বাজারে এক লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১৭০ টাকা। কিন্তু তা পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৩ টাকায়। এছাড়া ২৫০ টাকার মাছ পাওয়া যাচ্ছে ৪ টাকায়। সাথে ১ টাকায় এক ডজন ডিম, ১ কেজি চাল ১ টাকায়। এছাড়া একটি শাড়ি ৫ টাকা, পাঞ্জাবি ৩ টাকা, ছোটদের পোশাক মাত্র ২ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। শুনে অবাক লাগলেও এটাই সত্য। এসব মিলছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ ও বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে নগরে শুরু হওয়া ‘এক টাকায় ঈদবাজার’–এ। সদরঘাট রোডের আরএসএল টার্ফ প্রতি বছরের ন্যায় চলতি বছরও আয়োজন করেছে দুস্থদের নিয়ে এই ঈদ বাজার। গতকাল শুক্রবার বেলা ১১টায় সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এর উদ্বোধন করেন। বিদ্যানন্দের বোর্ড মেম্বার মো: জামাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন সিএমপির ডিসি (হেড কোয়ার্টারস) আব্দুল ওয়ারিস (অতি:ডিআইজি), ডিসি(দক্ষিণ) মো: মুস্তাফিজুর রহমান (অতি:ডিআইজি)।
সিএমপি কমিশনার বলেন, ঈদ উপলক্ষে দুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়ানো বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের এটি একটি প্রশংসনীয় মানবিক কাজ। বিভিন্ন দুর্যোগে তারা মানুষের পাশে দাঁড়ান। চট্টগ্রাম নগরীর সুবিধাবঞ্চিত ও দরিদ্র মানুষের জন্য এ আয়োজন সত্যিই প্রশংসনীয়। তাঁদের এই কার্যক্রম সারাদেশব্যাপী সফলভাবে সম্পন্ন হোক এই কামনা করি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এক টাকার ঈদ বাজারে দুস্থ মানুষের জন্য মাত্র এক টাকায় ১৫০০–২০০০ টাকার শপিং করার সুযোগ আছে। এক টাকার বিনিময়ে গ্রাহককে ২০ টি টোকেন দেয়া হয় যার প্রতিটি টোকেনের মূল্য ধরা হয়েছে ১ টাকা।
১৩ টি টোকেনের প্রতীকী টাকায় চাল, ডাল, তেল, চিনি, আটা, মাছ মাংস সহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে পেরেছে। ৭ টি টোকেনের প্রতীকী টাকায় নতুন শাড়ি, লুঙ্গি, পাঞ্জাবী, বাচ্চাদের পোশাক কেনা যাচ্ছে। এক টাকার এই বাজারে নগরীর বিভিন্ন এলাকার প্রায় ২০০০ দুস্থ মানুষ অংশ নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। ১ টাকা দিয়ে পাওয়া ২০ টি টোকেনের প্রতীকী মূল্যে চাল, ডাল, তেল, লবণ, আটা, নারকেল, চিনি, গুড়, মাছ, মুরগী, সবজি, শাড়ি, লুঙ্গি, পাঞ্জাবী কিংবা বাচ্চাদের জামাকাপড় কেনার সুযোগ দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে প্রতিটি পরিবার সাধারণ বাজার মূল্যে প্রায় দেড় হাজার টাকা থেকে দুই হাজার টাকা সমমূল্যের পণ্য পায়।
বিদ্যানন্দের পক্ষ থেকে জানানো হয়, দুস্থদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে নগরের বিভিন্ন বস্তি এলাকায় সার্ভে করে সুবিধাবঞ্চিত পরিবারগুলোকে টোকেন প্রদান করা হয়েছে।
ফিরিঙ্গিবাজার থেকে আসা তৃতীয় লিংগের শিউলি বেগম বলেন, ১ টাকার বাজারে এসে খুব ভালো লাগছে। এত কম দামে জিনিস পাওয়ার কথা চিন্তা করতে পারি নাই। এই বাজারের ব্যবস্থা করায় সত্যি খুব খুশি হয়েছি। কেনাকাটা করে মন ভরে খেতে পারবো। এবারের ঈদ খুব ভাল কাটবে।
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবক মো: মুবারক বলেন, ‘চট্টগ্রাম শহরের তিন শতাধিক প্রান্তিক পরিবার মাত্র ১ টাকায় যে পণ্যগুলো কিনেছে তার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা। সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পণ্য বাছাই করে নিজের ক্রয় করার স্বাধীনতা তৈরি করতে এ ধরনের আয়োজন করা হয়েছে। আর তারা যেন কোনোভাবেই মনে না করেন যে এটি কোনও দান, এজন্য নামমাত্র মূল্য নেওয়া হয়েছে।