এক ঠিকাদারকে একাধিক কাজ নয়

চসিকের সাধারণ সভায় সিদ্ধান্ত ।। এস্টেট শাখার অনিয়ম ও ওয়াসার সড়ক কাটা নিয়ে সমালোচনা মেয়র বললেন, নিজস্ব ফান্ডে স্থায়ী কার্যালয় নির্মাণ করব

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ১ মার্চ, ২০২৩ at ৫:৪৯ পূর্বাহ্ণ

উন্নয়ন কাজের দরপত্রের একটি টেন্ডার নোটিশে এক ঠিকাদারকে একাধিক কাজ না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। চসিকের বর্তমান পর্ষদের ২৫তম সাধারণ সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর আগে গত ২৯ জানুয়ারি এক নোটিশের ৩৭ প্যাকেজের দরপত্রে একটি প্রতিষ্ঠানকে ২২ প্যাকেজের কাজ দেয়ার অভিযোগ এনে প্রকল্প পরিচালককে মারধর করেছিলেন ঠিকাদাররা।

গতকাল সকালে আন্দরকিল্লা নগর ভবনের কেবি আবদুচ সাত্তার মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সাধারণ সভায় সভাপতিত্ব করেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি বলেন, প্রকল্প কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার স্বার্থে একজন ঠিকাদারকে এক টেন্ডার নোটিশে একাধিক কাজ দেয়া হবে না। যেসব ঠিকাদার ঠিকমতো কাজ করতে পারবে না তাদের কালো তালিকাভুক্ত করব। আমি কঠোর না হলে পিসি রোড হতো না। ঝুঁকি নিয়ে কঠোর হয়ে পিসি রোডের কাজ শেষ করেছি। অনৈতিক কার্যক্রমে জড়িত ঠিকাদারদের ছাড় দিব না। কর্মকর্তাদেরও সতর্ক করছি, কারো গাফিলতির জন্য জনদুর্ভোগ হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিব।

এস্টেট শাখা (ভূসম্পত্তি বিভাগ) নিয়ে ক্ষোভ : সভায় চসিকের ভূসম্পত্তি বিভাগের ‘অনিয়ম’এর সমালোচনা করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন একাধিক কাউন্সিলর। তাদের দাবি সেখানে ‘অনিয়ম’রএর ভূত আছে। কাউন্সিলরদের অভিযোগ, বিভিন্ন ওয়ার্ডে কর্পোরেশনের সম্পত্তি আছে। কিন্তু স্থানীয় কাউন্সিলর সে তথ্য জানেন না। ভূসম্পত্তি বিভাগ থেকে জানায় না।

এক কাউন্সিলর বলেন, শুলকবহর ওয়ার্ডের সামনে ক্রোকারিজের দোকান আছে। সেখান থেকে কর্পোরেশন কত টাকা ভাড়া পায় তা স্থানীয় কাউন্সিলর জানেন না। সুগন্ধায় চসিকের খালি জায়গা পড়ে আছে। যেখানে বহুতল ভবন করে আয় করা যাবে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে সেখানে আয়বর্ধক কোনো প্রকল্পের উদ্যোগ নিচ্ছে না ভূসম্পত্তি বিভাগ। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে কোথায় কোথায় চসিকের সম্পদ এবং জায়গা আছে বারবার তার তালিকা সরবরাহ করতে বললেও দিতে পারেননি ভূসম্পত্তি বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা।

জানা গেছে, গত বছরের মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত চসিকের ১৪তম সাধারণ সভায় ভূসম্পত্তি বিভাগের কর্মকাণ্ডে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন খোদ মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। চসিকের বেহাত হওয়া সম্পত্তির ব্যাপারে বারবার তাগাদা দেয়ার পরও কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় এ অসন্তুষ্টির কারণ ছিল। তাই ওই সভায় জরুরি ভিত্তিতে একজন ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা নিয়োগসহ পুরো শাখাকে ঢেলে সাজানোর নির্দেশনাও দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে সে নির্দেশনার বাস্তবায়ন হয়নি।

ওয়াসার উপর ক্ষোভ : পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোবারক আলী ওয়াসার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে সভায় বলেন, একবার কাটার অনুমতি নিয়ে বারবার সড়ক কাটছে ওয়াসা। কাটা সড়ক সিটি কর্পোরেশন মেরামত করার কিছুদিন পর আবার প্রেসার টেস্টের নামে কেটে ফেলে ওয়াসা। এতে মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে।

তখন মেয়র বলেন, ওয়াসা চলমান স্যুয়ারেজ প্রকল্পের জন্য রাস্তা কাটবে। শুধু ওয়াসা নয়, যে কোনো সংস্থা রাস্তা কাটার আগে অবশ্যই চসিক থেকে লিখিত অনুমতি নিতে হবে এবং যথাযথ প্রাক্কলনের মাধ্যমে চসিকের পাওনা বুঝিয়ে দিতে হবে। সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলরদের সাথে সমন্বয় করে রাস্তা কাটতে হবে। আমরা রাস্তা বানাব আর কোনো সংস্থা রাতের অন্ধকারে নতুন রাস্তা কেটে ফেলবেএমন কোনো অভিযোগ পেলে কঠোর পদক্ষেপ নিব। এ সময় মেয়র চসিকের সঙ্গে চট্টগ্রামের অন্যান্য সেবা সংস্থাগুলোর মধ্যে কার্যক্রমের সমন্বয় না হলে চলমান উন্নয়ন কার্যক্রমের সুফল হুমকির মুখে পড়বে।

জলাবদ্ধতা প্রসঙ্গ : সভায় একাধিক কাউন্সিলর জলাবদ্ধতা নিরসনে সিডিএর চলমান মেগা প্রকল্পের বাঁধ নির্মাণ করায় বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টির বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং এ বিষয়ে সিডিএকে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান। গৃহকর নিয়ে একটি কুচক্রিমহল গুজব ছড়াচ্ছে বলেও তারা অভিযোগ করেন।

এ সময় মেয়র বলেন, সিডিএ জলাবদ্ধতা হ্রাসে যে প্রকল্প পরিচালনা করছে, সেখানে রিটেইনিং ওয়ালের কারণে নালাখাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় চট্টগ্রামের অনেকগুলো এলাকার মানুষ খুব কষ্ট পাচ্ছে। আমি সিডিএ চেয়ারম্যানসহ সিডিএর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বারবার বলেছি যাতে এ প্রকল্পের জন্য বর্ষায় মানুষ কষ্ট না পায়। তবে, সিডিএ থেকে এখনো কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখছি না। গৃহকর নিয়ে কারো আপত্তি থাকলে আপিলের মাধ্যমে কর নেয়া হচ্ছে। জনগণ গৃহকর দিয়ে হাসিমুখে ঘরে ফিরছে। মেয়র মেগা প্রকল্পের বাইরে থাকা চসিকের আওতাভুক্ত খালনালাগুলো থেকে মাটি উত্তোলনে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন।

অন্যান্য : সভায় মেয়র বলেন, আমি মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রধানমন্ত্রী চসিকের ইতিহাসে সর্বোচ্চ আড়াই হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বরাদ্দ দিয়েছেন। এই প্রকল্পসহ চলমান প্রকল্পগুলো শেষ হলে চট্টগ্রামের বৈপ্লবিক পরিবর্তন হবে। তবে, সেবা সংস্থাগুলো চসিকের সাথে সমন্বয় না করলে চলমান উন্নয়ন কার্যক্রমের সুফল হুমকির মুখে পড়বে।

তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) স্থায়ী কার্যালয় না থাকায় নাগরিক সেবা প্রদানে সমস্যা হচ্ছে। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি চসিকের নিজস্ব ফান্ডে স্থায়ী কার্যালয় নির্মাণ করব।

মেয়র বলেন, নগরীকে পরিচ্ছন্ন করার জন্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। রাজস্ব আয়ের অর্থ যথাযথভাবে কাজে লাগাতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য কমপ্লেঙ, সড়ক ও ওয়ার্ড কার্যালয়গুলো সংস্কার করা হবে। বিশ্বব্যাংক থেকে ২৭৫ কোটি টাকার কোভিড রেসপন্সের অর্থকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হবে।

তিনি বলেন, কেবল বস্তুগত উন্নয়ন নয়, সার্বিক উন্নয়নের জন্য সাংস্কৃতিক কার্যক্রমেরও বৃদ্ধি প্রয়োজন। এবার চসিক অন্য বছরগুলোর তুলনায় আরো বড় পরিসরে বইমেলার আয়োজন করেছে। চট্টগ্রামের বিভিন্ন মোড়ে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ম্যুরাল নির্মাণের পাশাপাশি চট্টগ্রামের কৃতী সন্তানদের নামে সড়ক ও স্থাপনাসমূহের নামকরণ করব। মানুষের অবসর সময়কে আনন্দময় করতে প্রতিটি ওয়ার্ডে শিশুপার্ক ও বিনোদনকেন্দ্র নির্মাণের মাধ্যমে নান্দনিক নগর গড়ব।

সভায় চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, প্যানেল মেয়র, কাউন্সিলরবৃন্দ, সচিব খালেদ মাহমুদসহ চসিকের বিভাগীয় ও শাখা প্রধানগণ এবং নগরীর বিভিন্ন সরকারি সংস্থার প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসিনহার যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও বাড়ি জব্দের নির্দেশ
পরবর্তী নিবন্ধঘোষণার ৪ ঘণ্টা পর প্রাথমিক বৃত্তির ফল স্থগিত