এক বছরেও অনুমোদন মিলেনি ১ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকার প্রকল্প

চসিকের সেকেন্ডারি সড়ক সম্প্রসারণ প্রকল্প পড়ে আছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে

মোরশেদ তালুকদার | শনিবার , ২ আগস্ট, ২০২৫ at ৬:০৯ পূর্বাহ্ণ

এক বছর ধরে ঝুলে আছে নগরে নতুন করে সাতটি সড়ক নির্মাণ ও সম্প্রসারণে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) গৃহীত একটি প্রকল্প। এক হাজার ৭৭৭ কোটি ৯৬ লাখ টাকার প্রকল্পটির উন্নয়ন প্রস্তাবনা (ডিপিপি) গত বছরের (২০২৪) জুন মাসে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে চসিক। ‘চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আওতায় সেকেন্ডারি সড়ক সম্প্রসারণ’ র্শীষক প্রস্তাবিত এ প্রকল্পটির আওতায় ২১ দশমিক ৩৮৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সাতটি রাস্তা নির্মাণ ও সম্প্রসারণ ছাড়াও ২৮ টি আরসিসি বক্স কার্লভাট, একটি ফুটওভার ব্রিজ ও একটি রেলওয়ে লেভেল ক্রসিং নির্মাণ ও উন্নয়ন করতে চায় চসিক।

চসিকের প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে প্রেরিত যে কোনো প্রকল্প একনেকে উপস্থাপনের আগে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতি নিতে হয়। একবছর পেরুলেও চসিকের প্রস্তাবিত প্রকল্পটি অর্থ মন্ত্রণালয়েই পাঠায়নি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। ফলে এটি আলোর মুখ দেখার সম্ভাবনাও তৈরি হয়নি। চসিকের এক প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, প্রস্তাবিত প্রকল্পটিতে বড় অংকের ব্যয় ধরা আছে ভূমি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিপূরণ খাতে। যা টাকার অংকে ১ হাজার ২৮৯ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। ভূমি অধিগ্রহণের টাকা একসঙ্গে পাওয়া না গেলে কাজ করা কঠিন হয়। আবার মন্ত্রণালয় একসঙ্গে ভূমি অধিগ্রহণের সব টাকা দেয় না। এতে কাজ করার সময় জটিলতা তৈরি হয়। এসব কারণে কোনো প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণের বিষয় থাকলে মন্ত্রণালয় প্রকল্পটি নিয়ে অনাগ্রহী থাকে। হয়তো এ কারণেই চসিকের প্রকল্পটির অগ্রগতি হচ্ছে না।

সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন আজাদীকে বলেন, শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে প্রকল্পটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটি বাস্তবায়ন করা গেলে নগরবাসী উপকৃত হবেন। শহরে যানজট কমে আসবে। মানুষের দুর্ভোগ কমবে। আমি মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করব। কী কারণে প্রকল্পটি আটকে আছে খোঁজখবর নিব। প্রকল্পটি যাতে অনুমোদন করা হয় সেজন্য সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা করব, তদবির করব। আশা করছি, চট্টগ্রামের স্বার্থে অন্তর্বর্তী সরকার প্রধানসহ চট্টগ্রামের যেসব উপদেষ্টারা আছেন তারা প্রকল্পটি পাশ করতে ভূমিকা রাখবেন।

মেয়র বলেন, সড়ক নির্মাণ এবং সম্প্রসারণের প্রকল্পটি ছাড়াও ২৯৮ কোটি টাকার ইক্যুপমেন্ট সংগ্রহের জন্য গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি প্রকল্প আটকে আছে মন্ত্রণালয়ে। এ প্রকল্পটি জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।

সেকেন্ডারি সড়ক সম্প্রসারণ প্রকল্পের গুরুত্ব যে কারণে : প্রকল্পের ডিপিপিতে বলা হয়, প্রস্তাবিত প্রকল্পটি চট্টগ্রাম মহানগরে জনগণের নির্বিঘ্ন যাতায়াতের সুবিধাসহ পর্যটন শিল্পের বিকাশের সাথে এবং এলএনজি স্টেশন প্রকল্প, চট্টগ্রাম ইপিজেড প্রকল্প এবং চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের সাথে সম্পৃক্ত। প্রকল্পের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়, যাতায়াতের সুবিধা নিশ্চিতসহ পর্যটন শিল্পের বিকাশ, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের সাথে সহজ যাতায়াত বৃদ্ধি ও সময় কমানো, টেকসই, নিরাপদ ও ব্যয় সাশ্রয়ী (পরিবহন ও সময়) সড়ক অবকাঠামো এবং সমন্বিত সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা নির্মাণ।

প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এলাকার সড়ক পথে দুর্যোগকালে নিরাপদ যাতায়াতসহ সামগ্রিক যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নত হবে এবং জলাবদ্ধতা দূরীভূত হবে। ফলে এলাকার জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক নারীর যাতায়াত সুবিধাদিসহ দুর্যোগের সময় নিরাপত্তা বৃদ্ধি পাবে বলে উল্লেখ করা হয়।

প্রকল্পের ডিপিপি’তে বলা হয়, ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণ শেষ হবে। ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে ৪৭ হাজার ১০০ ঘনমিটার মাটি দিয়ে সড়ক বাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ হবে। সড়ক পাকাকরণ শেষ হবে ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে। একই সময়ে অন্যান্য কাজও শেষ হবে।

প্রকল্পভুক্ত সড়ক সাতটি হচ্ছে১ দশমিক ১৩৯ কিলোমিটার দীর্ঘ ওমর আলী মাতব্বর সড়ক, আড়াই কিলোমিটার দীর্ঘ খাজা সড়ক, ১ দশমিক ৮৮৮ কিলোমিটার দীর্ঘ পলিটেকনিক সড়ক, ৪ দশমিক ৩৫১ কিলোমিটার দীর্ঘ কে বি আমান আলী সড়ক, ১ দশমিক ৬৫১ কিলোমিটার দীর্ঘ ঈশান মহাজন সড়ক, ২ দশমিক ৬৩৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ফইল্লাতলী বাজার সড়ক এবং ৬ দশমিক ২৬৮ কিলোমিটার দীর্ঘ মুনির নগর থেকে ফইল্লাতলী বাজার সড়ক। এই সড়ক নির্মাণে ব্যয় হবে ২৩৫ কোটি ১৮ লাখ টাকা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যেসব সড়ক ঘিরে প্রকল্প নেয়া হয়েছে ওসব সড়ক বর্তমানে প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত অপ্রশস্ত। সেখানে সবসময় যানজট লেগে থাকে। সড়কগুলো সম্প্রসারণ করা হলে ওসব এলাকার জনগণের দুর্ভোগ কমে আসবে।

প্রকল্পের উন্নয়ন প্রস্তাবনা সূত্রে জানা গেছে, প্রস্তাবিত সড়কগুলো নির্মাণ ও প্রশস্তকরণে ২৭ দশমিক ১৫৮ একর ভূমি অধিগ্রহণ করতে হবে। এ জন্য প্রকল্পে এক হাজার ২৮৯ কোটি ৪৩ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় ১০৮ কোটি ৪২ লাখ টাকায় ২২ হাজার ৩০৫ মিটার ড্রেন এবং ২৫ কোটি ৪৮ লাখ টাকায় ৩০৮ দশমিক ৬০ মিটার আরসিসি কালভার্ট নির্মাণ করা হবে। ফইল্লাতলী বাজার সড়কের সঙ্গে ৩২ লাখ ৯২ হাজার টাকায় রেলওয়ে লেভেল ক্রসিং এবং পলিটেকনিক সড়কের সঙ্গে একটি স্টিলের ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসবুজের বার্তা ছড়াচ্ছে বৃক্ষমেলা
পরবর্তী নিবন্ধচাকসুর গঠনতন্ত্র অনুমোদন, প্রার্থীর সর্বোচ্চ বয়স ৩০ বছর