীকে জানান, তদন্ত সংস্থা কর্তৃক আলোচিত এই মামলার তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন ২০২২ সালের ৯ নভেম্বর। এটি আদালতে গৃহীত হয় ২৩ নভেম্বর। আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি অভিযোগপত্রের ওপর শুনানির দিন ধার্য রয়েছে। ওইদিন শুনানি শেষে মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম শুরু করার জন্য নিয়ম অনুযায়ী কঙবাজার জেলা জজ আদালতে প্রেরণ করা হবে।

এই ঘটনায় আদালতে দাখিল করা অভিযোগপত্রে তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই কঙবাজার কার্যালয়ের পুলিশ পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর) মো. এনামুল হক চৌধুরী উল্লেখ করেছেন, ২০২২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ভোরে ছয় ভাইকে পিকআপ ভ্যানের চালক ইচ্ছাকৃতভাবে দ্বিতীয়বার চাপা দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করেছেন। চালক গাড়িটি পেছনে এনে আহত ব্যক্তিদের দ্বিতীয়বার চাপা না দিলে এত প্রাণহানি ঘটত না। পিকআপ ভ্যানের চালক সাহিদুল ইসলাম প্রকাশ সাইফুল, মালিক মাহামুদুল করিম ও তার ছেলে মো. তারেককে আসামি করে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। এর মধ্যে চালক সাহিদুল কারাগারে, মালিক মাহামুদুল করিম জামিনে এবং পলাতক রয়েছে মালিকের ছেলে ও পিকআপের সহকারী মো. তারেক। তদন্ত প্রতিবেদনে এটিকে হত্যাকাণ্ড হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি ভোরে মালুমঘাট এলাকায় পণ্যবাহী মিনি পিকআপ চাপায় হাসিনাপাড়ার সুরেশ চন্দ্র সুশীলের পাঁচ ছেলে অনুপম সুশীল (৪৬), নিরুপম সুশীল (৪০), দীপক সুশীল (৩৫), চম্পক সুশীল (৩০) ও স্মরণ সুশীলের (২৯) মৃত্যু হয়। গুরুতর আহত রক্তিম সুশীল (৩২) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৪ দিন পর মারা যান।

মামলার বাদী ও একমাত্র বেঁচে থাকা ছয় ভাইয়ের কনিষ্ঠ প্লাবন সুশীল আজাদীকে বলেন, আমাদের চাওয়া হচ্ছে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা।

পরিবারটির বর্তমান অবস্থা : এক বছর আগেও পরিবারটি ছিল একান্নবর্তী। এক বছরের মাথায় স্বামীকে হারানোর পর কোলের সন্তান নিয়ে কেউ বাপের বাড়ি, কেউ ভাড়া বাসায় থাকছেন। অবশ্য সরকারের পক্ষ থেকে নিহত ছয় ভাইয়ের স্ত্রী, মা ও ছোট ভাইয়ের জন্য খাস জায়গায় সাতটি নতুন বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়া হয়। প্রত্যেকের জন্য ৫ লক্ষ টাকা করে ৩৫ লক্ষ টাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে একাকালীন অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়। এছাড়া প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হয় ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে। কিন্তু নিরাপত্তাজনিত কারণে পরিবারগুলো সরকারিভাবে নির্মাণ করে দেওয়া বাড়িতে এখনো উঠতে পারেননি। এমনটাই জানালেন নিহত নিরূপমের স্ত্রী গীতা সুশীল।

এ প্রসঙ্গে চকরিয়ার ইউএনও জেপি দেওয়ান বলেন, পরিবারগুলো তাদের জন্য নির্মিত বাড়ির চারপাশে সীমানা দেয়াল নির্মাণ করে দেওয়ার জন্য লিখিতভাবে আবেদন জানিয়েছিলেন। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ শিক্ষার্থী গ্রেপ্তার
পরবর্তী নিবন্ধচূড়ান্ত হিসাবে জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ