চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল এলাকার প্রিন্সিপাল বাংলোর পার্শ্ববর্তী পাহাড় চূড়ায় চট্টগ্রাম ওয়াসার ভূগর্ভস্থ একটি পানির রিজার্ভার (ট্যাংক) ও পাম্প রয়েছে। এক লাখ গ্যালন ধারণ ক্ষমতার এই রিজার্ভার ওয়াসার প্রতিষ্ঠালগ্নে (১৯৬৩ সালে) স্থাপন করা হয় বলে দাবি ওয়াসা কর্তৃপক্ষের। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, সৃষ্টিলগ্ন হতে এই পাম্প ও রিজার্ভারের মাধ্যমে চট্টগ্রাম মেডিকেলসহ তৎসংলগ্ন এলাকায় সুপেয় পানি সরবরাহ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, পাহাড়টির নিচে এক পাশে চমেকের খেলার মাঠ, আরেক পাশে ছাত্রী হোস্টেল এবং অপর এক পাশে চট্টেশ্বরী সড়কের প্রধান ছাত্রাবাস। হাসপাতাল স্টাফ কোয়ার্টারের পাশ দিয়ে ওই পাহাড় চূড়ায় উঠার পথে বাঁ পাশ ঘেঁষে প্রিন্সিপাল বাংলো। মোট কথা পাহাড়টির চারপাশ জুড়ে মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বিস্তৃত জায়গা এবং এর বিভিন্ন স্থাপনা। মাঝখানের পাহাড় চূড়ায় ওয়াসার এই রিজার্ভার ও পাম্প হাউজ। পাম্প ও রিজার্ভারের দেখাশোনায় পাশেই ইটের আধাপাকা একটি ঘর তোলা হয়েছে। সেখানে পরিবারসহ ওয়াসার কর্মচারী থাকেন। পাহাড়টির নিচেই প্রধান ছাত্রাবাস সংলগ্ন গোয়াছি বাগান এলাকায় চীনের অর্থায়নে দেড়শ শয্যার একটি বিশেষায়িত বার্ন ইউনিট স্থাপনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। এ নিয়ে চীন ও বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যে আনুষ্ঠানিক চুক্তি স্বাক্ষরও সম্পন্ন হয়েছে। এখন কেবলই কাজ শুরুর অপেক্ষা। বার্ন ইউনিটের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট আরো একটি স্থাপনা নির্মাণে উপযুক্ত জমি প্রয়োজন। নির্মিতব্য বার্ন ইউনিটের নির্ধারিত জায়গাটি সন্নিকটে হওয়ায় চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওয়াসার রিজার্ভারের পার্শ্ববর্তী জায়গা নির্বাচন করেছে। এ জন্য ওয়াসাকে রিজার্ভারের পাশে বিদ্যমান আধাপাকা ঘরটি অপসারণ করতে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে জায়গাটি নিজেদের মালিকানাধীন দাবি করে ওয়াসা বলছে, এখানকার (রিজার্ভার ও পার্শ্ববর্তী) ০.৯২ একর (প্রায় এক একর) জায়গা চট্টগ্রাম ওয়াসা অর্ডিনেন্স–১৯৬৩ মূলে প্রাপ্ত। ওয়াসার প্রতিষ্ঠালগ্নে এই রিজার্ভার ও পাম্প স্থাপন করা হয়। যার মাধ্যমে মেডিকেল ও তৎসংলগ্ন এলাকায় সুপেয় পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। উক্ত জায়গা ও স্থাপনা ওয়াসার মালিকানাধীন হওয়ায় সেখানে অন্য কোনো সংস্থা কর্তৃক কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করার সুযোগ নেই বলেও জানায় সরকারি সংস্থাটি।
অন্যদিকে অধিগ্রহণমূলে এই জায়গা নিজেদের দাবি করে চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এলাকায় ওয়াসার পাম্প হাউজ ও রিজার্ভার রয়েছে। উক্ত জমির আরএস দাগ (নং– ১৪২১–২৩, ১৭১৩) ও বিএস দাগ (নং– ১০৫০–৫১, ১৭২০–১৭২৪) অনুযায়ী এটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অন্তর্গত। উক্ত জমি এলএ কেইস নং– ২৯/৫২–৫৩ অধিগ্রহণকৃত। যা ১৯৫২ সালের ৩ জুলাই সরকারি গেজেটের মাধ্যমে মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের নামে বরাদ্দকৃত।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, হাসপাতাল ভবন সংলগ্ন বিধায় জায়গাটি রোগী কল্যাণ ও নির্মিতব্য বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি হাসপাতালের জন্য অতীব প্রয়োজনীয়। তাছাড়া এর কিছু অংশ ছাত্রী হোস্টেল সংলগ্ন হওয়ায় সেখানে বস্তিঘর তুলে থাকাটা আপত্তিকর। এ নিয়ে ছাত্রীদের পক্ষ থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষের নিকট বারংবার আপত্তি জানানো হয়েছে। এছাড়াও হাসপাতালের আরএস কোয়ার্টারের পাশে (হাসপাতালের আবাসিক এলাকায়) ওয়াসার স্টাফ কর্তৃক অবৈধভাবে বস্তিঘর তুলে বসবাস করছে। সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে এসব স্থাপনা সরাতে ওয়াসাকে চিঠি দেয়ার কথা জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ গতকাল আজাদীকে বলেন, জায়গাটি ওয়াসার। আমরা এ সংক্রান্ত কাগজপত্র উনাদের (হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের) কাছে পাঠিয়েছি। এই জায়গায় বিশ্ব ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় নতুন একটি পাম্প স্টেশন ও রিজার্ভার নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ আরম্ভ হবে।
এখন উনারা যদি সেখানে কিছু করতে চান, তাহলে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হয়ে আসতে হবে। যেহেতু সরকারি জায়গা, উনারাও (হাসপাতাল) সরকারি প্রতিষ্ঠান, তাই মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত বা অনুমতি দিলে আমাদের পক্ষ থেকে কোনো সমস্যা নেই। বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে তাদের (হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে) অবহিত করা হয়েছে।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দ্বারস্থ হচ্ছেন জানিয়ে চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান আজাদীকে বলেন, জায়গাটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের। সরকারি গেজেটের মাধ্যমে ১৯৫২ সালে বরাদ্দকৃত। এ সংক্রান্ত যাবতীয় দলিলপত্র আমাদের রয়েছে। তাছাড়া এলাকাটি হাসপাতাল এলাকা হিসেবে পরিচিত। উত্তর–দক্ষিণ, পূর্ব–পশ্চিম, চারপাশেই মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জায়গা। মধ্যখানে এক টুকরা কি করে ওয়াসার নামে হয়, বিষয়টি আমাদের বোধগম্য নয়। আমরা এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি লিখছি।