নগরীর বিমানবন্দর সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) প্রথম ২০১৭ সালে উদ্যোগ নেয়। এরপর ২০১৯ সালে সড়কটিসহ শহরের ৬৮৯ দশমিক ৫৪ কিলোমিটার রাস্তা সংস্কারে তিন হাজার ১৬৯ কোটি ৯৯ লাখ ৯৩ হাজার টাকায় প্রকল্পের উন্নয়ন প্রস্তাবনা (ডিপিপি) তৈরি করে সংস্থাটি। কিন্তু স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প যাচাই কমিটির (আইপিইসি) আপত্তিতে ডিপিপি সংশোধন করতে হয় চসিককে। এখন প্রকল্পটির আকার দুই হাজার ৪৯৯ কোটি ৯ লাখ ২৪ হাজার টাকা।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, ব্যয় কমিয়ে পুনর্গঠিত প্রকল্পটি চলতি মাসের শুরুতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়। যা গত ২০ মে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠায় মন্ত্রণালয়। আগামীতে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভার অনুমোদন সাপেক্ষে একনেক বা জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় উপস্থাপন করা হতে পারে। অর্থাৎ শুধুমাত্র প্রকল্পটি চূড়ান্ত অনুমোদনের আগেই কেটে গেল প্রায় সাড়ে তিন বছর। একইসঙ্গে অনুমোদনের আগেই ব্যয় কমেছে ৬৭০ কোটি ৯০ লাখ ৬৯ হাজার টাকা! প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ২১ আগস্ট নগর ভবনে চট্টগ্রাম বন্দরসহ ২১টি সেবা সেবা সংস্থার সঙ্গে চসিকের তৎকালীন মেয়রের উদ্যোগে সমন্বয় সভা হয়েছিল। এতে সবাই বিমানবন্দর সড়ক সম্প্রসারণে একমত হয়েছিলেন। এরপর প্রকল্প গ্রহণ করে চসিক।
ডিপিপি সূত্রে জানা গেছে, পুনর্গঠিত ‘চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আওতায় এয়ারপোর্ট রোডসহ বিভিন্ন সড়ক উন্নয়ন ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পটির মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। ডিপিতে প্রকল্পের এক হাজার ৯৯৯ কোটি ২৭ লাখ ৩৯ হাজার টাকা সরকারি অর্থায়নে এবং বাকি ৪৯৯ কোটি ৮১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা চসিকের নিজস্ব ফান্ড থেকে ব্যয় প্রস্তাব করা হয়।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, বিমানবন্দর সড়কের বাটারফ্লাই পার্ক থেকে সিমেন্ট ক্রসিং পর্যন্ত (নদী পাশে) মোর্ট দৈর্ঘ্য ৮ দশমিক ৩৯ কিলোমিটার। এর মধ্যে চসিক ৬ দশমিক ৯৯ কিলোমিটার অংশকে চার লেনে উন্নীত করে সড়কের প্রশস্ততা বাড়াবে। বাকি ১ দশমিক ৩৯ কিলোমিটার অংশকে ছয় লেনে উন্নীত করবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে সড়কটির গড় প্রস্ত আছে ১৬ থেকে ২৬ ফুট। চার লেনে উন্নীত হলে তা ৬০ ফুটে উন্নীত হবে। এদিকে আলোচিত প্রকল্পটির আওতায় নেভী ফ্লোটিলা মোড় থেকে ড্রাই ডক ওমেরা পর্যন্ত ৩ দশমিক ১৪ কিলোমিটার অংশে চার লেন করা হবে। বাকি অংশ চসিকের অন্য প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত। চসিকের নির্র্বাহী প্রকৌশলী আশিকুল ইসলাম বিষয়টি দৈনিক আজাদীকে নিশ্চিত করেছেন।
চসিকের প্রধান প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বিমানবন্দর সড়ক সম্প্রসারণ ও শহরের বিভিন্ন রাস্তা উন্নয়নের মাধ্যমে যানজট নিরসন হবে। এতে নগরবাসীর জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি হবে। ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের মাধ্যমে পথচারীর নিরাপদে রাস্তা পারাপারের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি হবে। শহরের সৌন্দর্য বাড়বে।
প্রকল্পের যা আছে : পুনর্গঠিত প্রকল্পের ডিপিপি সূত্রে জানা গেছে, বিমানবন্দর সড়কসহ শহরের ৭৬২ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার রাস্তার উন্নয়নে ব্যয় করা হবে দুই হাজার ১০৪ কোটি ৩৯ লাখ ২৪ হাজার টাকা। এছাড়া ৮৪ কোটি টাকায় বিমানবন্দর সড়কে ৬০০ মিটার ওভারপাস, ৫৮ কোটি টাকায় ৩৮টি ফুটওভার ব্রিজ, ৫৬ কোটি টাকায় ১৪টি ব্রিজ, ১৪ কোটি টাকায় ২২টি কালভার্ট, ১২ কোটি টাকায় ১০টি গোল চত্বর নির্মাণ করা হবে। অবকাঠামোগত ক্ষতিপূরণে ৫৭ কোটি টাকা, একটি জিপ ক্রয়ে ১৪ কোটি টাকা, নির্মাণ যন্ত্রপাতি ক্রয়ে ২৯ কোটি ২০ লাখ টাকা এবং ইউটিলিটি শিপটিংয়ে (বিদ্যুতের খুঁটি, গ্যাস ও পানির পাইপ লাইন স্থানান্তর) ২০০ কোটি টাকা ব্যয় প্রস্তাব করা হয়।
প্রকল্প ব্যয় কমার কারণ : জানা গেছে, প্রকল্পটিতে ৭টি স্লটার হাউজ ও একটি বিনোদন পার্কের উন্নয়নের প্রস্তাব ছিল। যা পুনর্গঠিত প্রকল্প থেকে বাদ দেয়া হয়। এতে কমে গেছে প্রকল্প ব্যয়। অবশ্য পুনর্গঠিত প্রকল্পে সংস্কারের জন্য ৭৩ দশমিক ২৯ কিলোমিটার সড়ক নতুন অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এছাড়া দুইটি গোল চত্বর ও দুইটি ব্রিজ নির্মাণও অন্তর্ভুক্ত করা হয়।