এক তৃতীয়াংশ ব্যাংকে ৭৩% আমানত

| শনিবার , ২ জানুয়ারি, ২০২১ at ৬:২০ পূর্বাহ্ণ

দেশের এক তৃতীয়াংশ ব্যাংকে জমা রয়েছে ব্যাংকিং খাতের মোট আমানতের চার ভাগের তিন ভাগ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৫৮টি ব্যাংকের মধ্যে ২২টি ব্যাংকের কাছে রয়েছে ৭২ দশমিক ৮৪ শতাংশ বা ৯ লাখ ৭২ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতে মোট আমানতের পরিমাণ ১৩ লাখ ৪৫ হাজার ৪৩৬ কোটি টাকা। এ বিষয়ে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আনিস এ খান বলেন, রাষ্ট্রীয় ব্যাংক, শরীয়াহ ভিত্তিক ব্যাংক ও ভালো অবস্থায় থাকা ব্যাংকগুলোর কাছে এই আমানত রয়েছে। তিনি বলেন, সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো দীর্ঘকাল ধরে কাজ করে যাওয়ায় তারা বেশি পরিমাণে আমানত পাচ্ছে, এমনকি কেলেঙ্কারি ও অনিয়ম হওয়ার পরও সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো আমানত সংগ্রহের ক্ষেত্রে ভালো করছে। কারণ সরকারের মালিকানা থাকার কারণে এখনও এই ব্যাংকগুলোতে মানুষের আস্থা রয়েছে। অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান আনিস এ খান আরও বলেন, ইসলামী শরীয়া ভিত্তিক ব্যাংকগুলোও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে আমানত সংগ্রহ করছে। খবর বিডিনিউজের।
এই প্রবণতা ব্যাংকগুলোকে ইসলামী ব্যাংকিংয়ে উত্‌সাহী করেছে, ফলে বেশ কয়েকটি প্রচলিত ব্যাংক ইতোমধ্যে অধিক পরিমাণে আমানত সংগ্রহের জন্য শরিয়া ভিত্তিক ব্যাংকে রূপান্তর করেছে, যোগ করেন আনিস এ খান। ভালো অবস্থানে থাকা ব্যাংকগুলোও আমানত পাচ্ছে, যোগ করে আনিস এ খান বলেন, ব্যাংকগুলো তাদের গ্রাহকদের প্রতিযোগিতামূলক পণ্য ও মানসম্পন্ন পরিষেবা দিয়ে জনসাধারণের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। অধিক পরিমাণে আমানত থাকা ব্যাংকগুলোর মধ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন দেশের প্রাচীনতম সোনালী ব্যাংকে রয়েছে মোট আমানতের ৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ বা ১ লাখ ১৫ হাজার ১৫৮ কোটি টাকা। সোনালী ব্যাংকের পাশাপাশি ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের কাছে রয়েছে ১ লাখ কোটি টাকারও বেশি আমানত। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতের মোট আমানতের ৮ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ বা ১ লাখ ৭ হাজার ৮০২ কোটি টাকা রয়েছে ইসলামী ব্যাংকে। সোনালী ব্যাংক ও ইসলামী ব্যাংক ছাড়াও আরও ২০টি ব্যাংকেরও ব্যাংকিং ব্যবস্থার আমানতের ২ শতাংশ থেকে ৬ শতাংশ পর্যন্ত তহবিল ছিল।
২২টি ব্যাংকের মধ্যে ইসলামী ব্যাংকসহ পাঁচটি ইসলামিক শরীয়া ভিত্তিক ব্যাংক এবং সোনালী ব্যাংকসহ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন আরও পাঁচটি ব্যাংক রয়েছে।
সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অগ্রণী ব্যাংকে আমানতের পরিমাণ ৭৭ হাজার ৪৭৮ কোটি টাকা, জনতা ব্যাংকে ৭১ হাজার ১০ কোটি টাকা, রূপালী ব্যাংকে আমানত রয়েছে ৪৯ হাজার কোটি টাকা, পূবালী ব্যাংকে রয়েছে ৪১ হাজার ১৫২ কোটি টাকা, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে রয়েছে ৪০ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা, ন্যাশনাল ব্যাংকে রয়েছে ৩৯ হাজার ১৯৫ কোটি টাকা, ইউনাইটেড কর্মাশিয়াল ব্যাংকে আমানতের পরিমাণ ৩৭ হাজার ৭শ ৭ কোটি টাকা, ডাচ বাংলা ব্যাংকে রয়েছে ৩৫ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা, এঙ্মি ব্যাংকে ৩৪ হাজার ১৬৮ কোটি টাকা, সাউথইস্ট ব্যাংকে ৩২ হাজার ৮৮৪ কোটি টাকা, আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকে রয়েছে ৩২ হাজার ৬৬৮ কোটি টাকা, স্টান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে রয়েছে ৩১ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা, স্যোশাল ইসলামী ব্যাংকে ২৯ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা, ব্যাংক এশিয়ায় আমানতের পরিমাণ ২৯ হাজার ৩৮৫ কোটি টাকা, ব্র্যাক ব্যাংকে রয়েছে ২৮ হাজার ৭২৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকা, সিটি ব্যাংকে রয়েছে ২৮ হাজার ৪৭৬ কোটি টাকা, আইএফআইসি ব্যাংকে রয়েছে ২৮ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে রয়েছে ২৭ হাজার ৮৮২ কোটি টাকা, ট্রাস্ট ব্যাংকে রয়েছে ২৭ হাজার ৭৩৭ কোটি টাকা এবং এবি ব্যাংকে রয়েছে ২৬ হাজার ৯৩০ কোটি টাকা।
আনিস এ খান আরও বলেন, যেসব ব্যাংকে আর্থিক অনিয়ম, পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের মধ্যে কোন্দল, কম লাভ এবং স্বল্প পণ্য ও স্বল্প পরিসরে সেবার মতো সমস্যা রয়েছে সেসব ব্যাংক সন্তোষজনক পরিমাণে আমানত অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছে। ভালো পণ্য এবং ব্যাংকের অফার গ্রাহকদের আকর্ষণ করে এবং পরবর্তীকালে গ্রাহক এমন ব্যাংকে আমানত রাখে। তৃতীয় এবং চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংকগুলো আমানত সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাজারে প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হচ্ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঢাবির সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মোতাহার হোসেন রানার ইন্তেকাল
পরবর্তী নিবন্ধরাষ্ট্রায়ত্ত ৬ চিনিকল বন্ধের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি