বন্দর থানাধীন নিমতলা এলাকায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে থেকে বেপরোয়া গতির একটি টয়োটা হ্যারিয়ার গাড়ি ছিটকে নিচে সড়কে পড়ে শফিকুর রহমান (৫৫) নামে চট্টগ্রাম বন্দরের এক কর্মচারী নিহত হয়েছেন। এতে আহত হয়েছেন গাড়িতে থাকা চালকসহ পাঁচজন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৪টায় ৩নং ফকিরহাট নিমতলা মোড়ের কাছে শহীদ ওয়াসিম আকরাম এক্সপ্রেসওয়ে থেকে সড়কে পড়ে যায় ব্যক্তিগত এ গাড়িটি।
নিহত শফিকুর রহমান ৩৬নং পূর্ব গোসাইলডাঙ্গা ছালে আহমদ কন্ট্রাক্টরের বাড়ির মো. ইমরান শরিফের পুত্র। তিনি চট্টগ্রাম বন্দরের স্টাফ এবং বন্দর থানা কৃষক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
বন্দর থানার সেকেন্ড অফিসার আবু সাঈদ রানা আজাদীকে জানান, গাড়িতে এক তরুণীসহ ৪ যুবক ছিলেন। তারা পতেঙ্গা বিচ থেকে আসছিলেন। চার যুবকের মধ্যে একজন গাড়িটি বেপরোয়া গতিতে চালাচ্ছিলেন। এক্সপ্রেসওয়ের রেলিংয়ের ওপর দিয়ে তীব্র গতিসম্পন্ন গাড়িটি নিচে পড়ে যায়। এখনো পর্যন্ত (গতকাল রাত ১২টা) এই ব্যাপারে কোনো মামলা হয়নি। তারা বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে আছে। গাড়িতে থাকা পাঁচ তরুণ–তরুণী হলেন, সৈয়দা সমরাজ মাখনু (২৩)। তিনি চান্দগাঁও থানার মধ্যম মোহরা গ্রামের সমদ আলী খান চৌধুরী বাড়ির সৈয়দ মঞ্জুর মোর্শেদের মেয়ে। অপর চার তরুণ হলেন, চান্দগাঁও আবাসিক, বি– ব্লক ১নং রোডের সিদ্দিক আহম্মেদের পুত্র মো. ইউসা (২৩), বায়েজিদ শেরশাহ বাংলা বাজার এলাকার মাহাবুব আলমের পুত্র তাহসিন মোহাম্মদ তানিম (১৮), সদরঘাট এলাকার পোড়া মসজিদের পাশে বিসমিল্লাহ ট্রান্সপোর্টের মালিক আরিফুর রহমানের পুত্র মো. মোস্তাফিজুর রহমান রায়াত (১৯) এবং মো. সাকিব (২৫)।

এই ব্যাপারে বন্দর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সিরাজুল ইসলাম বলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে থেকে একটি প্রাইভেট কার ছিটকে নিচে সড়কে পড়ে যায়। এতে শফিকুর রহমান (৫৫) নামে একজন নিহত ও চারজন আহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তি চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মচারী। তিনি সাইকেল আরোহী ছিলেন। বন্দর থেকে কাজ শেষে বাসায় ফিরছিলেন।

তিনি জানান, গাড়িটি পতেঙ্গার দিক থেকে আসছিল। নিমতলা মোড় ও বন্দর থানার মাঝামাঝি স্থানে গাড়িটি এক্সপ্রেসওয়ে থেকে নিচে বারিক বিল্ডিংমুখী সড়কে ছিটকে পড়ে। এ ঘটনায় প্রাইভেট কারে থাকা গুরুতর আহত এক তরুণীসহ চারজনকে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে এবং পথচারী শফিককে (৫৫) মা ও শিশু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে শফিক হাসপাতালে মারা যান। গাড়িটি উপর থেকে তার ওপর পড়েছে।
পুলিশ জানায়, থানার সামনে হঠাৎ একটি বিকট শব্দ শুনে পুলিশ সদস্যরা থানা থেকে বের হয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন, একটি গাড়ি উল্টে পড়ে আছে। গাড়ি থেকে পাঁচজন ব্যক্তি নেমে আসেন, এদের দুইজন গুরুতর আহত এবং দুইজন সামান্য আহত হয়েছিলেন।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গাড়িটি নিচে পড়ার পর বিকট শব্দ হয়। কাছে আসার পর দেখা যায় গাড়িটি একদিকে উল্টে পড়ে আছে এবং চাকা ঘুরছে।
স্থানীয়রা আরও জানান, গাড়ি থেকে প্রথমে ১৮–১৯ বছর বয়সী এক তরুণী বের হয়ে আসেন। তারপর স্থানীয়রা মিলে গাড়ি থেকে আরও ৪ জনকে বের করে আনেন। নিচের সড়কের পাশে মাটির স্তুপ ছিল এবং গাড়িটিতে এয়ার ব্যাগ থাকায় হতাহাতের সংখ্যা কম হয়েছে বলে মনে করছেন পুলিশসহ প্রত্যক্ষদর্শীরা।
এদিকে দুর্ঘটনার পর গুরুত্বপূর্ণ বন্দর–আগ্রাবাদ–নিমতলা সড়কটিতে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশ বিধ্বস্ত গাড়িটি উদ্ধার করে বন্দর থানায় নিয়ে রাখে। কিছু সময় পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

এক্সপ্রেসওয়ের সর্বোচ্চ গতিসীমা :
সিডিএ সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম নগরের লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত সাড়ে ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই এক্সপ্রেসওয়ের সর্বোচ্চ গতিসীমা নির্ধারণ করা হয় ৬০ কিলোমিটার। তবে আঁকাবাঁকা অংশে সর্বোচ্চ গতিসীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে ৪০ কিলোমিটার। কিন্তু গতকাল টয়োটা হ্যারিয়ার নামে গাড়িটি ১০০ ফুট ওপর থেকে ৮০ কিলোমিটারের বেশি স্পিডে নিচে আছড়ে পড়ে।
পুলিশ জানায়, গাড়িটি যে স্থান থেকে ছিটকে পড়েছে, সেখানে বাঁক রয়েছে। এক্সপ্রেসওয়ের রেলিংয়ের ওপর দিয়ে তীব্র গতিসম্পন্ন গাড়িটি নিচে পড়ে যায়। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, গাড়িটি বেপরোয়া গতিতে চলছিল।
এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ি থামানো বা দাঁড় করিয়ে রাখা এবং গাড়ি থেকে নামা নিষিদ্ধ। পরীক্ষামূলক যান চলাচলের সময় সাময়িকভাবে ট্রাক, বাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। তবে বর্তমানে চলছে মোটরসাইকেলও।
চট্টগ্রাম নগরের লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত সাড়ে ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এক্সপ্রেসওয়ের দেওয়ানহাট, বারিক বিল্ডিং, সল্টগোলা, ইপিজেড, কাঠগড় এলাকায় অনেকগুলো বাঁক রয়েছে। বাঁকগুলোতেও গাড়ির গতি কমানোর প্রবণতা কম চালকদের। বিশেষ করে উঠতি বয়সী তরুণরা এক্সপ্রেসওয়েতে প্রাইভেট কার এবং মোটরসাইকেল নিয়ে উঠে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালাতে থাকেন।
এক্সপ্রেসওয়ের অনেক জায়গায় তরুণদের ঝুঁকিপূর্ণভাবে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতেও দেখা যায়। এসবের কারণে সেখানে প্রায়ই ছোট–বড় দুর্ঘটনা ঘটছে।












