যখনই নির্বাচনের সময় আসে তখন খালের উপর একটি ব্রিজ নির্মাণের আশ্বাস দেয়া হয়। নির্বাচনী বৈতরণী পার হয়ে গেলে কেউ কারো খবর রাখে না। অনেক দেনদরবার করেও প্রতিশ্রুতি শুধু প্রতিশ্রুতিতেই সীমাবদ্ধ থেকে যায়। রোগী নিয়ে কিংবা বাচ্চা প্রসবের মতো জরুরি অবস্থায় আমাদের পড়তে হয় বিপদে। খুব চরম পরিস্থিতিতে অসুস্থ মানুষকে কাঁধে নিয়ে খাল পার হতে হয়। প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছে শত শত শিক্ষার্থী। তারপরও আমাদের শেষ ভরসা ঝুঁকিপূর্ণ এই কাঠের সাঁকো।
আক্ষেপ করে কথাগুলো বলেছিলেন উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর আমিরাবাদ এলাকার বাসিন্দা বৃদ্ধ আলী আহমদ ও নুরুল হক। তারা জানান, আমরা খেটে খাওয়া মানুষ। প্রায় ৬ বছর পূর্বে এলাকাবাসীর উদ্যোগে অনেক কষ্ট করে টাকা-পয়সা ও শ্রম বিসর্জন দিয়ে ঘোনাপাড়া এলাকায় টংকাবতী খালের উপর ব্রিজটি নির্মাণ করেছি। এর আগে নৌকা দিয়ে খাল পারাপার হতো এলাকাবাসী। বর্ষায় পানির স্রোতে সাঁকোটি নড়বড়ে হয়ে যায়। প্রয়োজনের তাগিদে এলাকাবাসীর অর্থায়নে প্রতিবছর বাঁশ, কাঠ ও খুঁটি দিয়ে সাঁকোটি সংস্কার করে কোনো রকম যাতায়াতের ব্যবস্থা করেন। কয়েক বছর আগে সাঁকো পারাপারের সময় খালের পানিতে দুই শিশু পড়ে যাওয়ার মত ঘটনাও ঘটেছে। বিগত দিনে জনপ্রতিনিধিরা ব্রিজ নির্মাণের আশ্বাস দিলেও এই পর্যন্ত এলাকাবাসীর ভাগ্যে দুর্ভোগ ছাড়া আর কিছুই জোটেনি। সাঁকো দিয়ে কোনো রকমে পায়ে হেঁটে পারাপার সম্ভব হলেও যানবাহন চলাচল করা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া উৎপাদিত খাদ্যশস্য, কৃষিপণ্যসহ বিভিন্ন কাঁচামাল বাজারজাতকরণে ব্যাপক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি থাকলেও দুর্ভোগ নিরসনের জন্য ব্রিজ নির্মাণের কোনো উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। অতিদ্রুত ব্রিজটি নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, নড়বড়ে কাঁঠের এই সাঁকো দিয়ে ঘোনা পাড়া, রাহাত আলী চৌধুরী পাড়া, নাজির আলী মুন্সি পাড়া, মহুরি পাড়া, আমির খান চৌধুরী পাড়া, তালুকদার পাড়া, ব্রাহ্মণপাড়া ও জলদাশপাড়ার প্রায় অর্ধলাখ মানুষ যাতায়াত করেন। এছাড়া পার্শ্ববর্তী সাতকানিয়া উপজেলা বারদোনা, গারাঙ্গিয়া এলাকার অনেক লোকজন পদুয়া তেওয়ারীহাট বাজার ও বটতলী মোটর স্টেশনে যেতে এই সাঁকো ব্যবহার করেন। অপরদিকে, বার আউলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, উত্তর আমিরাবাদ এমবি উচ্চ বিদ্যালয়, উত্তর আমিরাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রাজঘাটা হোসাইনিয়া আজিজুয়া উলুম মাদ্রাসা, সুফি ফতে আলী ওয়াইসি মহিলা মাদ্রাসা ও পদুয়া আইনুল উলুম দারুসুন্নাহ মাদ্রাসায় এসব এলাকার শত শত শিক্ষার্থী ঝুঁকিপূর্ণ কাঠের সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করে।
আমিরাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম ইউনুছ জানান, ঘোনাপাড়া এলাকায় টংকাবতী খালের উপর একটি ব্রিজ নির্মাণ খুবই জরুরি। ব্রিজটি নির্মাণ হলে খালের উভয় পাশের বহু মানুষ উপকৃত হবেন। মানুষের সুবিধার্থে ব্রিজটি দ্রুত নির্মাণের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
লোহাগাড়া উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) মোহাম্মদ ইফরাদ বিন মুনির জানান, মানুষের যাতায়াতের সুবিধা ও প্রয়োজনীয়তার কথা বিবেচনা করে ওই এলাকায় ৬০ মিটার একটি ব্রিজ নির্মাণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। ব্রিজটি নির্মাণ হলে এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ লাঘব হবে।